সুনীল ছেত্রীর জোড়া গোলে ভারতের কাছে বাংলাদেশের হার
বাংলাদেশকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়ে সুনীল ছেত্রীর জ্বলে ওঠার অনেক নজির দেখা গেছে অতীতে। এই অভিজ্ঞ ফরোয়ার্ড আরও একবার ভাঙলেন লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের হৃদয়। তার শেষদিকের জোড়া লক্ষ্যভেদে বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের যৌথ বাছাইয়ে ভারতের কাছে হারল জেমি ডের দল।
সোমবার কাতারের জসিম বিন হামাদ স্টেডিয়ামে ‘ই’ গ্রুপের ম্যাচে ২-০ গোলে হেরেছে বাংলাদেশ। ম্যাচের ৭৯তম মিনিটে ভারতকে এগিয়ে নেওয়ার পর যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে ব্যবধান বাড়ান অধিনায়ক ছেত্রী।
বরাবরের মতো পাল্টা-আক্রমণ নির্ভর কৌশল বেছে নেওয়া বাংলাদেশ গোল না হজমের স্বস্তি নিয়ে বিরতিতে গিয়েছিল। কিন্তু বিরতির পর শেষরক্ষা হয়নি। দুই দলের দক্ষতা ও শক্তির পার্থক্য এই ম্যাচে দেখা দেয় স্পষ্ট হয়ে।
ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ৭৯ ধাপ এগিয়ে থাকা ভারত শুরু থেকেই ছিল দারুণ ছন্দে। তাদের আক্রমণ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় লাল-সবুজদের রক্ষণকে।
গোটা ম্যাচে চালকের আসনে থাকা ভারতের পায়ে ৭৪ শতাংশ সময়ে বল ছিল। তাদের নেওয়া ১৬টি শটের মধ্যে লক্ষ্যে ছিল পাঁচটি। অন্যদিকে, বাংলাদেশ নিতে পারে মাত্র চারটি শট। যার মধ্যে লক্ষ্যে ছিল দুইটি।
শুরুর একাদশে একটি পরিবর্তন নিয়ে খেলতে নামে বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে হাতে চোট পাওয়া সোহেল রানার পরিবর্তে মিডফিল্ডে নামানো হয় মানিক মোল্লাকে। আগের ম্যাচে বদলি হিসেবে খেলেছিলেন তিনি।
ম্যাচের প্রথম সুযোগটা পায় বাংলাদেশই। নবম মিনিটে রহমত মিয়ার থ্রোতে থেকে রাকিব হোসেনের হেডে বল পেয়ে যান তারিক কাজী। কিন্তু ফিনল্যান্ড প্রবাসী এই ডিফেন্ডার তৈরি ছিলেন না। ফলে ছয় গজের বক্সের সামনে থেকে তিনি বলে পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন।
আক্রমণের ধারা জারি রেখে ১৫তম মিনিটে ভারত পেয়েছিল ভালো একটি সুযোগ। ব্রেন্ডন ফার্নান্দেসের পাসে এলোমেলো হয়ে যায় বাংলাদেশের রক্ষণভাগ। বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন স্ট্রাইকার মানভির সিং। কিন্তু গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে গোলপোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে এসে জায়গা ছোট করে ফেলায় লক্ষ্যে শট নিতে পারেননি তিনি। বামদিকে সরে যেতে বাধ্য হওয়া মানভির পরে যে ক্রস ফেলেন, তা বিপদমুক্ত করেন তপু বর্মণ।
৩৪তম মিনিটে গোল প্রায় পেয়েই গিয়েছিল ভারত। ফার্নান্দেসের কর্নার থেকে ডি-বক্সের ভেতরে ফাঁকায় থাকা চিঙ্গলেনসানা সিং করেছিলেন হেড। গোললাইন থেকে রিয়াদুল হাসান রাফি বল ফিরিয়ে দিলে বড় বাঁচা বেঁচে যায় বাংলাদেশ।
গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর ফের খেলা শুরু হলে অব্যাহত থাকে ভারতের আক্রমণের ধারা। সেই ধারাবাহিকতায় ৭৯তম মিনিটে বাংলাদেশের রক্ষণের ভুলে গোল আদায় করে নেয় তারা। বদলি নামা আশিক কুরুনিয়ানের বাম প্রান্ত থেকে করা ক্রসে নিখুঁত হেডে বল জালে পাঠান ছেত্রী। এর আগে ৬৩তম মিনিটে ফাঁকায় থাকলেও সুযোগ হাতছাড়া করেছিলেন তিনি। সতীর্থের ফ্রি-কিকে তার হেড লক্ষ্যেই থাকেনি।
যোগ করা সময়ে আরও একবার ছেত্রীর কাছে পরাস্ত হন জিকো। সুরেশ সিংয়ের কাট-ব্যাকে তার শট খুঁজে নেয় জাল। জাতীয় দলের হয়ে ছেত্রীর গোল বেড়ে হলো ৭৪টি।
বাছাইয়ের সপ্তম ম্যাচে এটি বাংলাদেশের পঞ্চম হার। তারা ২ পয়েন্ট নিয়ে আছে পাঁচ দলের গ্রুপের তলানিতে। প্রথম জয়ে পয়েন্ট তালিকার তিনে উঠে গেছে ভারত। ইগর স্টিমাচের দলের অর্জন ৭ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট।
উল্লেখ্য, দুই দলের প্রথম দেখায় ভারতের মাঠ থেকে পয়েন্ট নিয়ে ফিরেছিল বাংলাদেশ। ২০১৯ সালের অক্টোবরে কলকাতার সল্ট লেক স্টেডিয়ামে সাদ উদ্দিনের লক্ষ্যভেদে এগিয়ে গিয়েও স্বাগতিকদের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করেছিল তারা।
Comments