ধরলার ভাঙনে হারিয়ে যাচ্ছে হলোখানা ইউনিয়ন
ধরলা নদীর ভাঙন বসতভিটা থেকে মাত্র দুই মিটার দূরে। কৃষক আজিজার রহমান (৬০) তবুও বাড়ি-ঘর সরিয়ে নিরাপদে নিচ্ছেন না। ভাঙন আতঙ্ক সত্ত্বেও পরিবার-পরিজন নিয়ে এখনো ঘরেই বসবাস করছেন তিনি। এর আগে, ১৫ বার বসতভিটা হারিয়েছেন ধরলার ভাঙনে। ভাঙনে হারিয়েছেন ১৩ বিঘা আবাদি জমি।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের সারডোব গ্রামের কৃষক আজিজার রহমানের মতোই কবিল উদ্দিন (৫৫) ও অখিল উদ্দিন (৫২) পরিবার-পরিজন নিয়ে ভাঙন আতঙ্কে নদীর পাড়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। যে কোনো সময় তাদের বসতভিটা নদীগর্ভে চলে যেতে পারে। কিন্তু, বাড়ি-ঘর সরিয়ে নেওয়ার আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় তারা অসহায় হয়ে পরেছেন।
হলোখানা ইউনিয়নের এমন অসংখ্য পরিবার এখন ভাঙন আতঙ্কে নদীপাড়ে বসবাস করছেন। এই ইউনিয়নে ধরলা নদীর ভাঙনে প্রতিদিন নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে বসতভিটা, আবাদি ও জমের বাগান। নদীপাড়ের সবকিছু হারিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন রাস্তার ওপর এবং অন্যের জমিতে।
কবিল উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তারা প্রতিবছর আয় করে টাকা জমান এবং তা নদী ভাঙনের কবল থেকে ঘর-বাড়ি সরাতে ব্যয় করেন। এ কারণে তারা আর্থিক দৈন্যতা থেকে বের হতে পারছেন না। ধরলার ভাঙনে তারা সব হারিয়ে ফেললেও সরকারিভাবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
কৃষক আব্দুল গনি (৬২) জানান, গত কয়েকদিন ধরলার ভাঙনে তিনি বসতভিটা ও তিন বিঘা আবাদি জমি হারিয়েছেন। এখন পরিবার পরিজন নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন সরকারি রাস্তার ওপর। গ্রামের অনেক পরিবার সবকিছু হারিয়ে গ্রাম ছাড়া হয়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। ধরলা ধীরে ধীরে হলোখানা ইউনিয়নকে গিলে খাচ্ছে।
হলোখানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওমর ফারুখ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গত দুই সপ্তাহে ধরলান ভাঙনে ইউনিয়নের অর্ধ শতাধিক পরিবার বসতভিটা ও আবাদি জমি হারিয়ে সরকারি রাস্তা ও অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়েছে। ভাঙন হুমকিতে আছে শতাধিক বসতভিটা ও কয়েকশ বিঘা আবাদি জমিসহ নানা স্থাপনা। প্রতিবছরই ধরলা নদীর ভাঙনে ইউনিয়নের মানচিত্র থেকে কোনো না কোনো এলাকা হারিয়ে যাচ্ছে। এভাবে চললে একসময় হলোখানা ইউনিয়নটি চলে যাবে ধরলার উদরে। পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি প্রকল্প গ্রহণ করলেও এখনো কাজই শুরু করেনি।’
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ওমর ফারুক মো. মোক্তার হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘হলোখানা ইউনিয়নে ধরলা নদীর ভাঙন ঠেকাতে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮০০ মিটার তীর সংরক্ষণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। আপাতত জিও-ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানো হবে। বর্ষার পরে শুষ্ক মৌসুমে সিসি ব্লক তৈরি করে স্থায়ীভাবে তীর সংরক্ষণের কাজ করা হবে।’
Comments