হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের শতবর্ষ পালনের সামাজিক তাৎপর্য

হেমন্ত মুখোপাধ্যায়

আমাদের সমাজে নানা পরিসরে যারা অবদান রেখে গেছেন, তাদের জন্মশতবর্ষ পালন একটা সামাজিক রীতিতে পর্যবসিত হয়েছে। রাজনীতিবিদ, সমাজকর্মী, শিক্ষাব্রতী, কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, গায়ক, নায়ক—সবারই শতবর্ষ পালনের ভেতর দিয়ে সংশ্লিষ্ট মানুষটির সামাজিক ভূমিকাকে আমরা স্মরণ করি। তার রেখে যাওয়া সামাজিক অবদানকে আমরা আবারও স্মরণ করার ভিতর দিয়ে তার দেখিয়ে যাওয়া পথকে, আগামী দিনের পথ চলার ক্ষেত্রে আমরা আরও প্রাসঙ্গিক করে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি।

এই পরিপ্রেক্ষিতেই কিংবদন্তি শিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের জন্মশতবর্ষ পূর্তির মুহূর্তটি আমাদের বাঙালি সমাজের কাছে একটি বিশেষ তাৎপর্য নিয়ে এসেছে। স্বর্ণ কণ্ঠের অধিকারী ছিলেন হেমন্ত। অসামান্য সুরকার ছিলেন। সমসাময়িক শিল্পী, সুরকারদের প্রতি দায়িত্ববোধের যে পরাকাষ্ঠা তিনি তার সংগীত জীবনে রেখে গেছেন, তা তার মৃত্যুর এতদিন পরেও সহকর্মী, সহযোদ্ধাদের প্রতি দায়িত্ববোধের একটি আদর্শ মাপকাঠি হিসেবে দেখা হয়।

এটাই কি সব? এটাই কি কেবল হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের জন্ম শতবর্ষে তাকে ঘিরে আমাদের ভালোবাসা, শ্রদ্ধার একমাত্র উপজীব্য? সুধা কণ্ঠের অধিকারী তো বহু শিল্পীই হন, কিন্তু কজন হেমন্তের মতো সমাজমনস্ক হন? কজন হেমন্তের মতো পারিপার্শ্বিকতার প্রতি দায়বদ্ধ হন? কজন হেমন্তের মতো অগ্রজের প্রতি শ্রদ্ধাবান আর অনুজের প্রতি পরম স্নেহময় দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে, সেই অনুজের পেশাজীবন গড়ে তোলবার ক্ষেত্রে অভিভাবকের ভূমিকা পালন করেন?

বস্তুত বাংলা বিনোদন জগতে সরাসরি রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে না এসে প্রগতিশীল, ধর্ম নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গির ভেতর দিয়ে একটা ক্রান্তিকারী ভূমিকা রেখে, শিল্পী জীবনের যাবতীয় গ্লামারকে একেবারেই পাত্তা না দিয়ে, গভীর সমাজমনস্কতার যে পরিচয় সামান্য কয়েকজন রেখেছিলেন তারা হলেন কানন দেবী, সুচিত্রা মিত্র এবং হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। বিনোদন জগতে উৎপল দত্ত, শোভা সেন, অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ কালজয়ী শিল্পীরা যে গভীর দায়িত্ববোধ, সমাজমনস্কতার পরিচয় রেখেছিলেন, তার পিছনে কাজ করেছিল তাদের প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক সংযোগ, বোধ, বিশ্বাস এবং মননশীলতা।

প্রত্যক্ষভাবে প্রগতিশীল রাজনৈতিক ভাবধারার সঙ্গে যুক্ত মানুষের কাছ থেকে যে দায়বদ্ধতা সমাজ আশা করে, সেই দায়বদ্ধতা উৎপল দত্ত, সুচিত্রা মিত্ররা চিরজীবন প্রকাশ্যে তার রাজনৈতিক আস্থা বুক বাজিয়ে বলে গেছেন। কিন্তু কানন দেবী বা হেমন্ত মুখোপাধ্যায় দুটি প্রজন্মের দুটি ব্যক্তিত্ব। কানন দেবী, যিনি সরাসরি রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রায় আসেননি বলা যায়, অপরজন হেমন্ত, তার স্কুল জীবনের বন্ধু কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের সাহচর্যে, নিজের শিল্পী জীবনকে বিকশিত করবার প্রথম লগ্ন থেকেই মানুষের দুঃখ, মানুষের যন্ত্রণা, মানুষের কান্নাকে হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করবার চেষ্টা করেছিলেন।

