মুক্তিযুদ্ধ

৯ জুন ১৯৭১: পাকিস্তানকে সহায়তা বন্ধে দুই সিনেটরের প্রস্তাব

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ৯ জুন আলোচিত, ঘটনাবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। এদিন মার্কিন সিনেটর ফ্রাংক চার্চ ও আরেক সিনেটর উইলিয়াম স্যাক্সবি পাকিস্তানে চলমান মার্কিন সাহায্য বন্ধে মার্কিন সিনেটে একটি দ্বিপক্ষীয় সংশোধনী প্রস্তাব আনেন। এই প্রস্তাবে বলা হয়, 'পূর্ব বাংলা থেকে ভারতে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীরা কেবল ভারতের জন্য বোঝা নয় বরং ওই অঞ্চলের জন্য শান্তি শৃঙ্খলা ভঙ্গের অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা দিচ্ছে। আমরা মনে করি এই উদ্বাস্তু শরণার্থীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বাস্তুদের সহায়তা ও তারা যেন নিরাপদে তাদের দেশে ফিরে যেতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে পারে। কারণ ৫০ লাখ উদ্বাস্তু ভারতের মাটিতে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে, তাদের না ফেরা পর্যন্ত সমস্ত সাহায্য বন্ধ থাকা উচিৎ।'

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ৯ জুন আলোচিত, ঘটনাবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। এদিন মার্কিন সিনেটর ফ্রাংক চার্চ ও আরেক সিনেটর উইলিয়াম স্যাক্সবি পাকিস্তানে চলমান মার্কিন সাহায্য বন্ধে মার্কিন সিনেটে একটি দ্বিপক্ষীয় সংশোধনী প্রস্তাব আনেন। এই প্রস্তাবে বলা হয়, 'পূর্ব বাংলা থেকে ভারতে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীরা কেবল ভারতের জন্য বোঝা নয় বরং ওই অঞ্চলের জন্য শান্তি শৃঙ্খলা ভঙ্গের অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা দিচ্ছে। আমরা মনে করি এই উদ্বাস্তু শরণার্থীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বাস্তুদের সহায়তা ও তারা যেন নিরাপদে তাদের দেশে ফিরে যেতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে পারে। কারণ ৫০ লাখ উদ্বাস্তু ভারতের মাটিতে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে, তাদের না ফেরা পর্যন্ত সমস্ত সাহায্য বন্ধ থাকা উচিৎ।' 

তারা অভিযোগ করে বলেন, 'পূর্ব বাংলায় ত্রাণ কার্যক্রম আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে করা হোক। কারণ ১৯৭০ সালে সেখানে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময় আমরা দেখেছি সেখানে কী ব্যবস্থাপনা চলমান ছিল। ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার সময় পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী দেখিয়েছে তারা মূলত সুষ্ঠুভাবে ত্রাণকার্য পরিচালনায় সম্পূর্ণ অক্ষম।' 

৯ জুন সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সি কোসিগিন মস্কোতে বলেন, ‘পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারতে আশ্রয় নেওয়া সমস্ত শরণার্থীকে তাদের ভূমিতে ফিরে যাওয়ার জন্য অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে। ওই অঞ্চলের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার স্বার্থেই এটি করতে হবে। ভারত, পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন শঙ্কা প্রকাশ করছে।’

ঢাকায় এদিন

৯ জুন বিশ্ব ব্যাংক ও জাতিসংঘ তাদের দুটো প্রতিনিধি দল ঢাকায় পাঠায়। এই দলের সদস্যরা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পাহারায় ঢাকা ময়মনসিংহ সড়ক ধরে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে গেইটে পৌঁছা মাত্রই গ্রেনেড ছুঁড়ে মারে ক্র্যাক প্লাটুনের একটি গেরিলা মুক্তিযোদ্ধার দল। মুক্তিযোদ্ধাদের ছোঁড়া গ্রেনেডে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। এই গেরিলা হামলাই ছিল ঢাকার বুকে প্রথম বড় ধরনের গেরিলা অপারেশন।

৯ জুন জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার প্রিন্স সদরুদ্দিন আগা খান পূর্ব পাকিস্তান সফরের জন্য পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে ঢাকায় আসেন। এই সফরে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর টিক্কা খানসহ সামরিক প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে।

৯ জুন সেনাবাহিনী ও সামরিক প্রশাসনের পক্ষাবলম্বন করা আওয়ামী অ্যাকশন কমিটির সভাপতি মীর ওয়াইজ ফারুক এক বক্তব্যে বলেন, ‘দেশের এই ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য দায়ী একমাত্র এই ভারতের চর মুক্তিবাহিনী ও আওয়ামী লীগের ভারতপন্থী নেতারা। সেনাবাহিনী বাধ্য হয়ে এখন শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।'

