লেভানদভস্কির গোলে স্পেনের সঙ্গে পোল্যান্ডের পয়েন্ট ভাগাভাগি
আক্রমণভাগের দুই তারকা আলভারো মোরাতা ও জেরার্দ মোরেনোর বোঝাপড়ায় প্রথমার্ধে এগিয়ে গেল স্পেন। বিরতির পরপর রবার্ত লেভানদভস্কির লক্ষ্যভেদে সমতায় ফিরল পোল্যান্ড। কিছুক্ষণের ব্যবধানে স্পট-কিক মিস করে বসলেন মোরেনো। পরবর্তীতে অনেক চেষ্টা করেও কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা পেল না লুইস এনরিকের শিষ্যরা।
শনিবার রাতে নিজেদের মাঠে সেভিয়াতে ‘ই’ গ্রুপের ম্যাচটি শেষ হয়েছে ১-১ সমতায়। ২০২০ ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে এটি স্প্যানিশদের টানা দ্বিতীয় ড্র। একই ভেন্যুতে আগের ম্যাচে তারা সুইডেনের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করেছিল। আর নিজেদের প্রথম ম্যাচে স্লোভাকিয়ার কাছে ২-১ গোলে হেরেছিল পোলিশরা।
এখনও কোনো ম্যাচ জিততে না পারায় ইউরোপের সর্বোচ্চ ফুটবল আসরের পরের পর্বে যাওয়ার পথে ভীষণ কঠিন হয়ে পড়ল স্পেনের। ২ ম্যাচে ২ পয়েন্ট নিয়ে ইউরোর তিনবারের চ্যাম্পিয়নরা আছে গ্রুপের তৃতীয় স্থানে। নকআউটের আশা বাঁচিয়ে রাখা পোল্যান্ডের অর্জন সমান ম্যাচে ১ পয়েন্ট। তারা আছে তলানিতে। ৪ পয়েন্ট নিয়ে সুইডেন শীর্ষে ও ৩ পয়েন্ট নিয়ে স্লোভাকিয়া দুইয়ে রয়েছে।
বরাবরের মতো স্পেন ম্যাচ জুড়ে বল দখলে আধিপত্য করলেও গোলমুখে প্রথম শটটি নেয় পোলিশরা। চতুর্থ মিনিটে ২০ গজ দূর থেকে নেওয়া মাতেয়াস ক্লিচের শট ক্রসবারের ওপর দিয়ে চলে যায়। ছয় মিনিট পর স্প্যানিশরা ভীতি ছড়ায় প্রতিপক্ষের রক্ষণে।
বাম প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে ওঠা আরবি লাইপজিগের মিডফিল্ডার দানি ওলমোর কোণাকুণি শট সহজেই লুফে নেন ভোইচেখ স্ট্যান্সনি। দুই মিনিট পর ৩৫ গজ দূর থেকে পাউ তোরসের উচ্চাভিলাষী শটও ভাবনায় ফেলতে পারেনি পোল্যান্ডের গোলরক্ষককে।
১৯তম মিনিটে এগিয়ে যেতে পারত স্পেন। পেদ্রির কাছ থেকে বল পেয়ে গোলমুখে ফেলেন মোরাতা। পোল্যান্ডের রক্ষণভাগ তা বিপদমুক্ত করতে ব্যর্থ হলে ফাঁকায় থাকা রদ্রির সামনে আসে সুযোগ। কিন্তু ম্যানচেস্টার সিটির এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার শট নেন হাওয়ায়, বলে পা ছোঁয়াতেই পারেননি!
