রোমাঞ্চকর জয়ে টেস্টের বিশ্বসেরা নিউজিল্যান্ড
মোহাম্মদ শামির বলটা ফ্লিক করে মিড উইকেট দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে উল্লাসে মাতলেন রস টেইলর। দৌড়ে ছুটে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন অধিনায়ক কেইন উইলিয়ামস। নিউজিল্যান্ডের ড্রেসিং রুমে তখন আনন্দের ফল্গুধারা। ভারতকে হারিয়ে প্রথম বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে নিল নিউজিল্যান্ড।
বুধবার সাউদাম্পটনে ৬ষ্ঠ ও শেষ দিনে নিউজিল্যান্ড জিতেছে ৮ উইকেটে। দিনের খেলা শেষ হওয়ার তখন ৮ ওভার বাকি।
অথচ এই টেস্টের পুরো দুই দিন ভেসে গিয়েছিল বৃষ্টিতে। আরও দুদিনের অনেকটা সময়ও বাগড়া দিয়েছিল প্রতিকূল আবহাওয়া। রিজার্ভ ডের বাড়তি একদিনসহ মোট চার দিনে যা খেলা হলো তাতে ব্যাট বলের লড়াই হলো জম্পেশ। দারুণ কিছু পেস বোলিং, ব্যাটিংয়ে ছোট কিন্তু কার্যকর দৃঢ়তা, দেখার মতো ফিল্ডিং আর মনোবলের হলো চূড়ান্ত পরীক্ষা। তাতে জয়ী কেইন উইলিয়ামসনের দল। ১৪৪ বছরের টেস্ট ইতিহাসে প্রথম কোন বৈশ্বিক আসরের শিরোপা উঠল তাদের হাতে।
প্রথম ইনিংসে ভারতের ২১৭ রানের জবাবে ২৪৯ রানে গুটিয়ে ৩২ রানের লিড পেয়েছিল নিউজিল্যান্ড। দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতকে তারা আটকে দেয় মাত্র ১৭০ রানে। দিনের প্রায় ৫২ ওভার বাকি থাকতে পায় ১৩৯ রানের লক্ষ্য। তাতে তুলে নিতে এগিয়ে আসেন দলের অভিজ্ঞ দুই ব্যাটসম্যান উইলিয়ামসন আর টেইলর।
দলকে জিতিয়ে উইলিয়ামসন অপরাজিত ছিলেন ৫২ রানে, টেইলর খেলছিলেন ৪৭ রানে।
তবে নিউজিল্যান্ডের জেতার ভিত তৈরি করে দিয়েছিলেন তাদের চার পেসার। ম্যাচে সকলেরই কমবেশি বড় অবদান। দুই ইনিংস মিলিয়ে কাইল জেমিসন নিলেন ৭ উইকেট, টিম সাউদি ৫, ট্রেন্ট বোল্ট ৫ আর নেইল ওয়েগনার ৩ উইকেট। তবে দুই ইনিংসেই প্রভাব ফেলায় ম্যাচ সেরা জেমিসন।
ভারত ১৭০ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর নিউজিল্যান্ডের লক্ষ্য অনেকটা সহজ হয়ে যায়। দিনের খেলা বাকি তখনো ৫২ ওভার। তাতে নেমে ধীরস্থির শুরু আনেন দুই কিউই ওপেনার টম ল্যাথাম আর ডেভন কনওয়ে। পেসারদের প্রথম ঝাটকা পার করে দেন তারা। ১৩ ওভার কাটিয়ে দেওয়ার পর রবীচন্দ্রন অশ্বিন এসে প্রথম আঘাত হানেন।
অশ্বিনের বলে এগিয়ে এসে খেলতে গিয়ে স্টাম্পড হন ৯ রান করা ল্যাথাম। ৩৩ রানে প্রথম উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। অশ্বিন দারুণ বল করছিলেন। উইলিয়ামসনকে ফেরানোর কাছে চলে গিয়েছিলেন। রিভিউ নিয়ে বাঁচেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক। তবে রক্ষা হয়নি কনওয়ের। ভেতরে ঢোকা দারুণ এক ডেলিভারিতে কনওয়েকে ফিরিয়ে রোমাঞ্চের আভাস দিয়েছিলেন এই অফ স্পিনার।