ভারতে এদিন 

৯ জুন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী এ এইচ এম কামরুজ্জামান পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়িতে একটি শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন।

৯ জুন ভারতের দিল্লিতে আদি কংগ্রেস পার্লামেন্টারি পার্টির সাধারণ পরিষদের সভায় বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি ও ভারত কর্তৃক বাংলাদেশকে স্বীকৃতির বিষয় নিয়ে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় সভাপতির ভাষণে পার্লামেন্টারি পার্টির চেয়ারম্যান মোরারজি দেশাই বলেন, 'বাংলাদেশের বিষয়ে ভারত সরকার কার্যত কোনো বড় পদক্ষেপ নিচ্ছে না। কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ব্যতীতই সরকার এগোতে চাচ্ছে।'

৯ জুন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ সহায়ক সমিতির মুখপাত্র এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সহায়ক সমিতি থেকে ছয় সদস্যের একটি শিক্ষকদের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের পক্ষে জনমত সৃষ্টি ও বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানাতে কিছুদিনের মধ্যে ভারতের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনে যাবেন। এই প্রতিনিধিদলে থাকবেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ আর মল্লিক এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আনিসুজ্জামান। প্রথমে তারা এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবেন। পরে একাধারে তারা দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে, আগ্রা, আলিগড়, লক্ষ্ণৌ ও পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গড়ে তুলবেন।

বিশ্বব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে এদিন

৯ জুন মার্কিন সরকার ভারতকে অতিরিক্ত দেড় কোটি ডলার সহায়তা দেয়ার জন্য সাহায্য মঞ্জুর করে। এর আগে মার্কিন সরকার আড়াই কোটি ডলার পূর্ব পাকিস্তানে সহায়তা করবে বলে ঘোষণা দিয়েছিল। এই সাহায্যের মধ্যে ১ কোটি ডলার খরচ হবে খাবার সরবরাহ ও চিকিৎসা সরঞ্জামাদি ক্রয়ে। বাকি টাকা পুনর্বাসনে খরচ হবে।

৯ জুন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার শরণ সিং সোভিয়েত ইউনিয়নের মস্কো থেকে পশ্চিম জার্মানির রাজধানী বনে পৌঁছান। এদিন এক রেডিও চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সরদার শরণ সিং বলেন, ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনী পূর্ববঙ্গে যে তাণ্ডবলীলা চালাচ্ছে তার দায়দায়িত্ব বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর উপরও বর্তায়। কারণ তারা চুপ থেকে সম্মতি দিয়েছে। পূর্ববাংলা থেকে আজ অব্দি প্রায় অর্ধ কোটি নিরীহ মানুষ উদ্বাস্তু হিসেবে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। পাকিস্তান সরকারের ভুল নীতি এবং নির্বিচারে গণহত্যাই এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। এখন যদি ভারতে আশ্রয় প্রত্যাশী শরণার্থীদের এই জনস্রোত না বন্ধ হয় তবে ভারত সরকার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে কঠোর হতে বাধ্য হবে।’

৯ জুন ভারতের সর্বোদয় পার্টির নেতা জয়প্রকাশ নারায়ণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে দেয়া এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেন, 'বাংলাদেশ বিষয়ে রাজনৈতিকভাবে মীমাংসায় আসতে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের ওপর যে চাপ সৃষ্টি করেছে যুক্তরাষ্ট্র, তার ফল দেখা যাচ্ছে। কারণ পাকিস্তান সরকার এরই মধ্যে কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে, আরও নেবে।'

৯ জুন ব্রিটেনের কমন্স সভায় বিরোধী লেবার পার্টির সংসদ সদস্যেরা সরকার পক্ষর সঙ্গে বাংলাদেশের বিষয়ে চার ঘণ্টা বিতর্ক করেন। এসময় লেবার পার্টির সংসদেরা শরণার্থীদের বিষয়ে গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন এবং একই সঙ্গে পাকিস্তান সরকারের নীতির কঠোর সমালোচনা করেন। লেবার পার্টির নেতা ব্রিটেনের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুডিথ হার্ট এবং লেবার পার্টির নেতা হ্যারল্ড উইলসন তাদের বক্তব্যে তারা পূর্ববঙ্গে ব্রিটিশ সাহায্য পাঠাতে কালক্ষেপণ করার জন্য তীব্র সমালোচনা করেন।

