যে বাড়িতে ত্ব-হা ‘আত্মগোপনে’ ছিলেন

গত ১১ জুন থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত বাল্যবন্ধু সিয়াম ইবনে শরীফের (৩১) গ্রামের বাড়িতে ‘আত্মগোপনে’ ছিলেন আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান, দুই সঙ্গী ও ভাড়া করা গাড়ির চালকসহ চার জন।​ ত্ব-হার সন্ধান পাওয়ার পর এমনটা পুলিশ জানালেও তার বন্ধুর দাবি, তার বাড়িতে ত্ব-হার অবস্থানের বিষয়ে তিনি কিছুই জানতেন না।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার ত্রিমোহনী পশ্চিম পিয়ারাপুরের এই বাড়িতে দুই সঙ্গী ও ভাড়া করা গাড়ির চালকসহ ‘আত্মগোপনে’ ছিলেন আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান। ছবি: মোস্তফা সবুজ/স্টার

গত ১১ জুন থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত বাল্যবন্ধু সিয়াম ইবনে শরীফের (৩১) গ্রামের বাড়িতে ‘আত্মগোপনে’ ছিলেন আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান, দুই সঙ্গী ও ভাড়া করা গাড়ির চালকসহ চার জন।​ ত্ব-হার সন্ধান পাওয়ার পর এমনটা পুলিশ জানালেও তার বন্ধুর দাবি, তার বাড়িতে ত্ব-হার অবস্থানের বিষয়ে তিনি কিছুই জানতেন না।

যে গাড়িতে করে ত্ব-হা এবং আরও তিন জন গাইবান্ধা সদর উপজেলার ত্রিমোহনী পশ্চিম পিয়ারাপুরের ওই বাড়িতে এসেছেন, সেটাও দেখেননি আশপাশের কেউ। তবে, সিয়ামের মা নিশাত নাহারের দাবি, ত্ব-হার অনুরোধেই তিনি তার অবস্থানের কথা কাউকে বলেননি।

ত্ব-হা ও তার সঙ্গীদের বহনকারী গাড়িটি এতদিন কোথায় ছিল? জানতে চাইলে নিশাত নাহার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সেদিন দুপুরে যে গাড়িতে তারা এখানে এসেছিল, সেটা তখনই ফিরে যায় এবং শুক্রবার আবার সেই গাড়িই এসে তাদের নিয়ে যায়।’

আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনানকে ১৮ জুন দুপুরে উদ্ধার করা হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

সিয়াম চাকরির কারণে বর্তমানে রংপুরে থাকেন। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে আজ শনিবার বিকালে বলেন, ‘ত্ব-হা নিখোঁজ হওয়ার পর আমরা স্কুলের বন্ধুরা মিলে রংপুরে মানববন্ধনও করেছি। কিন্তু, জানতাম না সে আমাদের বাড়িতেই ছিল গত আট দিন।’

‘আমি ত্ব-হার বিষয়ে মায়ের সঙ্গে ফোনেও কথা বলেছি। কিন্তু, মা আমাকে কিছু বলেননি।’

সিয়াম বলেন, ‘আমি গতকাল বাড়িতে এসে শুনি তারা চলে গেছে।’

সিয়ামের মা নিশাত নাহার (৫৮) দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, সিয়াম ও আবু ত্ব-হা রংপুরের লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজে একসঙ্গে পড়াশোনা করেছেন। রংপুরের বাসায় ত্ব-হা নিয়মিত যাওয়া-আসা করতেন।

তারা গত ছয় বছর ধরে গাইবান্ধায় আছেন। এখানেও নিয়মিত ত্ব-হার আসা-যাওয়া আছে বলে জানান সিয়ামের মা।

তবে, ত্ব-হা এবং তার সঙ্গী আবদুল মুহিত, ফিরোজ আলম ও আমির উদ্দিন প্রায় এক সপ্তাহ সিয়ামের বাড়িতে থাকার বিষয়ে কিছুই জানেন না পাশের বাড়ির লোকজন।

আবু ত্ব-হা’র বন্ধু সিয়ামের বড় চাচা বোয়ালি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ এম আবদুল মাজেদ উদ্দিন খান। ছবি: মোস্তফা সবুজ/স্টার

সিয়ামের বাড়ির পাশের বাড়িতে থাকেন তার বড় চাচা বোয়ালি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ এম আবদুল মাজেদ উদ্দিন খান, তার স্ত্রী নাজনীন চৌধুরী ও ছেলে আসিফ খান।

মাজেদ উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমি চেয়ারম্যান মানুষ, খুব বেশি পাশের বাড়িতে খোঁজ নিতে পারি না। ত্ব-হা যে এখানে গত আট দিন লোকজন নিয়ে ছিল, সেটা আমরা কেউ জানি না।’