পরবর্তী সময়ে এই সমাজ মনস্কতার দিকটি, যেদিক নিয়ে হেমন্ত তার মাত্র ৬৯ বছরের জীবনে কখনো প্রচার মাধ্যমের সামনে কোনো রকমভাবেই ঢোল করতাল নিয়ে বসেননি, সেই দিকটির বিকাশে তার বন্ধু সলিল চৌধুরীর একটি উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল। এই পর্বেই গণনাট্য আন্দোলনের একদম প্রথম যুগের সৈনিক কলিম শরাফীর ভূমিকা হেমন্তের জীবনে কম নয়। শিল্পী হেমন্তের কণ্ঠ মাধুর্যে আমরা মুগ্ধ মুগ্ধ। তার সুরের জাদুর পরশে আমরা মোহিত, অথচ আমরা কজন জানি, সেই হেমন্ত নিছক অর্থ উপার্জনের তাগিদে কিন্তু সুকান্তের ‘অবাক পৃথিবী’, বা ‘গাঁয়ের বঁধু’, ‘রানার’ কিংবা সত্যেন্দ্রনাথের ‘পালকির গান’ গাননি।

সলিলের অনবদ্য সুরের পরশে এই গানগুলোর ভেতর দিয়ে তিনি সেই সময়ের মানুষের ক্ষুধা, তৃষ্ণা, যন্ত্রণাকে সংহত করে একটা বৃহত্তর রাজনৈতিক গণসংগ্রামের ক্ষেত্র প্রস্তুত করবার সড়ক নির্মাণ করেছিলেন।

বন্ধু কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় হেমন্তের সঙ্গে মানুষের লড়াই-সংগ্রামের যে সেতুবন্ধন ঘটিয়েছিলেন তাদের স্কুল জীবনে, সেই মানুষের কাছ থেকে কিন্তু একদিনের জন্য হেমন্ত দূরে সরে যাননি। পেশার তাগিদে বিনোদন জগতের নানা পর্যায়ে তিনি নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন। বাংলার গণ্ডিকে অতিক্রম করে মুম্বাইয়ের ফিল্মি দুনিয়াকে মুগ্ধতার আবেশ ও ভরিয়ে রেখেছিলেন। সেই আবেশের কেন্দ্রবিন্দুতে কিন্তু ছিল ‘জন্মেই দেখি ক্ষুব্ধ স্বদেশভূমি’র কান্না। সেই কান্নাকে ক্রোধে পর্যবসিত করে, শিল্পের ভেতর দিয়ে মানুষের সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার রাস্তা তৈরিতে হেমন্তের ছিল অনন্য সাধারণ ভূমিকা।

গণনাট্য আন্দোলনের প্রেক্ষাপটের ভেতর দিয়ে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির বাঁধাধরা নিয়ম নীতির ভেতরে না থেকেও তাকে এই পরিমণ্ডলের ভেতরে আনতে সব থেকে বেশি সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন কবি সুভাষ, সলিল চৌধুরী, কলিম শরাফী এবং অবশ্যই হেমন্তের চিরজীবনের অত্যন্ত বিশ্বস্ত নির্ভরযোগ্য বন্ধু সুচিত্রা মিত্র। চল্লিশ পঞ্চাশের দশকে যুদ্ধ, মন্বন্তর, দাঙ্গা, দেশভাগ বিধ্বস্ত বাংলায় হেমন্তের কণ্ঠে ‘বিদ্রোহ চারিদিকে বিদ্রোহ আজ’ যেন তাকে বাঙালি পল রবসনে ভূমিকায় উৎকীর্ণ করে দিয়েছিল।

এই সময় গণনাট্য আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের সাহচর্য, জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র, দেবব্রত বিশ্বাস যাকে হেমন্ত চিরকাল কাকা বলে ডাকতেন, কলিম শরাফী, সুচিত্রা মিত্র, সুরপতি নন্দী ভূপতি নন্দী, রেবা রায়চৌধুরী প্রমুখ, বাংলার বাইরে প্রেম ধাওয়ান, কাইফি আজমি প্রমুখের সঙ্গে সংযোগ এবং একসঙ্গে কাজ করার ভেতর দিয়ে যে সমাজ সচেতনতা, সমাজ মনস্কতা হেমন্ত মুখোপাধ্যায় দেখিয়েছিলেন, তেমনটা তার সমসাময়িক কালে কিংবা পরবর্তীকালে গ্ল্যামারের শীর্ষে থাকা একজন শিল্পীও দেখাননি। এখানেই নিহিত রয়েছে স্বর্ণ কণ্ঠের হেমন্ত, জাদুকরী সুরের স্রষ্টা হেমন্তকে অতিক্রম করে ‘মানুষের হেমন্তে’র জন্ম শতবর্ষ পালনের প্রকৃত তাৎপর্য।

