একীভূত হতে পারে বিডিবিএল ও বেসিক ব্যাংক

বড় অঙ্কের মূলধন ঘাটতিতে নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। এ অবস্থায় ব্যাংকগুলোর সার্বিক অবস্থার উন্নতির জন্য সরকারের নেওয়া উদ্যোগের অংশ হিসেবে সমস্যা জর্জরিত বেসিক ব্যাংকের সঙ্গে অপেক্ষাকৃত ভালো অবস্থানের বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) একীভূত হতে যাচ্ছে।

বড় অঙ্কের মূলধন ঘাটতিতে নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। এ অবস্থায় ব্যাংকগুলোর সার্বিক অবস্থার উন্নতির জন্য সরকারের নেওয়া উদ্যোগের অংশ হিসেবে সমস্যা জর্জরিত বেসিক ব্যাংকের সঙ্গে অপেক্ষাকৃত ভালো অবস্থানের বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) একীভূত হতে যাচ্ছে।

চলতি সপ্তাহে দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘তারা দুটিই রাষ্ট্রীয় ব্যাংক। সুতরাং একীভূত হওয়া প্রসঙ্গে দুই পক্ষ থেকেই কোনো ধরনের আপত্তি আসা উচিত না।’

এক সময় বেসিক ব্যাংক ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে আদর্শ। ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসেবে আব্দুল হাই বাচ্চুকে নিয়োগ দেয়। তখন থেকেই পতন শুরু হয় ব্যাংকটির।

২০১০ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে বেসিক ব্যাংকে ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি জালিয়াতির ঘটনা ব্যাংকটিকে প্রচণ্ড আর্থিক দুর্গতির মধ্যে ফেলে দেয়। এর পর থেকে ব্যাংকটিকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকার অব্যাহতভাবে তহবিলের জোগান দিয়ে চলেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, ২০২০ সালে বেসিক ব্যাংকের নিট লোকসানের পরিমাণ ৩৬৬ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। এর আগের বছর ২০১৯ সালে ব্যাংকটির নিট লোকসানের পরিমাণ ছিল ৩২৬ কোটি টাকা।

গত বছরের শেষ দিকে বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। যা ছিল বিতরণ করা ঋণের ৫১ শতাংশ। আর গত মার্চ মাসের হিসাবে ব্যাংকটিতে ১ হাজার ৭২ কোটি টাকার মূলধনের ঘাটতি আছে।

এ ছাড়া, গত বছরের শেষে সবগুলো রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের যে পরিমাণ খেলাপি ঋণ ছিল, তার মধ্যে বেসিক ব্যাংক এককভাবে ১৭ দশমিক ৭ শতাংশ খেলাপি ঋণের জন্য দায়ী ছিল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুসারে, ব্যাংকিং খাতে সব মিলিয়ে গত বছর খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। এর ৪৭ দশমিক ৬ শতাংশ ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ।

এদিকে ২০১০ সালে বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা ও বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংককে একীভূত করে গড়ে তোলা হয়েছিল বিডিবিএলকে। যা বরাবরই লাভে আছে। গত বছরও ব্যাংকটি সাড়ে চার কোটি টাকা মুনাফা করেছে।

এ ছাড়া গত বছরের শেষে বিডিবিএলের উদ্বৃত্ত মূলধনের পরিমাণ ছিল ৬০৫ কোটি টাকা। একই সময়ে এর খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ৫৯৫ কোটি টাকায়। যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ৩৪ শতাংশ।

অর্থমন্ত্রী জানান, আইন অনুযায়ী আগামী ছয় মাস পর এই একীভূত কার্যক্রম শুরু হতে পারে।  

তিনি বলেন, যে ব্যাংকগুলো খারাপ অবস্থা থেকে আরও বাজে পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে তাদের জোর করেই অপেক্ষাকৃত ভালো ব্যাংকগুলোর সঙ্গে একীভূত করা হবে।

তবে, বেসিক ব্যাংক ও বিডিবিএলের একীভূতকরণের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি বলে জানান অর্থমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো তাদের আর্থিক ও ইক্যুইটি কাঠামোর বিষয়টি যাচাই-বাছাই করিনি। এছাড়া একীভূতকরণের বিষয়ে দুই ব্যাংক কর্তৃপক্ষের মতামতও নেইনি।’

অবশ্য অর্থমন্ত্রী বেসিক ব্যাংকের ভবিষ্যৎ  নিয়ে আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য তারা সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই করছে। এটা ভালো লক্ষণ। আমি মনে করি ব্যাংকটি শেষ পর্যন্ত নিজের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম হবে।’

প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মামুনুর রশীদ

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

8h ago