হাতীবান্ধা ডাকবাংলো প্রাঙ্গণে পতাকা উত্তোলনকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম

১৯৭১ সালের ২৩ জুন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে লালমনিরহাট-বুড়িমারী রেলরুটে ভোটমারী ভাকারী রেলব্রিজ ধ্বংসের দায়িত্ব দেওয়া হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার নজরুল ইসলামকে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার সীতলকুচি থেকে নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে ২৪-২৫ জনের একদল মুক্তিযোদ্ধা সফলভাবে এই অভিযান পরিচালনা করেন। তারা বোমা দিয়ে রেলসেতুটি ধ্বংস করেন। এতে হাতীবান্ধা ও পাটগ্রামে পাকিস্তান বাহিনীর যোগাযোগ ব্যাহত হয়েছিল। এটি ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের সময় আরও অনেক অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন এবং সাফল্য নজরুল ইসলাম।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার নজরুল ইসলাম। ছবি: এস দিলীপ রায়

১৯৭১ সালের ২৩ জুন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে লালমনিরহাট-বুড়িমারী রেলরুটে ভোটমারী ভাকারী রেলব্রিজ ধ্বংসের দায়িত্ব দেওয়া হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার নজরুল ইসলামকে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার সীতলকুচি থেকে নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে ২৪-২৫ জনের একদল মুক্তিযোদ্ধা সফলভাবে এই অভিযান পরিচালনা করেন। তারা বোমা দিয়ে রেলসেতুটি ধ্বংস করেন। এতে হাতীবান্ধা ও পাটগ্রামে পাকিস্তান বাহিনীর যোগাযোগ ব্যাহত হয়েছিল। এটি ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের সময় আরও অনেক অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন এবং সাফল্য নজরুল ইসলাম।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমি মুক্তিযুদ্ধের সময় কোচবিহার শহরের পাশে তোর্শা নদীর বিছানায় ভারতীয় বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে বোমা তৈরি ও বিস্ফোরণের বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম।’

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার সীমান্তবর্তী বাড়াইপাড়ার মৃত নুরুল ইসলাম ও মতিউন্নেসার পুত্র নজরুল ইসলাম (৭২)। তিনি ১৯৭১ সালে রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের যান্ত্রিক বিভাগের চূড়ান্ত বর্ষের ছাত্র ছিলেন। ১৯৭১ সালের ৯ মার্চ একাই উদ্যোগ নিয়ে হাতীবান্ধা ডাকবাংলো প্রাঙ্গনে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। তিনি স্বাধীনতাবিরোধীদের রোষানলে পড়েন। পরে ২৯ মার্চ নিজের গ্রাম থেকে পালিয়ে ভারতে চলে যান।

নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি কোচবিহারে ভারতীয় সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী বিএসএফ এবং প্রশাসনের কাছে আশ্রয় নিয়েছিলাম এবং বাংলাদেশের অবস্থা নিয়ে আমার মতামত জানিয়েছিলাম।’

তিনি জানান, হাতীবান্ধা উপজেলার আরও চার যুবক তার সঙ্গী ছিলেন। তিনি কোচবিহার জেলার অন্তর্গত সিতলকুচি এলাকায় বাংলাদেশ অফিস এবং যুব ক্যাম্পের সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া শরণার্থীদের তালিকা করে বিভিন্ন ক্যাম্পে পাঠাতেন। যুব ক্যাম্পের মাধ্যমে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণে যুবকদের নিয়োগ করেছিলেন এবং যুবসমাজকে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে পাঠিয়েছিলেন।

নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি আমার দায়িত্বে এক হাজার ছয়শ যুবক নিয়োগ দিয়েছিলাম এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে পাঠিয়েছিলাম। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিতেন তারা এবং তাদের যুব ক্যাম্পে ২০-২৫ জন সাহায্যকারী ছিলেন। আমি ভারতের সিতলকুচিতে বাংলাদেশ অফিস থেকে ত্রাণ কাজের সঙ্গেও যুক্ত ছিলাম। আমি এবং আমার দলের অন্যরা শরণার্থীদের সহায়তার জন্য বাংলাদেশ এবং ভারতের বিভিন্ন দাতা এবং বিভিন্ন অঞ্চল থেকে তহবিল সংগ্রহ করেছিলাম।’

তিনি বলেন, ‘হাতীবান্ধা উপজেলার সীমান্তবর্তী দইখাওয়া হাট (বাজার)গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে তহবিল সংগ্রহ করতে।’

বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার নজরুল ইসলাম হাতীবান্ধা উপজেলা শান্তি কমিটির কার্যালয় থেকে বেশ কিছু নথি উদ্ধার করেছিলেন। যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান দখলদার বাহিনীকে সাহায্য করেছিল বলে তিনি চিহ্নিত করেন।

তিনি বলেন, ‘আমার দুঃখ হলো- আমি সরকারি কর্মসূচির জন্য আমন্ত্রণ পাই না। যদিও আমি প্রথম ব্যক্তি যিনি হাতীবান্ধা ডাকবাংলো প্রাঙ্গণে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছিলাম।’

মুক্তিযুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন বিএডিসিতে ইঞ্জিনিয়ার এবং পরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরি পেয়েছিলেন। তিনি ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত হাতীবান্ধা উপজেলা আ. লীগের সভাপতি ছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

7h ago