নতুন ৩ জাতের আম কুমিল্লার বাগানে

এই তিন জাতের আমের মধ্যে রয়েছে কেনসিংটন প্রাইড, গ্লিন ম্যাংগো এবং অস্টিন ম্যাংগো। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে নতুন তিন জাতের আম ঝুলছে কুমিল্লার লাঙ্গলকোটের মাইরা গাঁওয়ের ইতালি প্রবাসী মোহাম্মদ বাহাদুরের ইউরো-বাংলা এগ্রো ফার্মে। প্রায় তিন বছর আগে তিনি এসব ফল গাছ লাগিয়েছিলেন এবং এ বছর কিছু কিছু গাছে ফল ধরেছে।

এই তিন জাতের আমের মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বিখ্যাত কেনসিংটন প্রাইড (Kensington Pride), ইউরোপসহ সারাবিশ্বে খ্যাত গ্লিন ম্যাংগো (Glenn mango) এবং অস্টিন ম্যাংগো (Osteen Mango)।

দ্য ডেইলি স্টারকে মোহাম্মদ বাহাদুর বলেন, ‘জীবিকার তাগিদে ২০০৪ সালে ইতালি পাড়ি দিয়েছিলাম। গত ১৭ বছর ধরে কাজ করেছি ইতালির বিভিন্ন শহরে। ঘুরেছি ইউরোপের কয়েকটি দেশ। দেখেছি হরেক রকমের ফলের বাগান। একসময় মনে হয়েছে, বিদেশি এই সুস্বাদু ফলমূলের জাত নিয়ে যাব দেশে। সেই চিন্তা থেকেই নতুন নতুন প্রজাতির ফল গাছ নিয়ে এসেছি।’

বাহাদুর জানান, গত চার বছর ধরে দেশে বিভিন্নভাবে পাঠাতে থাকেন বিদেশি হরেক রকমের ফলের নতুন জাত। এর মধ্যে দেশে এসে যোগাযোগ করেছেন উচ্চপর্যায়ের কৃষিবিদদের সঙ্গে। নিয়েছেন বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ। কোন জাত দেশে নেই এবং কোন জাত আনলে দেশের মাটিতে ভালো ফল পাওয়া যাবে, সেই বিষয়েও পরামর্শ নিয়েছেন।

এখন পর্যন্ত ইতালি, অস্ট্রেলিয়া এবং স্পেন থেকে এনেছেন নয়টি বিশ্ববিখ্যাত আমের জাত, ২০৪ প্রজাতির সাইট্রাস, ১৫৭ প্রজাতির ত্বীন (ডুমুর), ২৪ প্রজাতির পার্সিমন, নতুন জাতের আলুবোখারা। এই সব ফলের চাষ শুরু করেছেন নওগাঁর সাপাহারের একটি বাণিজ্যিক ফলের বাগান এবং নিজ গ্রামের ইউরো-বাংলা এগ্রো ফার্মে।

কোনো পরিচিত প্রবাসী শ্রমিক দেশে যাচ্ছেন শুনলেই তার হাতে পাঠিয়েছেন এসব মূল্যবান ফলের জাত।

নিজের ইউরো-বাংলা এগ্রো ফার্মে মোহাম্মদ বাহাদুর। ছবি: সংগৃহীত

‘যেসব উদ্ভিদের ফল ভালো পাব, সেই সব জাতের চারা তৈরি করে দেশব্যাপী সম্প্রসারণের ইচ্ছা আছে আমার’, বলেন বাহাদুর।

নতুন জাতের উদ্ভিদ দেশে আনার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নিয়ম মানা হয়েছে কিনা? জানতে চাইলে বাহাদুর বলেন, ‘যেসব বাগান থেকে চারা বা সায়ন সংগ্রহ করা হয়েছে, সেখানেই অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়ার পানির সঙ্গে মিশিয়ে চারা বা সায়ন বিশুদ্ধ করে দেশে পাঠানো হয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ‘বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প’র পরিচালক ড. মো. মেহেদী মাসুদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বাহাদুর দেশের জন্য অনেক ভালো কাজ করছেন। আমি তার সম্পর্কে ব্যক্তিগতভাবে জানি। গত কয়েক বছরে বিদেশ থেকে তিনি অনেক ধরনের ফলের গাছ দেশে নিয়ে এসেছেন।’

‘যে কাজটা গবেষক, কৃষিবিদদের করার কথা ছিল, সেই কাজ বাহাদুর করছেন। ইতোমধ্যে দেশের কৃষিতে তার অবদান উল্লেখ করার মতো’, বলেন মেহেদী মাসুদ।

ছবি: সংগৃহীত

তিনি বলেন, ‘নতুন জাতের এই ফলগুলো বিভিন্ন হর্টিকালচার সেন্টারের নানারকম পরীক্ষার মাধ্যমে সম্প্রসারণ করা উচিত।’

কেনসিংটন প্রাইড সম্পর্কে মেহেদী মাসুদ বলেন, ‘এই আমকে সংক্ষেপে কেপি বলা হয়। অস্ট্রেলিয়া এই আম সারাবিশ্বে রপ্তানি করে। ২০১৮ সালে আমি প্রথম অস্ট্রেলিয়া থেকে এই আমের জাত নিয়ে আসি। এখন কাশিয়ানী হর্টিকালচার সেন্টারে এ বছর ১০টি গাছে প্রচুর পরিমাণ ফল ধরেছে। বাহাদুর এই জাত এনেছেন ২০১৯ সালে।’

নতুন জাতের এসব ফলের পুষ্টিগুণ এবং বাণিজ্যিক সম্ভাবনা জানতে চাইলে এই কৃষিবিদ বলেন, ‘এসব আমের পুষ্টিগুণ ভালো এবং বিদেশে রপ্তানিযোগ্য। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বাণিজ্যিক বাগান তৈরি হলে কৃষকরা অনেক লাভবান হবেন। তবে, স্বাদের দিক থেকে আমাদের দেশিয় হিমসাগর বা ল্যাংড়া আমের সমতুল্য নয়।’

Comments

The Daily Star  | English
august 5 public holiday in Bangladesh

Govt to declare Aug 5 as public holiday

"Every year this day will be observed as the student-led people's uprising day"

1h ago