সড়কের সৌন্দর্য রক্ষায় কাজ করছেন নারীরা
নারী কেবল ঘরের ভেতরটা পরিচ্ছন্ন রাখেন তা নয়। ঘরের বাইরে গিয়ে এখন সড়কের সৌন্দর্য বজায় রাখার কাজও করছেন নারীরা। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গোসিঙ্গা ইউনিয়নের গ্রামীণ সড়কগুলোতে গিয়ে দেখা যাবে এমনই দৃশ্য। সড়কের কাদা-মাটি, সড়কের ওপর জন্মানো ঘাস, সড়কের পাশের ঝোপ-ঝাঁড় পরিষ্কার করে চলাচল ঝুঁকি কমানো ও নিরাপত্তার কাজ করে সড়কের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করছেন একদল নারী।
মধ্যবয়সী এই নারীরা প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত গ্রামীণ জনপদের সড়ক সৌন্দর্যের কাজ করেন। দা, কোদাল ও ঝাড়ু নিয়ে গ্রামীণ সড়কে সপ্তাহে ছয় দিন কাজ করেন তারা। প্রতি ইউনিয়নে ১০ জন নারীর একটি করে দল এসব সড়কের সৌন্দর্য রক্ষার কাজ করেন।
শ্রীপুরের চাওবন গ্রামের সুরাইয়া আট হাজার টাকা মাসিক বেতনে গোসিঙ্গা ইউনিয়নে সড়ক সৌন্দর্য রক্ষার কাজ করেন। তিন হাজার টাকা তার হিসাবে সঞ্চয় রেখে বাকি পাঁচ হাজার টাকা তার হাতে দেওয়া হয়। সকাল সাতটা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত তিনি কাজ করেন।
দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'আমরা ১০ জন নারী গোসিঙ্গা ইউনিয়নের কার্পেটিং করা সড়কে সৌন্দর্যের কাজ করে থাকি। একেকদিন একেক জায়গায় কাজ করতে হয়।'
চাওবন গ্রামের মোছা. জাহানারা বলেন, 'আমরা সড়কের পাশের ড্রেন পরিষ্কার করি। সড়কে ঘাস জমে থাকলে সেগুলো তুলে ফেলি। সড়কের পাশের গর্তে পানি জমে থাকলে তা নিষ্কাশনের জন্য ছোট ছোট ড্রেন করে দিই। পথচারী ও যানবাহনের চালকদের দূর দৃষ্টি স্থাপনে ঝোঁপ ঝাড় পরিষ্কার করি।'
শ্রীপুর উপজেলা প্রকৌশলী এ জেড এম রকিবুল আহসান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের রুরাল এমপ্লয়মেন্ট রোড মেইনটেনেন্স প্রকল্পের (আরইআরএমপি) আওতায় গ্রামীণ সড়ক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা হয়।
দুঃস্থ, স্বামী পরিত্যক্তা, কর্মহীন নারীদের এ কাজের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয় বলে জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, প্রতি ইউনিয়নে ১০ জন নারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। তাদের দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে মজুরি দেওয়া হয়। মজুরি ছাড়াও হাঁস-মুরগী পালন, গরু পালন, ঘরের আঙিনায় সবজি চাষসহ প্রভৃতি বিষয়ে স্বাবলম্বী করতে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব কাজ তদারকি করেন বলে জানান তিনি।
স্বামী পরিত্যক্তা মোছা. রোকেয়া বেগম বলেন, 'রাস্তা পরিষ্কার করে যে টাকা পাই তাতে একমাত্র সন্তান ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে সুখেই জীবন যাপন করছি। আমার মেয়েকে লেখাপড়া করাতে পারছি।'
তিনি জানান, তাদের প্রকল্পের দুই বছর হয়েছে। মাসিক মজুরি থেকে তিন হাজার টাকা সঞ্চয় হচ্ছে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষে জমানো টাকা একসঙ্গে পেলে ভবিষ্যতের জন্য কিছু করা সম্ভব হবে।
কাইচ্চাবাড়ী গ্রামের আব্দুর রহমানের স্ত্রী মোছা. মিলন বলেন, 'শুধু শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহের বাকি দিন রুটিন অনুযায়ী কাজ করতে হয়। আমরা যে শুধু ঘর পরিষ্কার রাখি তা-ই নয়, সড়কের সৌন্দর্য বজায় রেখে প্রাকৃতিক পরিবেশটাকেও সুন্দর রাখি। এ কাজ করে অনেক আনন্দ পাই। যদিও কাজটি মজুরির বিনিময়ে, তারপরও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করি। এলাকার লোকজনদের থেকেও উৎসাহ পাই।'
সড়কের চলাচলকারী ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক ও চাওবন গ্রামের বাসিন্দা মজিবুর রহমান বলেন, 'গত দুই বছর ধরে এই নারীরা সড়কে কাজ করছেন। সড়কে এবং সড়কের পাশে এখন আর পানি জমে থাকে না, ঘাস হয় না। সড়ক পরিচ্ছন্নতার কারণে যানবাহন ও পথচারী চলাচলে ঝুঁকি থাকে না।'
স্থানীয় মো. আবুল কাশেম দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলেন। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রবাসের সড়কগুলো নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা পরিষ্কার রাখেন। দেশে এসে নারীদের গ্রামীণ সড়কগুলো পরিষ্কার করতে দেখছি। এতে শুধু সড়ক চলাচলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমায় না, নিরাপত্তাও নিশ্চিত করে।'
Comments