সিয়ামের বাড়ির ১০ গজ দূরে তার ছোট চাচা সোহেল নেওয়াজ খান পরিবার নিয়ে থাকেন। তিনি এবং তার পরিবারও কিছু জানতেন না ত্ব-হার এখানে থাকার বিষয়ে।

দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, ‘আমরা কিছু জানতাম না। তবে, টিভিতে ত্ব-হার নিখোঁজ হওয়ার খবর শুনেছি। গতকাল যখন একটি সাদা গাড়িতে তারা এখান থেকে রংপুরের উদ্দেশে রওনা দেয়, তখন শুধু দেখেছি।’

নিশাত নাহারের সঙ্গে কথা বলার সময় পাশের বাড়ির এক গৃহকর্মী এসেছিলেন বাড়িতে। কিন্তু, নিশাত নাহার তাকে বাড়িতে ঢুকতে নিষেধ করেন। পরে এই রিপোর্টার ওই নারীর কাছে জানতে চান ত্ব-হাদের অবস্থানের ব্যাপারে কিছু জানতেন কিনা। নেতিবাচক উত্তর দেন তিনিও।

ত্ব-হার নিখোঁজ হওয়ার পর তোলপাড়ের কথা জেনেও নিশাত নাহার বিষয়টি কাউকে জানাননি। কেন জানাননি? জানতে চাইলে বলেন, ‘অন্তর (ত্ব-হার ডাক নাম) আমাকে কাউকে জানাতে নিষেধ করেছিল। সে যেদিন আমাদের বাড়িতে লোকজনসহ আসে, তখন আমার কাছে কয়েকদিনের জন্য আশ্রয় চায়। বলে- আমাকে কিছু লোক ফলো করছে। আমি কয়েকদিন এখানে থাকব। সেই জন্য আমি সিয়ামকেও বিষয়টি বলিনি।’

সিয়ামের ছোট চাচা সোহেল নেওয়াজ খান। ছবি: মোস্তফা সবুজ/স্টার

নিশাত নাহার বলেন, ‘যতদিন তারা এই বাড়িতে ছিল, ততদিন তারা কেউ বাড়ির বাইরে যায়নি। এমনকি তাদের কারও মোবাইল ফোনও খোলা ছিল না।’

‘তাছাড়া অন্তরের কাছে থেকে আমরা ধর্মীয় অনেক বিষয়ে শিখি,’ যোগ করেন তিনি।

কাছাকাছি কিছু দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলেও তারা এই বাড়িতে গত কয়েকদিন কারা ছিলেন বলতে পারেননি। তারা কাউকে আসতেও দেখেননি।

আপনি ছাড়া আর কেউ কি ত্ব-হা এবং তার সঙ্গী-সাথীদের দেখেছে? জানতে চাইলে সিয়ামের মা নিশাত নাহার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমি ছাড়া আর কেউ তাদের আমার বাড়িতে দেখেনি। তারা তো কাউকে দেখানোর জন্য আসেনি। তারা এখানে আত্মগোপনে এসেছিল।’

‘তাছাড়া, আমার আশপাশের বাড়িতে কিছুদিন আগে করোনা রোগী ছিল, তাই কেউ আর আমাদের বাড়িতে আসে না’ যোগ করেন তিনি।

নিশাত নাহার আরও বলেন, ‘কারও চাপে আমি এই কথা বলছি না।’

আরও পড়ুন:

আবু ত্ব-হা ও ২ সঙ্গীকে আদালতের নির্দেশে ছেড়ে দিলো পুলিশ

আবু ত্ব-হা ও ২ সঙ্গীকে আদালতে নিয়েছে পুলিশ

ব্যক্তিগত কারণে স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে ছিলেন আবু ত্ব-হা: ডিবি

আবু ত্ব-হাকে ডিবি অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়েছে

‘কারা তাকে নিয়ে গিয়েছিল’ ত্ব-হার থেকে জানার চেষ্টা করছে রংপুর পুলিশ

আবু ত্ব-হার খোঁজ মিলেছে

ত্ব-হার সন্ধান চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্ত্রী সাবিকুন্নাহারের আবেদন

আবু ত্ব-হা'র বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নিখোঁজ আবু ত্বহার সন্ধানে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চেয়ে স্ত্রীর চিঠি

Comments

The Daily Star  | English

Teesta floods bury arable land in sand, leaving farmers devastated

40 unions across 13 upazilas in Lalmonirhat, Kurigram, Rangpur, Gaibandha, and Nilphamari are part of the Teesta shoal region

1h ago