৪৪ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারানোর পর আর পেছনে তাকায়নি কিউইরা। তৃতীয় উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৯৬ রানের জুটিতে ইতিহাস গড়েন টেইলর-উইলিয়ামসন।
মোহাম্মদ শামি, ইশান্ত শর্মা, জাসপ্রিট বুমরাহ, রবীচন্দ্রন অশ্বিন, রবীন্দ্র জাদেজা একে একে সব বোলার ব্যবহার করে আপ্রাণ চেষ্টা চালান অধিনায়ক বিরাট কোহলি। তবে ভারতের পক্ষে দেখা দেয়নি উইকেট। স্লিপে অবশ্য উইলিয়ামসন একবার সুযোগ দিয়েছিলেন। তা রাখতে পারেননি চেতশ্বর পূজারা। আরেকবার উইলিয়ামসনের ক্যাচ ফেলেন বুমরাহ। ততক্ষণে অবশ্য জেতার খুব কাছে কিউইরা।
ভারতের সর্বনাশটা অবশ্য আগেই করেছেন কিউই পেসাররা।
আগের দিনের ২ উইকেটে ৬৪ রান নিয়ে নেমে দিনের পঞ্চম ওভারেই সবচেয়ে বড় উইকেট হারায় ভারত। জেমিসনের বলে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন কোহলি। ২৯ বলে মাত্র ১৩ রান করেন প্রথম ইনিংসে দারুণ ব্যাট করা ভারত কাপ্তান।
দৃঢ়তার প্রতিচ্ছবি হয়ে টিকে থাকা পূজারাকে খানিকপর শিকার করেন জেমিসন। খোঁচা মেরে স্লিপে ধরা পড়েন ভারতের নাম্বার থ্রি। দ্রুত দুই উইকেট হারানোর পর আজিঙ্কা রাহানে- ঋষভ পান্ত জুটিতে এগুচ্ছিল ভারত। তবে সে জুটিও মাত্র ৩৭ রানের। ১৫ রান করা রাহানে কাবু বোল্টের স্যুয়িংয়ে।
পান্ত এরপর রবীন্দ্র জাদেজাকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন। ৬ ষ্ঠ উইকেটে আসে ৩৩ রান। অনেক সময় বিপদের কাণ্ডারি হলেও অশ্বিন এবার টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। এক প্রান্ত আগলে একা খেলছিলেন পান্ত। বোল্টের বলে ৪১ রান করে বড় শট খেলতে গিয়ে তিনি ক্যাচ তুলে দিলে ভারতের গতিপথ নির্ধারিত হয়ে যায়। স্যুয়িং বলের পসরা সাজানো সাউদি আগের দিন নিয়েছিলেন ভারতের প্রথম দুই উইকেট। শেষ দুই উইকেট তুলে নিতেও সময় নেননি তিনি। ভারত অলআউট হয়ে যাওয়ার পরই ম্যাচ জেতার ঘ্রাণ পেতে থাকে কিউইরা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত প্রথম ইনিংস: ২১৭
নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংস: ২৪৯
ভারত দ্বিতীয় ইনিংস: ৭৩ ওভারে ১৭০ (রোহিত ৩০, গিল ৮, পূজারা ১৫, কোহলি ১৩, রাহানে ১৫, পান্ত ৪১, জাদেজা ১৬, অশ্বিন ৭, শামি ১৩, ইশান্ত ১*, বুমরাহ ০ ; সাউদি ৪/৪৮, বোল্ট ৩/৩৯, জেমিসন ২/৩০, ওয়েগনার ১/৪৪)
নিউজিল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস: (লক্ষ্য ১৩৯) ৪৫.৫ ওভারে ১৪০/২ (ল্যাথাম ৯, কনওয়ে ১৯, উইলিয়ামসন ৫২*, টেইলর ৪৭* ; ইশান্ত ০/২১, শামি ০/৩১, বুমরাহ ০/৩৫, অশ্বিন ১/১৭, জাদেজা ০/২৫)
ফল: নিউজিল্যান্ড ৮ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: কাইল জেমিসন
Comments