রেকর্ড গড়ে ইউরোর উদ্বোধনী ম্যাচে জিতল ইতালি
ম্যাচের লাগাম মুঠোয় নিয়ে মুহুর্মুহু আক্রমণ করেও প্রথমার্ধে সফলতা মিলল না ইতালির। কিন্তু বিরতির পর তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল তুরস্কের প্রতিরোধ। নান্দনিক ও আক্রমণাত্মক ফুটবলে তাদেরকে উড়িয়ে উয়েফা ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে শুভ সূচনা করল ফেভারিট আজ্জুরিরা। পাশাপাশি রবার্তো মানচিনির শিষ্যরা গড়ল নতুন কীর্তিও।
শুক্রবার রাতে ‘এ’ গ্রুপে নিজেদের মাঠ রোমের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ৩-০ গোলে জিতেছে ইতালি। প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী ম্যাচের প্রথম গোলটি হয় আত্মঘাতী। পরে গ্যালারিতে উপস্থিত স্বাগতিক দর্শকদের উল্লাসে মাতিয়ে ব্যবধান বাড়ান চিরো ইম্মোবিলে ও লরেঞ্জো ইনসিনিয়ে।
ইউরোপের ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের আসরে কোনো ম্যাচে প্রথমবারের মতো তিন গোলের রেকর্ড গড়েছে ইতালি। আগের ৩৮ ম্যাচে ১২ বার দুই গোল করতে সমর্থ হয়েছিল তারা। সাম্প্রতিক সময়ে অপ্রতিরোধ্য ছন্দে এগোচ্ছে তারা। টানা ২৮ ম্যাচে তারা দেখেনি হারের মুখ। ইউরোর ইতিহাসে উদ্বোধনী ম্যাচে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়ের নজিরও স্থাপন করেছে তারা।
ম্যাচের প্রথমার্ধেই প্রতিপক্ষের গোলমুখে ১৪টি শট নেয় ইতালি। যার মধ্যে লক্ষ্যে ছিল তিনটি। বিরতির পরও অব্যাহত থাকে তাদের আক্রমণের ধারা। দ্বিতীয়ার্ধে তাদের ১০টি শটের পাঁচটি ছিল লক্ষ্যে। তুরস্ক বিরতির আগে গোলমুখে কোনো শট নিতে না পারলেও রক্ষণ জমাট রেখেছিল। তবে শেষ ৪৫ মিনিটে উজ্জীবিত ইতালির সামনে রীতিমতো ধুঁকতে হয়েছে তাদের।
ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই গোলের উদ্দেশ্যে শট নেয় ইতালি। আলেসান্দ্রো ফ্লোরেঞ্জির লম্বা করে বাড়ানো বল ধরে বাইলাইন থেকে ডি-বক্সের মধ্যে ফেলেন দমিনিকো বেরার্দি। দুরূহ কোণ থেকে লাৎসিওর স্ট্রাইকার ইম্মোবিলের নেওয়া শট জালের বাইরের দিকে লাগে।
১৭তম মিনিটে ইনসিনিয়ে সতীর্থের সঙ্গে বল আদান-প্রদান করে বিপজ্জনক জায়গা থেকে শট নেন। কিন্তু বল যতটা বাঁকাতে চেয়েছিলেন নাপোলির এ ফরোয়ার্ড, ততটা না বেঁকে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
২২তম মিনিটে তুরস্ক বড় বাঁচা বেঁচে যায় গোলরক্ষক উরচান চাকিরের দক্ষতায়। ইনিসিনিয়ের কর্নার থেকে অধিনায়ক জর্জিও কিয়েলিনির হেড জালের দিকেই যাচ্ছিল। দারুণ ক্ষিপ্রতায় ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে দলকে রক্ষা করেন চাকির।
৩৩তম মিনিটে সাসুয়োলোর উইঙ্গার বেরার্দির ক্রসে ইম্মোবিলের শট লক্ষ্যে থাকেনি। চার মিনিট পর ডি-বক্সের বাইরে থেকে ইনসিনিয়ের শট পরীক্ষা নিতে পারেনি চাকিরের। ছয় মিনিট পর ইম্মোবিলেও ফাঁকি দিতে ব্যর্থ হন তাকে।
প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে পেনাল্টির আবেদন তোলে ইতালি। ডি-বক্সের বাম দিক থেকে এএস রোমার লেফট-ব্যাক লিওনার্দো স্পিনাজ্জোলার ক্রস মেহমেত চেলিকের প্রসারিত হাতে লাগে। কিন্তু রেফারির সাড়া মেলেনি। পরে বিস্ময় জাগিয়ে ভিএআরেও প্রত্যাখ্যাত হয় স্বাগতিকদের আবেদন।
গোলমুখে প্রথম শটটি নিতে তুরস্ককে অপেক্ষা করতে হয় ৫১তম মিনিট পর্যন্ত। ইনসিনিয়ের কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে একক নৈপুণ্যে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন বদলি নামা চেঙ্গিজ উনদার। তার শট প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়ের গায়ে লাগার পর লুফে নেন ইতালির গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি দোন্নারুমা।
দুই মিনিট পরই ভাঙে অচলাবস্থা। ছয় গজের বক্সে বেরার্দির ক্রস ফেরাতে গিয়ে দুর্ভাগ্যক্রমে নিজেদের জালেই জড়িয়ে দেন জুভেন্টাসের ডিফেন্ডার মেরিহ দেমিরাল।
গোল পেয়ে তেড়েফুঁড়ে খেলতে থাকা ওঠা ইতালি ৬৬তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে। স্পিনাজ্জোলার জোরালো শট চাকির রুখে দিলেও পুরোপুরি বিপদমুক্ত করতে পারেননি। ফিরতি শটে বল জালে ঠেলে দেন সুযোগসন্ধানী ইম্মোবিলে।
৭৯তম মিনিটে তুরস্কের লড়াইয়ে ফেরার সব আশা শেষ করে দেন ইনসিনিয়ে। গোলরক্ষক চাকিরের ভুলের পর ইম্মোবিলের নিঃস্বার্থ পাসে দূরের পোস্টে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি। যোগ করা সময়ে বুরাক ইলমাজের শট কিয়েলিনি ব্লক করলে জাল অক্ষত রেখে মাঠ ছাড়ে ইতালি।
আগামী বৃহস্পতিবার নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে একই ভেন্যুতে সুইজারল্যান্ডের মুখোমুখি হবে সবশেষ নয় ম্যাচের সবকটিতে জেতা ইতালি। এসময়ে তারা ২৮ গোল করলেও হজম করেনি একটিও!
Comments