নেইমারের নৈপুণ্যে কোপা আমেরিকায় ব্রাজিলের দুর্দান্ত শুরু
দুদলের মধ্যে বিস্তর ফারাক। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ব্রাজিলের অবস্থান যেখানে তিনে, সেখানে ভেনেজুয়েলা আছে ৩০ নম্বরে। তার ওপর ভেনেজুয়েলার স্কোয়াডে প্রচণ্ড আঘাত করেছে করোনাভাইরাস। নিয়মিত খেলোয়াড়দের আটজন হয়েছেন আক্রান্ত। সম্ভাব্য সংকটজনক পরিস্থিতি এড়াতে বাড়তি ১৬ জনকে দলে যুক্ত করেছে তারা। শক্তির বিচারে প্রতিপক্ষের চেয়ে আরও দুর্বল হয়ে পড়ায় প্রত্যাশিতভাবে রক্ষণাত্মক কৌশল বেছে নেয় ভেনেজুয়েলা। তাতেও ইতিবাচক কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল ক্ষীণ।
সেই সম্ভাবনা উবে যেতে সময় লাগেনি। শুরু থেকেই আক্রমণে মনোযোগী ব্রাজিল রীতিমতো নাচিয়ে ছেড়েছে প্রতিপক্ষকে। নিজেদের মাটিতে ২০২১ কোপা আমেরিকার উদ্বোধনী ম্যাচে কাঙ্ক্ষিত জয় পেয়েছে তারা। সেটা একগাদা সুযোগ নষ্ট করার পরও। ‘এ’ গ্রুপে রাজধানী ব্রাসিলিয়ার মানে গারিঞ্চা স্টেডিয়ামে তিতের শিষ্যরা জিতেছে ৩-০ গোলে। প্রথমার্ধে মার্কুইনোসের লক্ষ্যভেদে এগিয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধে পেনাল্টি থেকে ব্যবধান বাড়ান নেইমার। শেষদিকে ভেনেজুয়েলার কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন গ্যাব্রিয়েল বারবোসা।
প্যারিস সেইন্ট জার্মেই (পিএসজি) ফরোয়ার্ড নেইমার দেখান পায়ের জাদু। নিজে গোল করার পাশাপাশি অবদান রাখেন বদলি নামা বারবোসার গোলেও। জাতীয় দলের জার্সিতে তার গোল সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৬৭। সেলেসাওদের পক্ষে তার চেয়ে বেশি গোল আছে কেবল কিংবদন্তি পেলের (৭৭)।
৪-২-৩-১ ফরমেশনে খেলতে নামা ব্রাজিল প্রথমেই বসে পড়ে চালকের আসনে। একেবারে শেষ বাঁশি বাজা পর্যন্ত তারা হাতের মুঠোয় রাখে ম্যাচ। তাদের নেওয়া ১৮ শটের সাতটি ছিল লক্ষ্যে। মুহুর্মুহু আক্রমণের বিপরীতে প্রাণপণ চেষ্টা করেও রক্ষণদেয়াল অভেদ্য রাখতে পারেনি ভেনেজুয়েলা।
