জোড়া গোলে রোনালদোর বিশ্বরেকর্ড, নকআউটে ফ্রান্স ও পর্তুগাল
ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর সফল স্পট কিকে এগিয়ে যাওয়া পর্তুগাল গোল হজম করল বিতর্কিত পেনাল্টিতে। ফ্রান্সের করিম বেনজেমা ফের লক্ষ্যভেদ করায় পিছিয়েও পড়ল শিরোপাধারীরা। এরপর আরও একবার তাদের ত্রাতা হয়ে আবির্ভূত হলেন রোনালদো। আরেকটি পেনাল্টিতে তিনি ছুঁয়ে ফেললেন আন্তর্জাতিক ফুটবলে আলী দাইয়ের ১০৯ গোলের বিশ্বরেকর্ড। তার স্মরণীয় কীর্তির রাতে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে ২০২০ ইউরোর নকআউটে উঠল দুদলই।
বুধবার রাতে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে মৃত্যুকূপ খ্যাত ‘এফ’ গ্রুপের টানটান উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচটি ড্র হয়েছে ২-২ গোলে। ফ্রান্সের পক্ষে বেনজেমা ও পর্তুগালের পক্ষে রোনালদো করেন জোড়া গোল।
তিন ম্যাচে ৫ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ফ্রান্স। জার্মানি পর্তুগালের সমান ৪ পয়েন্ট পেলেও মুখোমুখি দেখায় এগিয়ে থেকে হয়েছে গ্রুপ রানার্সআপ। ছয় গ্রুপের তৃতীয় স্থান পাওয়া দলগুলোর সেরা চারটির মধ্যে থেকে শেষ ষোলোর টিকিট পেয়েছে পর্তুগাল। গতবারও একই কায়দায় তারা পাড়ি দিয়েছিল গ্রুপপর্ব। ২ পয়েন্ট পাওয়ায় বিদায় নিতে হয়েছে হাঙ্গেরিকে।
ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলানো ম্যাচে পর্তুগাল এক পর্যায়ে পড়েছিল বিদায়ের শঙ্কায়। কারণ, ২-১ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়েছিল তারা। তাছাড়া, একই সময়ে শুরু হওয়া জার্মানি ও হাঙ্গেরির মধ্যকার ম্যাচের স্কোরলাইনও প্রভাবিত করছিল ইউরোপের সর্বোচ্চ ফুটবল আসরে তাদের টিকে থাকাকে।
শুরুর দিকে বলের দখল উপভোগ করা পর্তুগাল ম্যাচের প্রথম সুযোগটি তৈরি করে। ষষ্ঠ মিনিটে রোনালদোর দুর্বল শট রুখে নিতে অবশ্য বেগ পেতে হয়নি ফ্রান্সের গোলরক্ষক হুগো লরিসকে।
১৬তম মিনিটে পর্তুগালের গোলমুখে হানা দেয় ফরাসিরা। পল পগবা উঁচু করে বাড়ানো রক্ষণচেরা বলে খুঁজে নেন কিলিয়ান এমবাপেকে। তার জোরালো শট অসাধারণ দক্ষতায় রুখে দেন রুই প্যাত্রিসিও।
তুলনামূলক ভালো ছন্দে থাকা পর্তুগাল ২৭তম মিনিটে পায় পেনাল্টি। জোয়াও মোতিনহোর ফ্রি-কিক একই সময়ে দখলে নিতে গিয়েছিলেন দানিলো পেরেইরা ও লরিস। পেরেইরা বলে হেড করার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে লরিস তা পাঞ্চ করতে গিয়ে আঘাত করে বসেন প্রতিপক্ষের মুখে। যদিও তার আগে বলে সামান্য ছোঁয়া লাগাতে পেরেছিলেন তিনি।
স্পট-কিকে কোনো ভুল করেননি পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী রোনালদো। নিখুঁত জোরালো শটে লরিসকে ফাঁকি দিয়ে বাঁ দিকের জালে বল পাঠান তিনি।
এরপর কিছু সময়ের জন্য তারকাখচিত দুদলের লড়াইয়ে সব আলো নিজের দিকে টেনে নেন স্প্যানিশ রেফারি মাতেউ লাহজ। পর্তুগিজদের বিপক্ষে তিনি যে পেনাল্টির বাঁশি বাজান, তা বেশ বিস্ময়কর! সতীর্থের লম্বা করে বাড়ানো পাসের লক্ষ্যে ছুটতে গিয়ে ডি-বক্সে নেলসন সেমেদোর আলতো ছোঁয়ায় পড়ে গিয়েছিলেন এমবাপে। পর্তুগালের খেলোয়াড়দের তীব্র প্রতিবাদে কাজ হয়নি। ভিএআরে বহাল থাকে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত।
স্ট্রাইকার বেনজেমা নিজের কাঁধে দায়িত্ব তুলে নিয়ে ১২ গজ দূর থেকে খুঁজে নেন জালের ঠিকানা। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ের ওই গোলে সমতায় ফিরে বিরতিতে যায় ফ্রান্স।
দ্বিতীয়ার্ধের দ্বিতীয় মিনিটে এগিয়ে যায় বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। পগবার থ্রু বলে নিখুঁত কোণাকুণি শটে লক্ষ্যভেদ করেন বেনজেমা। শুরুতে অফসাইডের পতাকা উঠলেও পরে ভিএআরের সিদ্ধান্তে উল্লাসে মাতেন তিনি।
৬০তম মিনিটে দলকে সমতায় ফিরিয়ে দাইয়ের পাশে বসেন রোনালদো। এবারে ৩৬ বছর বয়সী এই খেলোয়াড় নিজেই আদায় করে নিয়েছিলেন পেনাল্টি। তার ক্রস লেগেছিল জুল কুন্দের হাতে।
আট মিনিট পর গোলরক্ষক প্যাত্রিসিও জোড়া সেভে বেঁচে যায় পর্তুগাল। পগবার দূরপাল্লার শট ঝাঁপিয়ে রক্ষার পর আলগা বলে আঁতোয়ান গ্রিজমানের ফিরতি শটও ঠেকান তিনি।
বাকি অংশে ফ্রান্স বল দখলে প্রাধান্য দেখালেও জয়সূচক গোলের দেখা পায়নি। শেষদিকে অবশ্য গতিও কমে আসে খেলার। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে ব্রুনো ফার্নান্দেসের চ্যালেঞ্জে কিংসলে কোমান পড়ে গেলে পেনাল্টির আবেদন তোলে ফ্রান্স। কিন্তু ভিএআরেও তা প্রত্যাখ্যাত হয়।
আগামী রবিবার রাতে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে পর্তুগাল মোকাবিলা করবে বেলজিয়ামকে। পরের রাতে ফ্রান্স খেলবে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে।
Comments