বান্দরবানের কোয়ান্টাম কসমো স্কুলের ২ শিক্ষার্থীর ‘খেলতে গিয়ে’ মৃত্যুর অভিযোগ

বান্দরবানের লামা থানার সরই ইউনিয়নে কোয়ান্টাম কসমো স্কুলে পানি নির্গমনের পাইপে পড়ে দুই ছাত্রের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে।
বান্দরবানের লামায় কোয়ান্টাম কসমো স্কুল। ছবি: সংগৃহীত

বান্দরবানের লামা থানার সরই ইউনিয়নে কোয়ান্টাম কসমো স্কুলে পানি নির্গমনের পাইপে পড়ে দুই ছাত্রের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে।

গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শরিফুল আলম।

তিনি জানিয়েছেন, নিহতদের নাম আব্দুল কাদের জিলানী (১২) ও মোস্তাফিজুর রহমান (১৩)। তারা উভয়েই ষষ্ট শ্রেণির ছাত্র।

দুই ছাত্রের মৃত্যুর বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শরিফুল আলম বলেন, ‘সকাল সাড়ে ১১টায় স্কুল মাঠে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে খেলতে গিয়ে হঠাৎ তারা মাঠের পাশের পানি নির্গমন পাইপে পড়ে যায়।’

‘পরে সাড়ে ১২টার দিকে পাইপের পাশ থেকে আব্দুল কাদের ও ১টা ১০ মিনিটের দিকে পাইপ থেকে প্রায় একশ-দেড়শ ফুট দূরে মোস্তাফিজুরকে উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন’, বলেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে গতকাল রাতে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের যোগাযোগ নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও কেউ রিসিভ করেনি।

ঘটনাস্থলের কাছাকাছি রয়েছে কেয়াজু পাড়া পুলিশ ফাঁড়ি। সেখানকার সাব ইন্সপেক্টর মো. আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমাদের সাড়ে ১২টার দিকে ঘটনাটি জানানো হয়। এরপর আমরা ঘটনাস্থলে যাই।’

‘আমি যাওয়ার আগেই একজনকে উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। অপরজনকেও ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করার সময় আমি দেখতে পাইনি। তাকে ঝিরির যেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল, সেখান থেকে আমি কিছুটা দূরে ছিলাম।’

লামা থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. আলমগীর ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ময়নাতদন্তের জন্য দুজনের মরদেহ বান্দরবান সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

‘দুজনের মরদেহের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন আছে বলে মনে হচ্ছে। তাদের মৃত্যুর কারণ ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে,’ যোগ করেন তিনি।

করোনা মহামারির কারণে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সারাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। তবে, কোয়ান্টাম কসমো স্কুল চালু রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শরিফুল আলম বলেন, ‘আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে প্রায় দুই মাস আগে স্কুলের আবাসিক কার্যক্রম চালু করেছি।’

অনুমোদনের কপিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে উল্লেখ থাকা মোহাম্মদ ইছমত উল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমি শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে এই অনুমোদন দিয়েছি। আপনি বিস্তারিত জানতে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন।’ এরপর তিনি ফোন কেটে দেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে মোহাম্মদ ইছমত উল্লাহ’র পদবী উপ সচিব (সমন্বয়) উল্লেখ আছে।

‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই ব্যাপারে আমাদের কিছুই জানায়নি,’ উল্লেখ করে বান্দরবান জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সরিৎ কুমার চাকমা ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘করোনা মহামারির মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আবাসিক কার্যক্রম চালু রাখার অনুমোদন দেয়নি।’

অনুমোদনের বিষয়ে জানতে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

কোয়ান্টাম কসমো স্কুলে দুই ছাত্রের মৃত্যুর বিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রেজা রশীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘দুই ছাত্রের মৃত্যুর বিষয়ে কোয়ান্টাম আমাদেরকে কিছুই জানায়নি। তারা বিষয়টি আমাদের কাছে কেন গোপন রেখেছে সে জন্যে তাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে।’

কোয়ান্টাম কসমো স্কুলের ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে, বান্দরবানের লামা থানার সরই ইউনিয়নে ১৯৯৮ সালে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় কোয়ান্টাম মেডিটেশন সেন্টার।

তিন বছর পর ২০০১ সালে স্থানীয় কিছু দুঃস্থ পাহাড়ি ও বাঙালি শিশুকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও শিক্ষার সুবিধা দিয়ে গঠিত হয় কোয়ান্টাম কসমো স্কুল।

মাত্র সাতটি শিশু নিয়ে শুরু হলেও ২০১৯ সালে স্কুলের ছাত্র সংখ্যা দুই হাজার চারশতে পোঁছায়। স্কুলটিতে সূচনা ও শিশুসহ প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাকার্যক্রম চলছে।

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

5h ago