ম্যাচের ১১ মিনিটের মধ্যেই প্রতিযোগিতার শিরোপাধারী ব্রাজিল এগিয়ে যেতে পারত তিন গোলে! অষ্টম মিনিটে নেইমারের ক্রসে এভারটন স্ট্রাইকার রিচার্লিসন কাছের পোস্টে করেন হেড। বল দূরের পোস্ট দিয়ে অল্পের জন্য হয় লক্ষ্যভ্রষ্ট। সেখানে পা বাড়িয়েছিলেন আরেক স্ট্রাইকার গ্যাব্রিয়েল জেসুস। কিন্তু বলের নাগাল পাননি। দশম মিনিটে আবারও রিচার্লিসনকে খুঁজে নেন নেইমার। কিন্তু রক্ষণচেরা পাসে ঠিকমতো পা ছোঁয়াতেই পারেননি তিনি। পরে কর্নারের বিনিময়ে বল বিপদমুক্ত করেন পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে আসা ভেনেজুয়েলার গোলরক্ষক জোয়েল গ্রাতেরল। পরের মিনিটে লেফট-ব্যাক রেনান লোদির ক্রসে রিয়াল মাদ্রিদ ডিফেন্ডার এদার মিলিতাওয়ের হেড লক্ষ্যে থাকেনি। যদিও ফাঁকায় থাকায় কোনো চাপ ছিল না তার ওপর।
অবশেষে ২৩তম মিনিটে গোলের দেখা পায় স্বাগতিকরা। নেইমারের কর্নারে রিচার্লিসন হেড করার পর ছয় গজের বক্সে বল পেয়ে যান মার্কুইনোস। প্রথম ছোঁয়ায় বল নিয়ন্ত্রণে নেন তিনি। এরপর সঙ্গে লেগে থাকা ভেনেজুয়েলার খেলোয়াড়ের পায়ের ফাঁক দিয়ে বল জালে ঠেলে দেন তিনি।
দুই মিনিট পর আবার উল্লাসে মাততে পারত ব্রাজিল। কিন্তু অফসাইডের কারণে বাতিল হয় রিচার্লিসনের গোল। ৩০তম মিনিটে মিলিতাওয়ের লম্বা করে বাড়ানো বলে পায়ের কারিকুরি দেখিয়ে শট নেন নেইমার। তা বিপাকে ফেলতে পারেনি গ্রাতেরলকে। ৩৯তম মিনিটে প্রথমবারের মতো ব্রাজিলের রক্ষণভাগের পরীক্ষা নেয় ভেনেজুয়েলা। তবে লিভারপুল গোলরক্ষক অ্যালিসন কোনো বিপদ ঘটতে দেননি।
প্রথমার্ধ যেখানে শেষ করেছিল ব্রাজিল, দ্বিতীয়ার্ধ শুরু করে ঠিক সেখান থেকে। ৫৩তম মিনিটে ফাঁকায় থাকলেও আরেকটি সুযোগ হাতছাড়া করেন সময়ের অন্যতম সেরা ফুটবলার নেইমার। তাকে অবশ্য আফসোসে পুড়তে হয়নি বেশিক্ষণ। দানিলোকে নয় মিনিট পর নিজেদের ডি-বক্সে ফাউল করেন ভেনেজুয়েলার লুইজ মার্তিনেজ। রেফারি তৎক্ষণাৎ বাজান পেনাল্টির বাঁশি। অনেকটা সময় নিয়ে স্পট-কিকে ঠাণ্ডা মাথার নিখুঁত শটে লক্ষ্যভেদ করেন নেইমার।
৮৯তম মিনিটে ব্রাজিলের বড় জয় নিশ্চিত করেন স্থানীয় ক্লাব ফ্ল্যামেঙ্গোর স্ট্রাইকার বারবোসা। বাম দিক দিয়ে আক্রমণে ওঠা নেইমারকে আটকাতে এগিয়ে যান গ্রাতেরল। তাতে গোলপোস্ট হয়ে পড়ে ফাঁকা। সুযোগ বুঝে নেইমার করেন মাপা ক্রস। বুক দিয়ে বল জালে পাঠান বারবোসা।
স্বাগতিক হিসেবে অংশ নেওয়া আগের পাঁচ কোপা আমেরিকার সবকটিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ব্রাজিল। এবারও তাদের শুরুটা হয়েছে দুর্দান্ত। শিরোপাপ্রত্যাশী অন্য দলগুলোকে যেন সূক্ষ্ম একটা বার্তা দিয়ে রাখল তারা- ‘শিরোপা ধরে রাখার যুদ্ধে পুরোপুরি তৈরি ব্রাজিল’।
Comments