৯ জুন ব্রিটেনের বৈদেশিক উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী রিচার্ড উড বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক পদক্ষেপ, শরণার্থী সমস্যা ও শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির বিষয়সহ নানা বিষয়ে উত্থাপন সম্বলিত কয়েকটি চিঠি বিনিময় হয়েছে ব্রিটেন ও পাকিস্তানের মধ্যে।

৯ জুন বাংলাদেশে চলমান গণহত্যা, নিপীড়নের প্রতিবাদ জানাতে ইংল্যান্ড সফরে আসা পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দলের এই সফরের বিরুদ্ধে ৭২ ঘণ্টা অনশন শুরু করে প্রবাসী ছাত্র মোহাম্মদ সালাম। এদিন ইয়র্কশায়ারের বার্ডফোর্ড মাঠে তিন দিন ব্যাপী ম্যাচ শুরু হয়েছিল। মোহাম্মদ সালাম জানান, তিনি পুরো খেলা চলাকালীন অনশন চালিয়ে যাবেন। সালাম বলেন, তিনি এক বছর আগে ইয়র্কশায়ারে এসেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর থেকে আজ পর্যন্ত ৩ মাস পেরিয়ে গেলেও পরিবারের সদস্যদের কোনো খোঁজখবর তিনি পাননি। তারা কি বেঁচে আছেন কিনা তাও জানেন না তিনি। মোহাম্মদ সালামের অনশনের আগে মাঠের বাইরে ২০০ বাঙালি ও ব্রিটিশ ছাত্ররা বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের জন্য ও গণহত্যা বন্ধে মানববন্ধন করেন।

৯ জুন পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েকটি শরণার্থী শিবির পরিদর্শন শেষে ওয়াশিংটনে ফিরে কংগ্রেসের সদস্য কর্নেলিয়াস গ্যালাঘার বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র যদি এখন পাকিস্তানকে সহায়তা করে তবে পূর্ববঙ্গে নিপীড়ন ও ধ্বংসক্রিয়া আরো বাড়বে। সব দেশের উচিৎ পাকিস্তানকে সহায়তা না দিয়ে, ভারতের মাধ্যমে শরণার্থীদের কাছে সহায়তা পাঠানো।

৯ জুন আন্তর্জাতিক ইসলামিক সংস্থার মহাসচিব এইচ এইচ মারজুকি জাতিম ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলেন, ভারতে আশ্রয় নেয়া পূর্ব বাংলা থেকে আগত শরণার্থীদের সহায়তা করা মুসলিম দেশগুলোর একান্তই কর্তব্য। তিনি বিবৃতিতে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আবেদন জানান পূর্ব বাংলায় ত্রাণ পাঠানোর জন্য এবং পাকিস্তানের উপর চাপ প্রদানের জন্য।

৯ জুন জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত ও জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব ইসমত কিত্তানি পূর্ব পাকিস্তানে ৫ দিনের সফর ও করাচি সফর শেষে নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে করাচি ত্যাগ করেন। করাচি ত্যাগ করার আগে তিনি বলেন, পাকিস্তান সরকার যে ত্রাণ সাহায্যের আবেদন করেছে তা জাতিসংঘ ভেবে দেখবে। 

সংবাদপত্রে মুক্তিযুদ্ধের প্রকাশিত সংবাদ

৯ জুন মার্কিন পত্রিকা 'দ্য বালটিমোর সান' এ প্রকাশিত এক বিশেষ প্রতিবেদনে বিশেষ প্রতিবেদক অ্যাডাম ক্লাইমার বলেন, 'যতক্ষণ পর্যন্ত পাকিস্তান সরকার তাদের নীতি পরিবর্তন না করছে, পূর্ব বাংলা থেকে ভারতে আগত শরণার্থীরা নিজের ভূমিতে ফিরে যেতে না পারছে ততক্ষণ পর্যন্ত পাকিস্তানকে দেয়া সমস্ত সহায়তা বন্ধ রাখা উচিৎ।’

