শাবানা নিজেই ইন্ডাস্ট্রি, শাবানা লিজেন্ড

অভিনেত্রী শাবানা। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকাই সিনেমার জীবন্ত কিংবদন্তি অভিনেত্রী শাবানা। সিনেমাপ্রেমী মানুষদের মুখে মুখে তার নাম উচ্চারিত হয়ে আসছে বছরের পর বছর ধরে। দীর্ঘ সময় ধরে তিনি ঢাকাই সিনেমায় দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছেন।

সামাজিক সিনেমা, পোশাকি সিনেমা, রোমান্টিক সিনেমা থেকে শুরু করে সবধরনের সিনেমায় অভিনয় করে নিজের অবস্থান গড়ে তুলেছিলেন। একটা সময় নিজেকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেও জানান দিতে সক্ষম হয়েছিলেন।

বিশেষ করে সমাজের বাস্তব জীবনের গল্প নিয়ে নির্মিত সিনেমায় অভিনয় করে কোটি কোটি বাঙালির মনে গেঁথে যান শাবানা।

অথচ সিনেমায় যাত্রা শুরু করেছিলেন শিশু শিল্পী হিসেবে। রত্না থেকে শাবানা হয়ে যান চকোরী সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে। শাবানা নামটি দিয়েছিলেন প্রখ্যাত পরিচালক এহতেশাম।

তিন শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করা শিল্পী শাবানার জন্মদিন আজ মঙ্গলবার। ১৯৫২ সালের ১৫ জুন ঢাকার গেন্ডারিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

মধু মিলন, অবুঝ মন, ছন্দ হারিয়ে গেল, মাটির ঘর, সমাধান, ঝড়ের পাখি, স্বীকৃতি, ছুটির ঘণ্টা, দুই পয়সার আলতা, ভাত দে, লাল কাজল, রজনীগন্ধা, নালিশ, রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত- এরকম অসংখ্য দর্শকনন্দিত সিনেমায় অভিনয় করেছেন শাবানা।

অভিনয় ক্যারিয়ারে দশবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

শাবানাকে নিয়ে সহশিল্পীরা স্মৃতিচারণ করেছেন দ্য ডেইলি স্টারের কাছে।

নায়ক সোহেল রানা। ছবি: সংগৃহীত

সোহেল রানা: শাবানার সঙ্গে তুলনার কেউ নেই

আমার প্রথম প্রযোজিত সিনেমা ওরা ১১ জন-এ শাবানা অভিনয় করেছিলেন। আবার আমরা একসঙ্গে অনেক সিনেমা করেছি। অনেক হিট সিনেমা আছে আমাদের। শিল্পী হিসেবে তিনি অসাধারণ।

একজন নামি তারকা হিসেবে সেটে এসে কোনোদিনও অহংকার করতে দেখিনি। সময়মতো সেটে আসার অন্যতম উদাহরণ তিনি। সেটে কোনো টি-বয়ও বলতে পারবেন না, শাবানা কারও সঙ্গে অহংকার দেখিয়েছেন কখনো।

এমনই গুণবতী শাবানা। তার মধ্যে বেশি ছিল সরলতা। এজন্যই বোধহয় অনেককে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছিলেন। যার জন্য মানুষ আজও তাকে মনে রেখেছে।

বর্ষার ভরা নদী যেমন, শাবানা তেমনই। মা বলি, বোন বলি, ভাবী বলি- এসব চরিত্রে শাবানা নিজেকে মানিয়ে নিতেন সহজেই। আমি মনে করি শাবানার মতো স্যাক্রিফাইসিং চরিত্রে এত বেশি অভিনয় কোনো শিল্পী করেননি। স্যাক্রিফাইসিং চরিত্রে অভিনয় করেই তিনি বাঙালির মনে বেশি করে জায়গা করে নিয়েছেন।

বাঙালির বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি হলেন শাবানা। বাঙালি জীবনে যা ঘটে সেসব চরিত্র তিনি সুন্দর করে সিনেমায় ফুটিয়ে তুলেছেন।

শাবানার সঙ্গে তুলনার কেউ নেই। একজন বাঙালি মেয়ে বলতে যা বোঝায় তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ শাবানা।

জন্মদিনে শাবানার জন্য কেবলই শুভকামনা।

নায়ক উজ্জল। ছবি: স্টার

উজ্জল: শাবানা হলেন আইকনিক ফিগার

শুধু বাংলাদেশে নয়, এই উপমহাদেশের একজন জনপ্রিয় নায়িকা শাবানা। সিনেমায় প্রতিভা ও ভাগ্য দুটিই লাগে। ভাগ্যকে গড়তে হয় সাধনা করে। শাবানা তিলে তিলে নিজেকে গড়েছেন এবং দেশের সীমানা ছাড়িয়ে এই উপমহাদেশেও সুনাম ছড়িয়েছেন।

সত্যি কথা বলতে ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করতে হয় সাধনা দিয়ে। তা সবাই পারেন না। শাবানা পেরেছিলেন বলেই তিনি শাবানা হতে পেরেছিলেন।

পাকিস্তান আমলে তার সিনেমার দর্শক ছিলাম আমি। আবার আমার দ্বিতীয় সিনেমা সমাধান’র নায়িকা হন তিনি। যাতে আমরা দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই অভিনয় করি।