হেমন্তের জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর পর তাকে নিয়ে অসংখ্য আলোচনা হয়েছে। তার গাঁয়ের বধূ, রানার, পালকির গান ইত্যাদি গানগুলির প্রেক্ষাপট নিয়ম অনেকেই অনেকে আলোচনা করেছেন। সলিল চৌধুরী এই গানগুলো সুর করবার অনেক আগে, হেমন্ত সেগুলো রেকর্ড করবার অনেকই আগে, অকাল প্রয়াত বন্ধু কবি সুকান্তের সৃষ্টিকে কিভাবে গানের ভেতর দিয়ে মানুষের দরবারে হাজির করা যায় সেই গানের ভেতর দিয়ে মানুষকে কি করে সমাজ সচেতন করে তোলা যায়, সমাজমনস্ক করে তোলা যায়, সর্বোপরি সামাজিক শোষণের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক শোষণের বিরুদ্ধে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করা যায়—তা নিয়ে বন্ধু হেমন্তের সঙ্গে বহুবার বিস্তারিত আলাপ আলোচনা করেছিলেন কলিম শরাফী।

কোন কোন ক্ষেত্রে এসব আলোচনা সাক্ষী থেকেছিলেন সমরেশ চৌধুরী, যিনি পরবর্তীকালে হেমন্তের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। কবি সুভাষ, শিল্পী দেবব্রত মুখোপাধ্যায়, কলিম শরাফী—এরা তখন তাদের অকাল প্রয়াত বন্ধু, কবি সুকান্তের সৃষ্টিকে মানুষের দরবারে আরও জোরালোভাবে তুলে ধরবার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সুকান্তের কবিতাকে নিয়ে কিছু করা যায় কিনা এইসব আলাপ-আলোচনাগুলোতে হেমন্তের সঙ্গে কবি সুভাষ কলিম শরাফী, শিল্পী দেবব্রত মুখোপাধ্যায় প্রমুখের ওই গানগুলোর রেকর্ডিংয়ের অনেক আগেই বহুবার আলাপ-আলোচনা হয়েছিল। তাই একথা অত্যন্ত জোরে সঙ্গে বলতে হয় যে, নিছক রেকর্ড করার তাগিদে, কেবলমাত্র জনপ্রিয়তা অর্জনের তাগিদে, খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছাবার লক্ষ্যে, সর্বোপরি অর্থ উপার্জনের জন্যে হেমন্ত এই কালজয়ী গানগুলো রেকর্ড করেননি।

একটা গভীর সমাজ মনস্কতা, সমাজের প্রতি গভীর দায়বদ্ধতা, প্রগতিশীল চিন্তা চেতনার প্রতি শ্রদ্ধা মিশ্রিত ভালোবাসা, সর্বোপরি মানুষের প্রতি ভালোবাসা থেকেই ওই কালজয়ী কবিতাগুলোকে সলিলের কালজয়ী সুরের ভেতর দিয়ে কালের কষ্টি পাথরে খোদিত করে গেছেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়।

সমসাময়িক অনেক পেশাদার শিল্পী সলিল চৌধুরীর সুরে বা অন্যান্য প্রগতিশীল সুরকারদের সুরে প্রগতির কথা বলা অনেক গান গেয়েছেন। কিন্তু সেই সব শিল্পীদের ভেতর কতখানি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের মতো সামাজিক দায়বদ্ধতা কাজ করেছিল তা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ আছে। একটা সময় গণনাট্যের পরিমণ্ডলে থেকেছেন বলে পরবর্তীকালে সেটিকে ব্যাঙ্ক ব্যালেন্সের মতো কিন্তু কোনোদিন হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ব্যবহার করেননি।

তার ব্যক্তি জীবনে বামপন্থী চিন্তা চেতনার প্রতি একটা প্রবল পক্ষপাতিত্ব ছিল। আবার সেই পক্ষপাতিত্বের কারণে সেই সময়ের সরকার বাহাদুর বা পণ্ডিত নেহেরু তাকে যখন কোন সামাজিক দায়বদ্ধতা সূচক কাজের দায়িত্ব দিয়েছিলেন, সেই সব দায়িত্ব কিন্তু হেমন্ত একবারের জন্য এড়িয়ে যাননি। ব্যক্তিগত আলোচনা স্তরে তিনি বারবার বলতেন; গণনাট্য আন্দোলনের প্রেক্ষিত, বামপন্থী ভাবধারার প্রেক্ষিত থেকে সংগীত জগতে তার খ্যাতির শীর্ষে উপনীত হওয়ার সমস্ত খবর জানা সত্ত্বেও তারই প্রযোজিত ‘নীল আকাশের নীচে’ ছবি প্রিমিয়ার দেখতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত নেহেরু নিজ কন্যা ইন্দিরাকে নিয়ে উপস্থিত হতে দ্বিধা করেননি।

