২০০ মণ ধান উৎপাদন করে প্রান্তিক কৃষকের ঘরে গেছে সাড়ে ৩৭ মণ

এবারের বোরো মৌসুমে ২০০ মনেরও বেশি ধান উৎপাদন করেছেন রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার কাশিমপুরের কৃষক আলফাজ উদ্দিন। তবে, তার হিসাবে ঋণের টাকা, জমির মালিকের ভাগ ও অন্যান্য খরচ মিটিয়ে থাকবে মাত্র সাড়ে ৩৭ মণ অর্থাৎ এক পঞ্চমাংশেরও কম ধান।
ছবি: আনোয়ার আলী

এবারের বোরো মৌসুমে ২০০ মনেরও বেশি ধান উৎপাদন করেছেন রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার কাশিমপুরের কৃষক আলফাজ উদ্দিন। তবে, তার হিসাবে ঋণের টাকা, জমির মালিকের ভাগ ও অন্যান্য খরচ মিটিয়ে থাকবে মাত্র সাড়ে ৩৭ মণ অর্থাৎ এক পঞ্চমাংশেরও কম ধান।

আলফাজ উদ্দিন এ বছর ১ দশমিক ৩৪ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছিলেন। সেখানে ১ দশমিক ৭ হেক্টর জমি ছিল ইজারা নেওয়া এবং নিজের জমির পরিমাণ মাত্র শূন্য দশমিক ২৭ হেক্টর।

ফসল কাটার পর, খেতের পাশে পাকা ধানের বিশাল স্তূপ দেখিয়ে ৫০ বছরের আলফাজ উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এখান থেকে আমি পাব খুবই কম ধান। সিংহভাগ যাবে ঋণ পরিশোধে।’

উৎপাদিত ধান থেকে তিনি শ্রমিকের মজুরি, সার, বীজ ও কীটনাশকের দাম এবং জমির মালিককে দেবেন। এরপর নিজের ভাগের সাড়ে ৩৭ মণ ধান থেকে সারা বছরের খাবার ও বিক্রি করে অন্যান্য ব্যয় করবেন।

‘এখান থেকে নিজের সারা বছরের খাওয়ার জন্য কিছু রাখব, বাকিটা বিক্রি করে পরিবারের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও অন্যান্য চাষের টাকা জোগাড় করব,’ বলেন আলফাজ উদ্দিন।

‘আমাকে একটি ব্যাংক থেকে ৪০ হাজার টাকা ঋণ নিতে হয়েছিল। ধান বিক্রি করে সেই টাকাও পরিশোধ করব’, যোগ করেন তিনি।

আলফাজ আরও জানান, গত মাসে যখন তিনি ধান কাটছিলেন তখন শুকনো ধানের বাজার দর ছিল প্রতি মণ এক হাজার ৪০ টাকা এবং ভেজা ধানের দাম ছিল সাড়ে ৯০০ টাকা।

বৃহত্তর রাজশাহী বিভাগের ১৬টি জেলা নিয়ে বরেন্দ্র অঞ্চল। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার একটি বিল কাশিমপুর।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, এই এলাকায় প্রায় ৪৪ লাখ কৃষকের মধ্যে ৩৫ লাখ ৭৯  হাজার ১১৮ জন অর্থাৎ ৮১ শতাংশেরও বেশি মানুষ কৃষক হিসেবে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক পর্যায়ের।

গত মে মাসের শেষদিকে গোদাগাড়ী গিয়ে এই প্রতিবেদক কৃষকদের ফসল কাটতে ব্যস্ত থাকতে দেখেন। তাদের অনেকে দেরিতে ধান রোপণ করায় কাটছিলেনও দেরিতে। অনেকে স্থানীয়ভাবে তৈরি হার্ভেস্টার দিয়ে কাটা ও মাড়াই করে নিচ্ছিলেন।

আফজালের মতো অনেক কৃষকই তখন জানান, ফলন ভালো হলেও তারা যে পরিমাণ ধান ঘরে তুলতে পারবেন সেটা খুবই অল্প। তারা আরও জানান, এই ফসলে শুধু খেয়ে-পরে বাঁচতে পারবেন, সঞ্চয় বলতে কিছু থাকবে না।

রাজশাহীর সাবদিপুর গ্রামের কৃষক সোহেল রানারও নিজের কোনো জমি নেই। শূন্য দশমিক ৫৩ হেক্টর জমি ইজারা নিয়ে এ বছর বোরো ধান চাষ করেছিলেন। তিনিও জানিয়েছিলেন, তার ০.৪০ হেক্টর জমির ধান ঋণ, শ্রমিকের মজুরি ও পরিবহন ব্যয় এবং জমির মালিকের অংশ পরিশোধে চলে যাবে। তিনি তার মোট লিজ নেওয়া জমির এক চতুর্থাংশেরও কম ধান বাড়িতে নিতে পারবেন।

সোহেল জানিয়েছিলেন, সব খরচের পর যা থাকবে সেটা তার পরিবারের জন্য যথেষ্ট না। সারা বছরের জন্য তাকে পরবর্তী আমন আবাদের ওপর নির্ভর করতে হবে।

আরও বেশ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে একই তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের চিন্তা কতটুকু ধান ঘরে তুলতে পারবেন তাই নিয়ে। তবে সম্প্রতি খড়ের দাম বাড়ায় সেখান থেকে চাষের ক্ষতি কিছুটা পূরণের চেষ্টা করবেন।

ছোট প্রতি হাজার আটি খড়ের দাম আগে এক হাজার টাকার বেশি কখনো বিক্রি হয়নি। তবে, গত কয়েক বছর ধরে প্রতি হাজার খড়ের আটি পাঁচ থেকে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তারা।

কৃষিবিদরা জানান, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকরা যারা চাষের জন্য ঋণ করতে বাধ্য হন, তারা কখনো উৎপাদিত ধানের ২০ শতাংশের বেশি বাড়িতে নিতে পারেন না।

তারা জানান, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিরা ধানের ব্যবসায়ী, কৃষি উপকরণ বিক্রয়কারী, চালকলের মালিক এবং মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে ঋণ দিয়ে চাষাবাদ করেন এবং মৌসুম শেষে ধান দিয়ে ঋণ পরিশোধ করেন।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রায়হান হাবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮ হেক্টরের বেশি জমিতে ধান চাষ তদারকি করেন। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমাদের বেশিরভাগ কৃষক বোরো চাষের উচ্চ ব্যয় বহন করতে সক্ষম নয় বলে লোকসানের শিকার হন।’

‘তারা (ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক) ঋণ নেন এবং পরিশোধের সময়, তারা তাদের ধানের দাম বাড়ানোর জন্য কিছু সময় অপেক্ষাও করতে পারে না। কখনো কখনো তাদের ধান জমিতে থাকা অবস্থায়ই ঋণ পরিশোধ করতে হয়।’

রাজশাহীর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক সিরাজুল ইসলাম জানান, তারা জুনের শুরুতে দেখেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ ও নাটোর জেলার বরেন্দ্র অঞ্চলে প্রতি হেক্টর জমিতে গড়ে ৪ দশমিক ৪৩ টন ধানের ফলন হয়েছে।

এ বছর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চারটি জেলা থেকে ১৬ লাখ টন ধান এবং সারাদেশে মোট আড়াই কোটি টন বোরো ধান উৎপাদনের আশা করছে।

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

5h ago