বিশাল কূটনৈতিক জয় নিয়ে দেশে ফিরছেন পুতিন: সিএনএনের বিশ্লেষণ
![](https://bangla.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/feature/images/putin_biden.jpg?itok=3korNy0u×tamp=1623940315)
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বুধবার প্রথমবারের মতো মুখোমুখি বৈঠকে বসেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বৈঠকটি চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় ধরে চলতে পারে বলে ধারণা করা হলেও দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যে আলোচনা তিন ঘণ্টায় শেষ হয়ে যায়। এর মধ্যেই পুতিন বিশাল কূটনৈতিক জয় পেয়েছেন বলে সিএনএনের এক বিশ্লেষণে দাবি করা হয়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, বিভিন্ন ইস্যুতে মতপার্থক্য উঠে এলেও তেমন বড় কিছু হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। গতকাল বৈঠক শেষে তিনি বলেন, ‘রাশিয়া নতুন করে স্নায়ু যুদ্ধ চায় না।’
অন্যদিকে, ভ্লাদিমির পুতিন জানান, বাইডেন একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ এবং তারা দুজনই ‘একই সুরে কথা বলেছেন’।
দুই পক্ষই পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আলোচনা শুরু করার বিষয়ে একমত হয়েছে বলে জানান তারা। বৈঠক শেষে দুই দেশের রাজধানীতে নিজেদের রাষ্ট্রদূতদের পুনর্বহালের ব্যাপারেও একমত হওয়ার কথা জানান তারা। যুক্তরাষ্ট্রে ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগ আসার পরে গত মার্চে পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে রাষ্ট্রদূতদের প্রত্যাহার করা হয়েছিল।
পুতিনের কূটনীতিতে পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই
এক বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে সিএনএন জানায়, বৈঠকের আগেও দুই দেশের মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনার প্রত্যাশা কমই ছিল। কূটনীতিকদের পুনর্বহাল এবং সাইবার সুরক্ষা ও পররাষ্ট্র নীতির মতো মূল বিষয় নিয়ে দুই দেশ ‘গঠনমূলক’ সংলাপে বসতে সম্মত হলেও বৈঠকে পুতিন তেমন কোনো পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেননি।
রাশিয়া ও অন্যান্য দেশে পুতিন যে এজেন্ডা নিয়ে কাজ করছেন গতকালকের বৈঠকের পরও তিনি তা চালিয়ে যাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে পুতিন জানান, বাইডেন ও তার মধ্যে ‘কোনোরকম বৈরি সম্পর্ক’ আছে বলে তিনি মনে করেন না।
রাশিয়া থেকে বিভিন্ন মার্কিন প্রতিষ্ঠানের উপর সাইবার-হামলা সম্পর্কে সিএনএনের এক প্রশ্নের জবাবে পুতিন পাল্টা রাশিয়ায় সাইবার-আক্রমণের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। তিনি দাবি করেন, রাশিয়ায় বেশিরভাগ সাইবার-আক্রমণ যুক্তরাষ্ট্র থেকেই হয়েছে।
পুতিন বলেন, ‘সাইবার সুরক্ষার বিষয়ে আমরা সম্মত হয়েছি যে আমরা এটি নিয়ে আলোচনা শুরু করব এবং আমি বিশ্বাস করি যে, এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। নিশ্চিতভাবেই, উভয় পক্ষকে এক্ষেত্রে কিছু বাধ্যবাধকতা গ্রহণ করতে হবে।’
রাশিয়ার ঘরোয়া রাজনীতি নিয়ে সমালোচনার প্রতিক্রিয়ায় পুতিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও নৈতিক অবস্থান নিয়ে পাল্টা সমালোচনা করেন। জানুয়ারির ক্যাপিটল হিল দাঙ্গা ও জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের দিকে ইঙ্গিত করেন তিনি। আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গদের ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘আপনাদের মুখ খোলার সময়ও দেওয়া হয় না, সরাসরি গুলি করে হত্যা করা হয়।’
পুতিন জানান, রাশিয়া তার অঞ্চলে ক্যাপিটল হিল দাঙ্গা বা ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনের মতো অশান্ত পরিস্থিতি চায় না।
ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলন সম্পর্কে পুতিনের মন্তব্যকে ‘হাস্যকর’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন বাইডেন। তিনি বলেন, মানবাধিকার ‘সবসময়ই আলোচনার টেবিলে থাকবে।’
রাশিয়ার বিরোধী নেতা ও পুতিনের কট্টর সমালোচক আলেক্সি নাভালনিসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে পুলিশি ধরপাকড়ের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে রুশ প্রেসিডেন্ট ইঙ্গিত দেন যে, নাভালনি আসলে নিজেই গ্রেপ্তার হতে চেয়েছিলেন।
তিনি বলেন, ‘এই ব্যক্তি (নাভালনি) জানতেন যে, তিনি রাশিয়ার আইন ভঙ্গ করছেন। তাকে দুবার দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে... তিনি সচেতনভাবে আইনটি ভাঙতে চেয়েছিলেন। তিনি যা করতে চেয়েছিলেন ঠিক তাই করেছিলেন। সুতরাং আমরা (তার সম্পর্কে) ঠিক কী ধরনের আলোচনা করতে পারি?’
রাশিয়ায় ক্রিমিয়ার অন্তর্ভুক্তির প্রসঙ্গে পুতিন দাবি করেন, এই অঞ্চলে তার দেশের সামরিক তৎপরতা পুরোপুরি আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং আমেরিকার আগ্রাসনই মূলত ‘রাশিয়ার সীমান্তে এই সক্ষমতা বাড়ানো’র জন্য দায়ী।
ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদান নিয়ে তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে আলোচনার কিছু নেই।’
সিএনএনের বিশ্লেষকরা বলছেন, পুতিন জেনেভার বৈঠকে যা চেয়েছিলেন ঠিক তাই পেয়েছেন। তিনি এক বিশাল কূটনৈতিক জয় নিয়ে ফিরছেন। পুতিন তার দেশে এতোটাই শক্তিশালী ও সুরক্ষিত যে তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তির সঙ্গেও কোনোকিছু হারানোর ভয় না পেয়েই বৈঠকে যেতে পারেন।
বিবিসির বিশ্লেষকরা বলছেন, পুতিন একাধিকবার বোঝাতে চেয়েছেন যে রাশিয়া একটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশ- একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ, আমেরিকার তুলনায় তাদের অর্থনীতি ছোট হলেও, অন্যান্য ক্ষেত্রে রাশিয়ার যথেষ্ট গুরুত্ব থাকার কারণেই বাইডেন তার সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন।
অন্যদিকে, এ সম্মেলনের মাধ্যমে বাইডেন তার দেশের মানুষের কাছে প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে ‘আমেরিকা ফিরে এসেছে’ যার অর্থ ‘আমি ডোনাল্ড ট্রাম্প নই’।
বৈঠকে শেষে বাইডেন বলেন, ‘মানবাধিকার, সাইবার হামলাসহ যাবতীয় ইস্যুতে রাশিয়া যদি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে না যায় তাহলে যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রতিক্রিয়া জানাবে।’
তবে তিনি কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবেন, কেমন প্রতিক্রিয়া জানাবেন, সেই বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়।
Comments