৯ জুন দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক সংবাদে ‘মুক্তিফৌজের ব্যাপক ও প্রচন্ড আক্রমণে বহু পাকসৈন্য খতম’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, 'বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে কুমিল্লা জেলার সামরিক গুরুত্বপূর্ণ কসবা এলাকায় মুক্তিবাহিনী ফের নতুন করে আক্রমণ শুরু করেছে। গতকাল মুক্তিফৌজ মর্টার ও মেশিনগান নিয়ে প্রচণ্ড আক্রমণ চালালে তেত্রিশজন পাকসৈন্য নিহত হয় এবং পাকসৈন্যরা কসবা থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে সরে যেতে বাধ্য হয়। পাকসৈন্যদের জন্য যুবতী নারী সংগ্রহ করে দেয়ার অপরাধে মুক্তিফৌজ ৬ জন দালালকেও গুলি করে হত্যা করেছে। মুক্তিফৌজের গেরিলা বাহিনীও গতকাল কসবার নিকটবর্তী গঙ্গাসাগরে ত্রিমুখী আক্রমণ চালিয়ে ২৮ জন পাকসৈন্যকে হত্যা করে। আরও দক্ষিণে মুক্তিফৌজ গতকাল নোয়াখালী জেলার চাঁদগাজী, ছাগলনাইয়া, বান্ধুরা, আমতলী ও জগ্ননাথদীঘি এলাকায় তাদের তৎপরতা বিস্তৃত করে এবং পাকসৈন্যদের পশ্চাদপসরণ করে ফেনী শহরে সরে যেতে বাধ্য করে। এসব অঞ্চলে মুক্তিফৌজ কমান্ডো বাহিনীর সঙ্গে দু’দিনব্যাপী প্রচন্ড যুদ্ধে বহু পাকসৈন্য হতাহত হয়েছে। ফেনী শহরের উপকণ্ঠে মুক্তিফৌজের গেরিলা দল লুকিয়ে থেকে অতর্কিত সাফল্যের সঙ্গে এক প্লাটুন পাকসৈন্যকে আক্রমণ করে। পাকসৈন্যরা ওই সময় একটা ছোট নদী পার হচ্ছিল গেরিলাদের আক্রমণে সাতজন পাকসৈন্য এবং অপর কয়েকজন আহত হয়।'

৯ জুন দৈনিক অমৃতবাজার পত্রিকা এদিন প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলে, 'রবিবার রাতে রাজশাহী খন্ডে মুক্তিফৌজ অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে জনৈক মেজরসহ ৪৯ জন পাকিস্তানী সেনাকে বন্দী করেছে।'

দেশব্যাপী প্রতিরোধ যুদ্ধ

৯ জুন বেশ কয়েকটি গ্রামে অগ্নিসংযোগ করার সময় মুক্তিবাহিনী রংপুরে নাগেশ্বরী থানার মুকসী গ্রামে অতর্কিত আক্রমণ চালায়। এসময় ১২ হানাদার সেনা নিহত হয়। 

৯ জুন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ফেনীর পরশুরামের বিলোনিয়ায় তাদের রণকৌশল কিছুটা পরিবর্তন করে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দল গড়ে মুক্তিবাহিনীর ঘাঁটিতে আঘাত হানার চেষ্টা করে। প্রায় এক ব্যাটেলিয়নের বেশি সেনা এই প্রচেষ্টার সঙ্গে ছিল। এদিন ফেনী ও ছাগলনাইয়ার মধ্যবর্তী কোনো এক স্থানে পাকিস্তানি হানাদারদের গোলন্দাজ বাহিনীর একটি রেজিমেন্ট তাদের সাহায্যে নিয়োজিত ছিল। যদিও মুক্তিবাহিনী টের পাওয়ায় তাদের এই প্রচেষ্টা সফল হয়নি।

৯ জুন মুক্তিবাহিনী ভুরুঙ্গামারীতে হানাদার বাহিনীর এক ক্যাম্পে অতর্কিত হামলা চালায়। এই হামলায় ২ হানাদার সেনা গুরুতরভাবে আহত হয়। 

তথ্যসূত্র- 

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র অষ্টম, নবম, দ্বাদশ, ত্রয়োদশ, চতুর্দশ খণ্ড

দৈনিক অমৃতবাজার পত্রিকা, ১০ জুন ১৯৭১ 

দৈনিক যুগান্তর, ১০ জুন ১৯৭১ 

দৈনিক পূর্বদেশ, ১০ জুন ১৯৭১ 

দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা, ১০ জুন ১৯৭১

দৈনিক পাকিস্তান, ১০ জুন ১৯৭১

আহমাদ ইশতিয়াক [email protected]

Comments

The Daily Star  | English

Horrors inside the Gaza genocide: Through a survivor’s eyes

This is an eye-witness account, the story of a Palestinian in Gaza, a human being, a 24-year-old medical student, his real human life of love and loss, and a human testimony of war crimes perpetrated by the Israeli government and the military in the deadliest campaign of bombings and mass killings in recent history.

9h ago