গর্ভেই সন্তানকে হারালেন ভারতে পাচার হওয়া তরুণী
ভারতে পাচার হওয়ার পর যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করতে বাধ্য হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই ১৮ বছরের সানিয়া (ছদ্মনাম) বুঝতে পারেন, তিনি অন্তঃসত্ত্বা। কিন্তু, এরপরও তার ওপর নিপীড়ন বন্ধ রাখেনি পাচারকারীরা।
সৌভাগ্যবশত, গত ২ মে ব্যাঙ্গালুরুর একটি ম্যাসাজ পার্লারের জানালা ভেঙে পালাতে সক্ষম হন তিনি। এরপর ট্রেনে কলকাতা হয়ে ৬ মে যশোর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসেন।
বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অন্য নারীদের মতোই ফাঁদে পড়েছিলেন সানিয়া। পাঁচারকারীরা তাকে ভারতে ভালো চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়েছিল। কিন্তু, সেখানে যাওয়ার পর বেঙ্গালুরু ও চেন্নাইয়ে বিভিন্ন হোটেলে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করতে বাধ্য করা হয় তাকে।
দেশে ফিরে ঢাকায় নিজ বাড়িতে পৌঁছার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন সানিয়া। এরপর তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা বলেন, তার গর্ভের সন্তান আর বেঁচে নেই। একটি অস্ত্রোপচারের দরকার হবে তার।
সানিয়ার বড় বোন ও খালাকেও গত বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে ভারতে পাচার করেন নদী আক্তার (৩১) এবং রিফাদুল ইসলাম হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় (২৬)। তবে পাচার হওয়া এই দুজন এখন কোথায় আছেন তা জানা যায়নি।
এখন পর্যন্ত সানিয়াসহ পাঁচ জন পাচারকারী চক্রের কবল থেকে পালিয়ে দেশে ফিরতে ফিরেছেন। তাদের সবার বয়স ১৮ থেকে ২৭ বছরের মধ্যে।
গত শনিবার নদী ও হৃদয়সহ ২২ জনের বিরুদ্ধে হাতিরঝিল থানায় মানবপাচার আইনে মামলা করেন সানিয়া। একইদিনে এবং একই থানায় হৃদয়সহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন পালিয়ে আসা আরেক তরুণী। এর আগে পাচার হওয়া আরও দুই তরুণী ওই থানায় পৃথক মামলা করেন।
মামলার এজাহারে সানিয়া বলেন, তিনি তার মা, সৎ বাবা এবং বোনদের সঙ্গে রাজধানীতে থাকতেন। সৎ বাবাই তাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন। তার ২০ বছর বয়সী বড় বোন রিতা (ছদ্মনাম) হাইস্কুলেই পড়াশোনা বাদ দিয়ে দিয়েছিলেন। মরিয়া হয়ে চাকরি খুঁজছিলেন তিনি। এ সময় ফেসবুকে নদীর সঙ্গে পরিচয় হয় তার। নদী তাকে মাসিক ৩০ হাজার টাকা বেতনে বেঙ্গালুরুতে বিউটি পার্লারে কাজ দেওয়ার আশ্বাস দেন।
এরপর গত বছরের ২০ নভেম্বর যশোরের উদ্দেশে বাড়ি ছাড়েন রিতা।
কিছুদিন পর নদী রিতাদের বাড়িতে গিয়ে জানান, রিতা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাকে একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু, তার দেখাশোনা করার কেউ নেই। সানিয়াকেও বেঙ্গালুরুতে গিয়ে পার্লারে কাজ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
কিন্তু, সানিয়ার মা তাকে একা যেতে দিতে রাজি না হচ্ছিলেন না। সানিয়ার সঙ্গে তার খালা মারিনাকেও (ছদ্মনাম) নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।
২০২০ সালের ১৬ ডিসেম্বর নদী তাদের দুজনকে বাসে করে বেনাপোল নিয়ে যান। তারপর তাদের কলকাতা নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে ট্রেনে করে নিয়ে যাওয়া হয় ব্যাঙ্গালুরুতে। সেখানে তাসলিমা নামের একজনের বাড়িতে রাতে ঘুমান তারা। এর একদিন পর সানিয়াকে ওই শহরের একটি হোটেলে এবং মারিনাকে কেরালার একটি হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। দুজনকেই ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়ন করা হয়।
তিন দিন পর সানিয়াকে আবার তাসলিমার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে বড় বোন রিতার সঙ্গে দেখা হয় তার। ততক্ষণে তারা বুঝে গেছেন যে, তারা পাচারকারীর কবলে পড়েছেন।
রিতা তখন মুক্তি চাইলে হৃদয়সহ চক্রের অন্য সদস্যরা ওই বাড়িতে গিয়ে তার ওপর নির্যাতন চালান। এরপর সানিয়াকে আনন্দপুরা সার্কেলে নিয়ে যান হৃদয়। সেখানে খালা মারিনাসহ আরও তিন তরুণীর সঙ্গে দেখা হয় তার। সেখান থেকে পালিয়ে আসার আগ পর্যন্ত তাকে ব্যাঙ্গালুরু ও চেন্নাইয়ের বিভিন্ন হোটেল ও ম্যাসাজ পার্লারে পাঠাতো পাচারকারী চক্রের সদস্যরা।
নদীকে খুঁজছে পুলিশ
গত কয়েক সপ্তাহে দায়ের হওয়া পাচারের পাঁচটি মামলার সবগুলোতেই অভিযুক্ত নদী। পুলিশ জানিয়েছে, তিনি চারটি ভাষায় কথা বলতে পারেন। বাংলাদেশ থেকে নারী পাচারের কাজে তাকে ব্যবহার করে পাচারকারীরা।
(সংক্ষেপিত)
ইংরেজিতে পুরো প্রতিবেদনটি পড়তে ক্লিক করুন Trafficking victim lost her baby in the womb
আরও পড়ুন:
Comments