এসআই থেকে মাদক চোরাকারবারি
ইয়াবা সেবন করতে পছন্দ করতেন তিনি। দামেও সস্তা এ মাদক। তার মতো আরও অনেকেই যে এ মাদকে আসক্ত, তা অজানা ছিল না তার। তাই ভেবে দেখলেন, নিজে সেবনের পাশাপাশি যদি ইয়াবার চোরাকারবার করা যায়, তবে দ্রুত অনেক টাকা আয় করা সম্ভব।
এ ছাড়া, তিনি যে পেশায় ছিলেন, তাতে তার ওপর কারো সন্দেহ জন্মানোর আশঙ্কাও কম। অন্তত তিনি তা-ই ভেবেছিলেন।
কিন্তু, শেষ রক্ষা হয়নি। পুলিশের ৪৫ বছর বয়সী উপ-পরিদর্শক (এসআই) আতিকুল ইসলামকে গত বছরের ১৫ জুন অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক গোলাম কিবরিয়া গত ৩০ নভেম্বর ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
যদিও, এসবের কিছুই গণমাধ্যমের নজরে আসেনি তখন।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, ‘রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোড থেকে আতিকুল ও তার বন্ধু রেজাউর রবকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে ১১ হাজার ৬০০ পিস ইয়াবা এবং সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।’
আতিকুলের কর্মস্থল ছিল বান্দরবান। কিন্তু, আদাবর ও মোহাম্মদপুর এলাকায় বন্ধু-বান্ধব থাকায় সেখানে তার যাতায়াত ছিল। মোহাম্মদপুর থানায় এক সময় সেকেন্ড অফিসার হিসেবে দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি।
মামলার নথি অনুসারে, ২০১৯ সালে আরেক ইয়াবা আসক্ত রবের সঙ্গে পরিচয় হয় আতিকুলের। তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়। রব বেকার ছিলেন। আতিকুলের অংশীদার হয়ে মাদক চোরাকারবার করতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন তিনি।
ইয়াবা সরবরাহে সাহায্য করতে পারবে, এমন একটি সূত্রের সন্ধানও ছিল আতিকুল ও রবের কাছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিবেদনে বলেছেন, কক্সবাজারের সোনারপাড়া চেকপোস্টে ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন আতিকুলের মাদক চোরাকারবারি সালাহউদ্দিনের সঙ্গে পরিচয় হয়। নিজে সেবনের জন্য তখন প্রায়ই তার কাছ থেকে ইয়াবা কিনতেন আতিকুল।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, আতিকুল যখন কম দামে বেশি ইয়াবা পাওয়ার উপায় জানতে চান, সালাহউদ্দিন তখন তাকে আবদুল মাজেদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। পেশায় মাঝি মাজেদ মিয়ানমার থেকে কক্সবাজারে ইয়াবা নিয়ে আসতেন। আর সালাহউদ্দিন কাজ করতেন দালাল হিসেবে।
আতিকুলকে ইয়াবা সরবরাহ করতে সালাহউদ্দিন ও মাজেদ কয়েক দফায় ঢাকায় এসেছিলেন বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
সাপ্লাই চেইন খুঁজে বের করার পর আতিকুল রাজধানীর ডিলারদের কাছে ইয়াবা বিক্রি করতে শুরু করেন। তিনি হুমায়ুন আহমেদ, হাসান, শাকিল ও শহীদুল নামের অন্তত চার জন ডিলারকে খুঁজে পান এবং তাদের কাছে ইয়াবা বিক্রি করতে থাকেন।
বান্দরবান জেলা পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তারের পরপরই আতিকুলকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
বান্দরবান আদালতের পরিদর্শক মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি আতিকুল বান্দরবান আদালতে সিএসআই হিসেবে যোগদান করেন। কিন্তু, গত বছরের ২৩ মার্চ ছুটি নেওয়ার পর থেকে তিনি আর কাজে যোগ দেননি।’
এ বিষয়ে একটি বিভাগীয় তদন্ত চলছে বলে জানান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের অধ্যাপক জিয়াউর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মাদকদ্রব্য ব্যবহার থেকে দূরে রাখতে প্রাথমিকভাবে ডোপ টেস্ট ব্যবস্থা অত্যন্ত কার্যকর। কিন্তু, এ টেস্ট নিয়মিত করতে হবে।’
মাদক চোরাকারবার ও মাদক সেবনের সঙ্গে যুক্ত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মত দেন তিনি।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম
Comments