৫ গোলের রেকর্ড জয়ে নকআউটে স্পেন, গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন সুইডেন
পেনাল্টি ঠেকিয়ে নায়ক বনে যাওয়া গোলরক্ষক মার্টিন ডুব্রাভকা আত্মঘাতী গোলে রূপান্তরিত হলেন খলনায়কে। তার অবিশ্বাস্য ভুলের সুবাদে পাওয়া সৌভাগ্যের ছোঁয়ার অপেক্ষাতেই যেন ছিল স্পেন! স্লোভাকিয়াকে বিধ্বস্ত করে শঙ্কা উড়িয়ে লুইস এনরিকের শিষ্যরা জায়গা করে নিল ২০২০ ইউরোর নকআউট পর্বে। আরেক ম্যাচে শেষ মুহূর্তের গোলে পোল্যান্ডকে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে শেষ ষোলোতে নাম লেখাল সুইডেন।
বুধবার রাতে নিজেদের মাঠ সেভিয়াতে ‘ই’ গ্রুপের ম্যাচে ৫-০ গোলে জিতেছে স্প্যানিশরা। ইউরোপের সর্বোচ্চ ফুটবল আসরে এটাই তাদের সবচেয়ে বড় জয়ের রেকর্ড। আগে কখনোই এই প্রতিযোগিতায় পাঁচ গোল করেনি তারা। ২০১২ ইউরোর শিরোপা জয়ের পথে লা রোহারা গ্রুপপর্বে আয়ারল্যান্ডকে ৪-০ গোলে ও ফাইনালে ইতালিকে একই ব্যবধানে হারিয়েছিল।
আগের দুই ম্যাচে দারুণ খেলেও গোলমুখে সফলতা পায়নি স্পেন। টানা ড্রয়ে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে বাদ পড়ার অনিশ্চয়তার কালো মেঘে আবৃত ছিল তারা। অবশেষে ভাগ্যদেবী তাদের দিকে মুখ তুলে তাকালেন! প্রথমার্ধে ডুব্রাভকার তালগোল পাকানোর পর ব্যবধান বাড়ান আইমেরিক লাপোর্ত। দ্বিতীয়ার্ধে স্বাগতিক দর্শকদের উল্লাসে মাতিয়ে নিশানা ভেদ করেন পাবলো সারাবিয়া ও ফেরান তোরেস। পরে স্লোভাকিয়াকে নিতে হয় আরেকটি আত্মঘাতী গোলের তিক্ত স্বাদ।
রাশিয়ার সেইন্ট পিটার্সবার্গে রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে সুইডেন জিতেছে ৩-২ গোলে। এমিল ফর্সবার্গের জোড়া লক্ষ্যভেদে পিছিয়ে পড়া পোলিশদের সমতায় ফেরান রবার্ত লেভানদভস্কি। তার পা থেকেও আসে জোড়া গোল। তবে শেষরক্ষা হয়নি। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে সুইডেনের পক্ষে জয়সূচক গোলটি করেন ভিক্টর ক্লাসন।
তিন ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থেকে গ্রুপপর্ব শেষ করেছে সুইডিশরা। ৫ পয়েন্ট নিয়ে স্পেন হয়েছে রানার্সআপ। তিনে থাকা স্লোভাকিয়ার অর্জন ৩ পয়েন্ট। তলানিতে থাকা পোল্যান্ড পেয়েছে ২ পয়েন্ট। শেষোক্ত দুদল বিদায় নিয়েছে ইউরো থেকে।
একাদশে চার পরিবর্তন নিয়ে খেলতে নেমেছিল স্প্যানিশরা। রক্ষণভাগে সেজার অ্যাজিপিলিকুয়েতা ও এরিক গার্সিয়া, মাঝমাঠে সার্জিও বুস্কেতস এবং আক্রমণভাগে সারাবিয়া কোচ এনরিকের আস্থার প্রতিদান দেন দারুণভাবে। নজরকাড়া পারফরম্যান্স উপহার দেন তরুণ মিডফিল্ডার পেদ্রিও।
