প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরের জন্য গরু বিক্রি, জমি বন্ধক রেখে টাকা

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেতে চেয়ারম্যান ও প্রকল্প কর্মকর্তাকে কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা করে দিতে হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বান্দরবানের থানচি উপজেলার বেশ কয়েকটি পরিবার।
বান্দরবানের থানচিতে গরু বিক্রি করা টাকায় পাওয়া ঘরের সামনে মং সানু মারমা ও তার স্ত্রী। ছবি: সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেতে চেয়ারম্যান ও প্রকল্প কর্মকর্তাকে কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা করে দিতে হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বান্দরবানের থানচি উপজেলার বেশ কয়েকটি পরিবার।

অন্যদিকে প্রকল্প কর্মকর্তা বলছেন, সরকারের বরাদ্দ দেওয়া অর্থে ঘর নির্মাণ করা যাচ্ছে না, তাই চেয়ারম্যানের সাথে আলাপ করেই কারো কারো কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে।

থানচি উপজেলার ক্রংক্ষ্যং পাড়ার ষাটোর্ধ্ব মং সানু মারমা প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরের জন্য নিজের পালিত গরু বিক্রি করে ৩০ হাজার টাকা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

মং সানু বলেন, বলা হয়েছিল ৩০ হাজার টাকা জমা দিলেই প্রধানমন্ত্রীর উপহারের একটি পাকা বাড়ি তৈরি করে দেয়া হবে। ঘরের আশায় আমি বলিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়া অং মারমা এবং প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তা তরিকুল ইসলামকে গরু বিক্রি করে ইট বালু সরবরাহকারী মামুনের মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকা দিয়েছি।’

তবে কষ্ট করে টাকা দিলেও যেখানে ঘর দেওয়া হবে বলা হয়েছিল সেখানে না দিয়ে দুর্গম এলাকায় অসম্পূর্ণ ঘর দেওয়া হয়েছে বলে জানান মং সানু। 

তিনি বলেন, ‘আমাকে বলা হয়েছিল ক্রংক্ষ্যং পাড়ায় ঘরটি তৈরি করে দেয়া হবে। কিন্তু যোগাযোগের অসুবিধার কথা বলে নির্জন একটি জায়গায় ঘরটি তৈরি করা হয়েছে। প্রায় দুই মাস আগে অসম্পূর্ণভাবে নির্মাণ করা ঘরটি এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।’

মং সানুর মতোই নাইক্ষ্যং পাড়ার উবা থোয়াই মারমারও একই অভিযোগ। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরের জন্য প্রায় চার মাস আগে চেয়ারম্যান জিয়া অং মারমার নির্দেশে মামুনকে ৩৪ হাজার টাকা দিয়েছি।’

‘ঘরের আশায় গরু বিক্রি করে টাকাগুলো দিয়েছিলাম। কিন্তু ঘরের কাজ শেষ না করেই তারা চলে গেছেন,’ বলেন উবা থোয়াই।

মংম্যা চিং পাড়ার ক্য চিং থোয়াই মারমা বলেন, ‘পাকা ঘরের আশায় জুমের জায়গা বন্ধক রেখে ২০ হাজার টাকা ধার করেছি। আগামী আট মাসের মধ্যে ১০ হাজার টাকার সুদসহ টাকা শোধ করতে না পারলে আমার প্রায় এক খানি জুমের জায়গা বন্ধক নেয়া ব্যক্তির কাছে চলে যাবে।’

তিনি বলেন,’২০ হাজার টাকা থেকে ১৭ হাজার টাকা মামুনকে দিয়ে দিয়েছি। আরও ১৭ হাজার টাকা মামুন দাবি করেছেন। এই ঘর নিয়ে আমি খুব বিপদে পড়ে গেছি।’

একই অভিযোগ করেন নাইক্ষ্যং পাড়ার শৈ ক্য চিং মারমা। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরের জন্য চেয়ারম্যান জিয়া অং মারমার হাতে ৩০ হাজার টাকা দিয়েছি। তবে অনেক দিন থেকেই ঘরটি অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে।’

এ বিষয়ে ঠিকাদার মামুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন চেয়ারম্যান ও ইউএনওর সঙ্গে যোগাযোগ করুন। তিনি কিছু বলতে পারবেন না। 

বলি পাড়া চেয়ারম্যান জিয়া অং মারমার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে যাদের অভিযোগ আছে তারা যেন মামলা করেন, তিনি এ বিষয়ে কিছু বলবেন না।

অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে থানচি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রত্যেক ঘর নির্মাণের জন্য সরকার ১ লাখ ৭১ হাজার  টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু সেই টাকা দিয়ে আমরা অনেক জায়গায় ঘরগুলো নির্মাণ করতে পারছি না। তাই ইউএনও এবং অন্যান্যদের সাথে আলাপ করেই কারো কারো কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়েছে।’

এই ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতাউল গনি ওসমানীর ফোনে একাধিকবার কল দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

বলিপাড়া ইউনিয়নে ১২৫টি ঘর বরাদ্দ হয়েছে বলে জানান প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা।

Comments

The Daily Star  | English

Over 5,500 held in one week

At least 738 more people were arrested in the capital and several other districts in 36 hours till 6:00pm yesterday in connection with the recent violence across the country.

13h ago