‘চা বাগান বাড়ানোর নামে উচ্ছেদ বন্ধ করতে হবে’

মৌলভীবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত তিনটি পুঞ্জি দুদিন ধরে পরিদর্শন করেছে নাগরিক সমাজের ১০ জনের একটি প্রতিনিধি দল।
গতকাল কুলাউড়া উপজেলার কাকড়াপুঞ্জি ও আজ মঙ্গলবার তারা আগারপুঞ্জি ও বনাখলাপুঞ্জি ঘুরে দেখেন এবং পুঞ্জির ক্ষতিগ্রস্ত খাসিয়া ও গারো পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলেন।
পরিদর্শন শেষে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা সাংবাদিকদের বলেন, চা বাগান বাড়ানোর নামে তাদের উচ্ছেদের পায়তারা বন্ধ করতে হবে।
প্রতিনিধি দলে ছিলেন, নাগরিক উদ্যোগের নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক দীপায়ন খীসা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরিন কণা, লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফারহা তানজীম তিতিল, বাপা’র প্রতিনিধি মো. আমিনুর রসুল বাবুল, অ্যাক্টিভিস্ট মাসুদ আলম, সমকালের নিজস্ব প্রতিবেদক তন্ময় মোদক এবং আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অলিক মৃ প্রমুখ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘একটি রাষ্ট্র কতোটা ভালো চলে তা মাপার গজকাঠি হলো- সে রাষ্ট্রে ধর্মীয় সংখ্যালঘু কিংবা জাতিগত সংখ্যালঘু কতোটা ভালো আছে, তার ওপর নির্ভর করে। তারা যদি ভালো থাকে তাহলে ধরে নেওয়া যায় সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষও ভালো আছে। এখানে তিনটি ঘটনার খবর পেয়ে আমরা এসেছি।’
‘এই খবরগুলো আমাদের মন খারাপ করে দেয়। পান গাছ কর্তন এবং জুম দখলের বিষয়ে জড়িতদের দ্রুত খুঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রশাসনের প্রতি দাবি জানাচ্ছি। চা বাগান বর্ধিতকরণের নামে তাদের উচ্ছেদের পায়তারা বন্ধ করতে হবে’, যোগ করেন তিনি।
লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, ‘বিনা টাকায় রাষ্ট্রের ইকোলজি ঠিক রাখছেন এই বনবাসীরা। তাই তাদের ব্যবস্থাপনাকে যদি স্বীকৃতি দেওয়া হয়, তাহলে সহজে পরিবেশ ভালো থাকবে। অপরদিকে, শান্তিতে থাকবে এসব জনগোষ্ঠী।’
নাগরিক উদ্যোগের নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন বলেন, ‘নিরাপদে যাতে পানজুম করতে পারে, এই নিরাপত্তাটুকু তাদের দিতে হবে। এ ছাড়া, খাসিয়া-গারোদের ভূমির সমস্যা সমাধানে সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।’
ক্ষতিগ্রস্ত পানপুঞ্জি পরিদর্শন শেষে প্রতিনিধি দলের মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে।
সম্প্রতি উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের আগারপুঞ্জির পানজুমের সহস্রাধিক পান গাছ কেটে দেয় দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনায় পুঞ্জির মান্ত্রী (পুঞ্জি প্রধান) সুখমন আমসে বড়লেখা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
এ ছাড়াও, বনাখলাপুঞ্জির খাসিয়াদের ৭০ একর জুমের জায়গা দখল করে তাদের কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে দুষ্কৃতিকারীরা। পরে সেখানে তারা কয়েকটি ঘরও নির্মাণ করে। এ ঘটনায় পুঞ্জির নারী মান্ত্রী (পুঞ্জি প্রধান) নরা ধার ও ছোটলেখা বাগানের প্রধান টিলা করণিক মো. দেওয়ান মাসুদ থানায় পৃথক দুটি মামলা করেন।
দখলের সাতদিন পর উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে পানজুমটি দখলমুক্ত করে খাসিয়াদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
অপরদিকে, কুলাউড়া উপজেলায় কাঁকড়াছড়া পানপুঞ্জিতে রেহানা চা বাগান কর্তৃক গাছ কাটারও অভিযোগ রয়েছে।
আরও পড়ুন:
Comments