আমার প্রথম সিনেমার নায়িকা কবরী। আর দ্বিতীয় সিনেমার নায়িকা শাবানা। সমাধান’র পর শাবানার সঙ্গে অনেকগুলো সিনেমা করার সুযোগ হয়েছিল আমার। তিনি ব্যক্তিজীবনে ও পর্দার জীবনে, দুটিতেই সমানভাবে সফল।

শাবানা নিজেই ইন্ডাস্ট্রি, শাবানা লিজেন্ড। আমাদের সিনেমা শিল্পে এখন কিংবা আগামীতে কোনো ফিমেল শিল্পী যদি কাউকে ফলো করতে চান, তাহলে শাবানাকে করতে পারেন। শাবানা হলেন আইকনিক ফিগার।

তার সঙ্গে করা কিছু সিনেমার খুবই জনপ্রিয় কিছু গান আছে। অনুভব সিনেমার একটি গানের কথা মনে পড়ছে। গানটিকে ঘিরে কত স্মৃতি আমাদের। গানটি হলো- যদি সুন্দর একটা মুখ পাইতাম, সদরঘাটের পানের খিলি তারে বানাই খাওয়াইতাম।

রোজিনা, ফিরে দেখা,
রোজিনা। ছবি: সংগৃহীত

রোজিনা: গুণী শিল্পীর বাইরেও তিনি গুণী মানুষ

সিনেমায় আসার আগে শাবানা আপার সিনেমা দেখেছি অনেক। তার ভক্ত ছিলাম ভীষণ। তারপর একসময় আমিও সিনেমায় কাজ শুরু করি। তার সঙ্গে প্রথম অভিনয় করি আয়না ছবিতে। এরপর একসঙ্গে অনেক সিনেমা করেছি।

শাবানা আপার সঙ্গে আমার সবই সুখের স্মৃতি। তার মতো শিল্পীর সঙ্গে কাজ করাটা ছিল আমার জন্য অনেক বড় ব্যাপার। তবে, তার সঙ্গে কোনো মন্দ স্মৃতি নেই। সবই ভালো লাগার ও আনন্দের স্মৃতি।

একজন সহশিল্পী হিসেবে খুব সম্মান দেখাতেন। যার যতটুকু প্রাপ্য সেই সম্মানটুকু দেওয়ার শিল্পী হচ্ছেন তিনি। আসলে শিল্পী হিসেবে তাকে নিয়ে মূল্যায়ন করা কঠিন।

ব্যক্তি মানুষ হিসেবে বলব- শাবানা আপা একজন মিশুক টাইপের মানুষ ছিলেন সবসময়। শুটিং শেষ করে তার সঙ্গে মেশার সুযোগ হতো। আপন করে নেওয়ার বড় একটি গুণ রয়েছে তার। কাউকে ছোট করতে দেখিনি কখনো।

শাবানা আপার নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে হওয়া সিনেমায়ও অভিনয় করেছি। তাকে সারাজীবন আপা সম্বোধন করেছি। এখনো তাই করি। গুণী শিল্পীর বাইরেও তিনি গুণী মানুষ।

নায়ক উজ্জল প্রযোজিত নালিশ সিনেমার অনেক স্মৃতি মনে পড়ছে। শুটিংয়ের ফাঁকে অনেক সুন্দর সুন্দর কথা বলতেন। মনেই হতো না আমি তার জুনিয়র। মনেই হতো না তিনি এতবড় সুপারস্টার। মনটা ছিল বেশ বড়।

তার মধ্যে সবচেয়ে বড় বিষয় যা কাজ করেছে, তা হলো পেশাদারিত্ব। অভিনয় ছিল তার ধ্যান-জ্ঞান। অভিনয় পেশাটাকে বেশি ভালোবাসতেন বলেই তিনি এতবড় শিল্পী হতে পেরেছিলেন। যার ফল তিনি পেয়েছেন।

এজন্য এখন সিনেমা থেকে দূরে থাকলেও শাবানা আপার নামটি উচ্চারিত হয় বেশ গৌরবের সঙ্গে। তার জন্মদিনে কেবল দোয়া এবং ভালোবাসা।

নায়ক ফেরদৌস। ছবি: স্টার ফাইল ছবি

ফেরদৌস: তার জনপ্রিয়তা দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বহুদূরে

শাবানা আপা আমাদের দেশের সত্যিকারের লিজেন্ড। তার তুলনা তিনি নিজেই। শিল্পী কাকে বলে এটা শাবানা আপাকে দেখেই অনুভব করতে পারি। তার জনপ্রিয়তা দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বহুদূরে।

এরকম বড় মাপের শিল্পীর সঙ্গে কাজ করার সুযোগ আমার হয়েছিল। যার জন্য অনেক স্মৃতি আছে আমার। আমি অনেক কিছু শিখেছি তার কাছ থেকে। যা আজও মেনে চলার চেষ্টা করি।

শাবানা আপা বড় মাপের শিল্পী আমরা সবাই জানি। কিন্তু মানুষ হিসেবেও তিনি অনেক বড় মাপের, তা আমরা যারা মিশেছি, তারা বেশি জানি।

তার মতো শিল্পী সচরাচর আসে না। অনেকদিন পর পর আসে। তার মতো শিল্পীর সঙ্গে কাজ করতে পারা আমার অভিনয় জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে।

শাবানা আপার জন্য মন থেকে দোয়া করি। তার জীবন আরও সুন্দর হোক।

Comments

The Daily Star  | English
Khaleda Zia calls for unity

‘Seize the moment to anchor democracy’

Urging people to remain united, BNP Chairperson Khaleda Zia has said the country must quickly seize the opportunity to institutionalise the democratic system.

6h ago