এই মানবিক মূল্যবোধের দিকটিকে শিল্পী হেমন্ত সব সময় গভীর মর্যাদার সঙ্গে রক্ষা করে গেছেন। আর সেই কারণেই তার সঙ্গে সুচিত্রা মিত্রের বন্ধুত্বের জায়গাটি এত মজবুত। অনেকেরই হয়তো জানা নেই, সুচিত্রার ব্যক্তি জীবনের চরম বিপর্যয়ের দিনগুলোতে নীরবে-নিভৃতে তাকে সব থেকে বেশি সাহায্য করেছিলেন তার বন্ধু হেমন্ত। অথচ কানন দেবীর মতোই এই সাহায্য—সহযোগিতার বিষয়টিকে হেমন্ত চিরদিন অত্যন্ত সযত্নে সচেতনভাবে পর্দার আড়ালে রেখে গেছেন।

এই মূল্যবোধের প্রশ্নেই উত্তম কুমারের শেষ জীবনের বেশ কয়েক বছর হেমন্তের সঙ্গে যথেষ্ট মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। সেই সময়কালেও কিন্তু হেমন্ত একটি দিনের জন্যও তার রাজনৈতিক মূল্যবোধ থেকে এক বিন্দু সরে আসেননি। হেমন্ত কোনো প্রোপাগান্ডায় যুক্ত ছিলেন না। নিজের রাজনৈতিক বিশ্বাসকে সেভাবে তার ঘনিষ্ঠ পরিমণ্ডলের বাইরে বুঝতেও দিতেন না। মিটিং মিছিলে তাকে প্রায় হাঁটতেই দেখা যায়নি বলা যেতে পারে, অথচ শিল্পীর অধিকার, বিশেষ করে মহিলা শিল্পীদের আর্থিক-সামাজিক নিরাপত্তা, সর্বোপরি তাদের ভবিষ্যতের আর্থিক নিরাপত্তার দিকটি নিয়ে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় যেভাবে সচেষ্ট থেকে গেছেন তার নজির বাংলা বিনোদন জগতে প্রায় নেই বললেই চলে।

ব্যক্তি জীবনের স্বচ্ছতা, সততা, নিরপেক্ষতা এবং আদর্শবোধ একজন মানুষকে কিভাবে যথার্থ সমাজমনস্ক করে তোলে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ছিলেন তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এ প্রসঙ্গে তার ব্যক্তি জীবনের দুটি ঘটনার উল্লেখ করে এই নিবন্ধের ইতি টানব। ‘অতল জলের আহ্বান’ ছবির গান রেকর্ডিং চলছে। রেকর্ডিং করছেন সুজাতা চক্রবর্তী। সেই বিখ্যাত গান, ‘ভুল সবই ভুল’। কিন্তু সুজাতার সেই ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলা হেমন্তের কিছুতেই পছন্দ হচ্ছে না। বিরক্ত হেমন্ত রেকর্ডিং স্টুডিও ছেড়ে চলে গেলেন কেয়াতলায় তার বন্ধু সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি।

তবে কোন অবস্থাতেই নিজের পছন্দ জোর করে চাপিয়ে দিয়ে সুজাতা চক্রবর্তীর রেকর্ডিং কিন্তু বন্ধ করলেন না। পরবর্তীকালে সেই গানটি বাংলা ফিল্মি গানের জগতে কি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল তা সমকালীন শ্রোতাদের মনে আছে।

অপর একটি ঘটনা। অসুস্থ উৎপলা সেনকে দেখতে তাদের ছোট্ট ফ্ল্যাটে এসেছেন সস্ত্রীক হেমন্ত। চলে যাওয়ার সময় খুব আস্তে উৎপলাকে বললেন, পরে তোর বালিশের নিচটা একটু দেখিস।

চলে যাওয়ার পর উৎপলা দেখেন একটি খামে ২০ হাজার টাকা রেখে গেছেন তার হেমন্তদা। আশির দশকের প্রথম লগ্নে সেটা কিন্তু কম টাকা নয়। এই ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য বোধই হেমন্তের সমাজমনস্কতার ভিত্তি নির্মাণের উৎস স্থল। আর সেই উৎস নির্মাণে সবথেকে বড় ভূমিকা নিয়েছিল বামপন্থী আদর্শ ও মূল্যবোধের প্রতি কৈশোরের সূচনালগ্ন থেকে আমৃত্যু হেমন্তের হৃদয়ের অন্তঃস্থলের বিশ্বাস। এখানেই নিহিত রয়েছে সমাজমনস্ক, সমাজের প্রতি চরম দায়বদ্ধ, মানুষের শিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের জন্ম শতবর্ষ উদযাপনের সার্থকতা। শতবর্ষের স্মরণের বালুকা বেলায় হেমন্তের চরণচিহ্ন কখনোই মুছে যাবে না।

 

গৌতম রায়: ভারতীয় ইতিহাসবিদ ও রাজনীতি বিশ্লেষক

[email protected]

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

1h ago