বরাবরের মতো নিজেদের পায়ে বল রেখে খেলা স্পেন রীতিমতো নাচিয়ে ছাড়ে প্রতিপক্ষকে। গোলমুখে তাদের নেওয়া ১৯ শটের নয়টি ছিল লক্ষ্যে। অন্যেদিকে, স্লোভাকিয়ার তিন শটের কোনোটিই লক্ষ্যে ছিল না। ফলে গোলপোস্টের নিচে অলস সময় কাটাতে হয় স্প্যানিশ গোলরক্ষক উনাই সিমোনকে।
পঞ্চম মিনিটেই স্লোভাকিয়ার রক্ষণে হানা পড়ে। বামপ্রান্ত থেকে আলভারো মোরাতার শট রুখে দেন ডুব্রাভকা। সাত মিনিট পর আবারও তার দক্ষতায় বেঁচে যায় স্লোভাকিয়া। জ্যাকুব রোমাডা ডি-বক্সে কোকেকে ফাউল করলে ভিএআরের সহায়তায় পেনাল্টি পায় স্পেন। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে অবশ্য বিতর্কের অবকাশ আছে। তবে স্ট্রাইকার মোরাতার স্পট-কিক ডানদিকে ঝাঁপিয়ে আটকে দেন ডুব্রাভকা।
১৯তম মিনিটে পেদ্রির উঁচু করে বাড়ানো বলে সারাবিয়া পা ছোঁয়াতে পারলে এগিয়ে যেতে পারত স্পেন। পরের মিনিটে অ্যাজপিলিকুয়েতার ক্রসে পেদ্রি নিজেই হাতছাড়া করেন সুবর্ণ একটি সুযোগ। ২৪তম মিনিটে মোরাতার জোরালো শটও ফাঁকি দিতে পারেনি স্লোভাক গোলরক্ষককে।
৩০তম মিনিটে ঘটা অদ্ভুতুড়ে ঘটনায় লিড পায় স্পেন। সারাবিয়ার শট ক্রসবারে লেগে উপরে উঠে যাওয়ার পর তা বিপদমুক্ত করতে গিয়ে নিজেদের জালেই পাঠিয়ে দেন ডুব্রাভকা! ইউরোর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একই ম্যাচে পেনাল্টি সেভ ও আত্মঘাতী গোলের নজির স্থাপন করেন তিনি।
এরপর আর তিনবারের ইউরো চ্যাম্পিয়নদের থামিয়ে রাখা যায়নি। বিরতির ঠিক আগে ফরোয়ার্ড জেরার্দ মোরেনোর ক্রসে ডিফেন্ডার লাপোর্তের দুর্দান্ত হেডে পুরোপুরি চালকের আসনে বসে পড়ে তারা।
৫৬তম মিনিটে বামদিক থেকে জর্দি আলবার ক্রসে ডি-বক্সের ভেতর থেকে নিখুঁতভাবে দূরের পোস্টে বল পাঠান সারাবিয়া। এরপর মাঠে নামার ৪৪ সেকেন্ডের মধ্যে গোলদাতাদের তালিকায় নিজের নাম ওঠান ফরোয়ার্ড ফেরান। ৬৭তম মিনিটে পেদ্রির সঙ্গে বল দেওয়া-নেওয়া করে ছয় গজের বক্সের মধ্যে ফেলেন সারাবিয়া। ডান পায়ের দর্শনীয় ফ্লিকে বাকিটা সারেন ফেরান।
৭১তম মিনিটে আত্মঘাতী গোল করে বসেন স্লোভাকিয়ার জুরাজ কুচকা। ডিফেন্ডার পাউ তোরসের হেড ডুব্রাভকার হাতে লাগার পরও গোললাইনের দিকেই যাচ্ছিল। জটলার মধ্যে বল বিপদমুক্ত করতে গিয়ে নিজেদের জালে পাঠিয়ে দেন কুচকা। বাকিটা সময় স্পেন আরও কিছু সুযোগ তৈরি করলেও স্লোভাকিয়ার দুর্দশা আর বাড়েনি।
এবারের ইউরোতে আত্মঘাতী গোলের সংখ্যা বেড়ে হলো সাত। যার মধ্যে তিনটির পাশে রয়েছে গোলরক্ষকদের নাম! অথচ এই আসরের আগে কোনো গোলরক্ষকই আত্মঘাতী গোল করেননি। আরেকটি চমকপ্রদ তথ্য হলো, আগের পাঁচ ইউরোর মিলিয়ে আত্মঘাতী গোল হয়েছিল সাতটি।
Comments