এফডিআর দিতে না পারায় পদ্মা ব্যাংকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার হুমকি বিসিটিএফ’র

স্থায়ী আমানতের (এফডিআর) ২৯ কোটি ১০ লাখ টাকা পরিশোধ করতে না পারায় পদ্মা ব্যাংকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছে বাংলাদেশ জলবায়ু ট্রাস্ট তহবিল (বিসিটিএফ)।

স্থায়ী আমানতের (এফডিআর) ২৯ কোটি ১০ লাখ টাকা পরিশোধ করতে না পারায় পদ্মা ব্যাংকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছে বাংলাদেশ জলবায়ু ট্রাস্ট তহবিল (বিসিটিএফ)।

গত ২৫ মে এই এফডিআরটির মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে। ২০ মে পদ্মা ব্যাংককে পাঠানো এক চিঠিতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অর্থ পরিশোধ করা না হলে এই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সতর্ক করা হয়।

বিসিটিএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ আহমেদ গতকাল শনিবার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।’

২০১৬ সালে সরকারি সংস্থাটি বিভিন্ন সুদ হারে ৫০৮ কোটি টাকা এফডিআর রেখেছিল। কিন্তু, তারল্য সংকটের কারণে ব্যাংকটি ওই অর্থের কিছু অংশ এখনও ফেরত দিতে পারেনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, ২০১৮ সালে ফারমার্স ব্যাংকের শেয়ার কিনে পরিচালনায় আসে পাঁচটি রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এরপর এফডিআরের একটি বড় অংশ ফেরত দেওয়া হয়েছিল।

এখনও বিসিটিএফের ৭১ কোটি ৬০ লাখ টাকা এফডিআর হিসেবে রয়েছে পদ্মা ব্যাংকে। এর মধ্যে, ২৯ কোটি ১০ লাখ টাকা মেয়াদপূর্তি হওয়ায় গত ২৫ মে পরিশোধ করার কথা ছিল। গত এক বছর ধরে এফডিআরের বিপরীতে ব্যাংকটি কোনো সুদ দেয়নি সরকারি সংস্থাটিকে, যা চুক্তি ভাঙার সামিল।

আগের দুর্নীতিকে আড়াল করার জন্য এবং ব্যাংকের ভাবমূর্তি বাড়ানোর লক্ষ্যে ২০১৯ সালে ব্যাংকটির নাম করা হয় ‘পদ্মা ব্যাংক’।

পদ্মা ব্যাংকে দেওয়া চিঠিতে বিসিটিএফ জানিয়েছে, বিভিন্ন ব্যাংকে রাখা এফডিআরের সুদ থেকেই প্রতিষ্ঠানটি কর্মীদের বেতন দিয়ে থাকে। এই চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের কাছেও।

যোগাযোগ করা হলে পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. এহসান খসরু জানান, বিষয়টি সমাধানের জন্য ব্যাংকের কর্মকর্তারা আজ বিসিটিএফের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন।

তিনি এ বিষয়ে আর কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।

২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ব্যাংকটি পরিচালনার তিন বছরেরও কম সময়ের মধ্যে আর্থিক অনিয়মের জন্য আলোচনায় আসে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে দেখা গেছে, ২০১৩ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ওই ব্যাংক থেকে তিন হাজার ৫০০ কোটি টাকারও বেশি অর্থ অনিয়মের মাধ্যমে সরিয়ে নেওয়া হয়, যার বড় অংশ এখন খেলাপি।

এসব ঘটনার জের ধরে তত্কালীন বোর্ড চেয়ারম্যান ও অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মুহিউদ্দিন খান আলমগীর ও মো. মাহাবুবুল হক চিস্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এরপর ব্যক্তি ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আমানতের অর্থ তুলে নিতে শুরু করে।

অভিযুক্ত এই দুজন ২০১৭ সালের নভেম্বরে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং ২০১৮ সালে সরকার ব্যাংকটিকে পুনরুদ্ধারে তৎপর হয়।

সরকারি মালিকানাধীন ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ, সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংক ৭১৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ব্যাংকটির ৬০ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয়।

তবে এখনও নিজ পায়ে দাঁড়াতে পারেনি ব্যাংকটি।

২০২০ সালে ব্যাংকটির লোকসানের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ১৫১ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, ২০২১ সালের প্রথম তিন মাস শেষে ৩৮২ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতিতে পরেছিল ব্যাংকটি। যা এর আগের প্রান্তিকে ছিল ৩১০ কোটি টাকা।

গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল তিন হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ৬১ দশমিক ছয় শতাংশ।

২০১৯ সালে ব্যাংকটির ৭২ দশমিক তিন শতাংশ ঋণ খেলাপি ছিল। টাকার অংকে এর পরিমাণ তিন হাজার ৯৮৯ কোটি।

Comments

The Daily Star  | English

Corruption in RHD dev projects cost country up to Tk 50,835cr in 15yrs: TIB

TIB, revealing a research outcome at its Dhanmondi office today, estimated that the development projects saw 23–40 percent corruption of its work orders

2h ago