স্বাগতিকদের আফসোসে স্থায়ী হয়নি বেশিক্ষণ। ২৫তম মিনিটে ডি-বক্সের প্রান্ত থেকে মোরেনোর গড়ানো পাসে সঙ্গে লেগে থাকা ডিফেন্ডারকে এড়িয়ে খুব কাছ থেকে জাল খুঁজে নেন মোরাতা। শুরুতে অফসাইডের পতাকা তুলেছিলেন লাইন্সম্যান। পরে রেফারি ভিএআরের সাহায্য নিয়ে গোলের সিদ্ধান্ত দিলে উল্লাসে মাতে স্পেন।
সাম্প্রতিক সময়ে গোলের দেখা না পাওয়া নিয়ে চাপে ছিলেন মোরাতা। একাদশে তার জায়গা নিয়ে উঠছিল প্রশ্ন। তারপরও এই ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে এনরিকে তাকে খেলানোর নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন। আস্থার প্রতিদান দিয়ে গোল উদযাপনের সময় কোচের সঙ্গে আলিঙ্গন করেন জুভেন্টাসের ফরোয়ার্ড মোরাতা।
৩৪তম মিনিটে বিপজ্জনক জায়গা থেকে ভিয়ারিয়ালের স্ট্রাইকার মোরেনোর ফ্রি-কিক লক্ষ্যে থাকেনি। পরের মিনিটে পাল্টা-আক্রমণে লেভানদভস্কির ক্রসে ক্যারল সুইডারেস্কির ভলি ঠিকানা খুঁজে পায়নি। অথচ হেড করার মতো উচ্চতায় ছিল বল।
৪৩তম মিনিটে সমতায় ফেরার খুব কাছে পৌঁছে গিয়েছিল পোল্যান্ড। আলবার কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে কামিল জোজিয়াক বাড়ান সুইডারেস্কিকে। তার বাঁকানো শট বাধা পায় পোস্টে। এরপর আলগা বলে লেভানদভস্কির প্রচেষ্টা অসাধারণ দক্ষতায় রুখে দেন গোলরক্ষক উনাই সিমোন।
বিরতির ঠিক আগে মোরেনো ব্যবধান দ্বিগুণ করার সুযোগ হাতছাড়া করেন। বার্সেলোনার ডিফেন্ডার আলবার ক্রসে ছয় গজের বক্সের ভেতর থেকে তার বাঁ পায়ের শট বাইরের দিকের জালে লাগে।
দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়িয়ে ৫৪তম মিনিটে সমতায় ফেরে পোল্যান্ড। জোজিয়াকের অসাধারণ ক্রসে হাওয়ায় ভেসে হেড করেন বায়ার্ন মিউনিখের ফরোয়ার্ড লেভানদভস্কি। চার মিনিট পরই ফের পিছিয়ে পড়তে পারত তারা। কিন্তু ভিএআরের সহায়তায় পাওয়া পেনাল্টি পোস্টে লাগান মোরেনো। ফিরতি শটে মোরাতা পারেননি ফাঁকা জালে বল পাঠাতে।
বাকিটা সময় রক্ষণ জমাট রেখে খেলে পোলিশরা। তাদের প্রাচীর ভাঙার বেশ কিছু সুযোগ পেলেও কাজে লাগাতে পারেনি স্বাগতিকরা। ৬৫তম মিনিটে দুরূহ কোণ থেকে মোরাতার শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান স্ট্যান্সনি। ৭৩তম মিনিটে ডি-বক্সে ফাঁকায় থাকলেও বদলি ফেরান তোরেসের হেড হয় লক্ষ্যভ্রষ্ট।
৮০তম মিনিটে রদ্রির শট সোজা গিয়ে জমা পড়ে পোলিশ গোলরক্ষকের গ্লাভসে। তিন মিনিট পর আবারও দলকে বাঁচান তিনি। পাবলো সারাবিয়ার নিজে শট না নিয়ে গোলমুখে পাস দেন মোরাতাকে। তার শট এগিয়ে এসে রুখে দেন স্ট্যান্সনি। আলগা বলে তোরেসের শট বাইরে চলে যায়।
আগামী বুধবার একই ভেন্যুতে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে স্লোভাকিয়ার মুখোমুখি হবে এনরিকের দল। একই সময়ে রাশিয়ার মাটিতে সুইডেনকে মোকাবিলা করবে পোল্যান্ড।
Comments