কোভিডের সঙ্গে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা
বর্ষাকাল শুরু হওয়ার সঙ্গে এডিস মশার প্রজননের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। সারা বছরে যত জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন তার অর্ধেকের বেশি হয়েছেন এই জুন মাসে।
গতকাল ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১২ জন। এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ না নেওয়া হলে, মশাবাহিত এই রোগটি দ্রুত বেড়ে যাওয়ার আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ডেঙ্গু আরও বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়াতে পারে, কারণ দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ইতোমধ্যে বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর গতকাল পর্যন্ত ২৪৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে ১৪৭ জনই আক্রান্ত হয়েছেন জুনের প্রথম ২৩ দিনে। মোট আক্রান্তের বিবেচনায় যা ৫৯ দশমিক ৫ শতাংশ।
কীটতত্ত্ববিদ ও বাংলাদেশ প্রাণিবিজ্ঞান সমিতির সাবেক সভাপতি মনজুর চৌধুরী বলেন, এ পর্যন্ত ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে মধ্যম পর্যায়ের ডেঙ্গু সংক্রমণও মহামারি পরিস্থিতিতে ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে।
মানুষকে সচেতন করতে হবে যে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা পরিষ্কার পানিতে বংশ বিস্তার করে। সপ্তাহে অন্তত একবার জমে থাকা পানির পাত্র খালি করতে হবে, বলেন মনজুর।
তিনি বলেন, ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে জুন একটি গুরুত্বপূর্ণ মাস, কারণ এ মাস থেকেই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। যদি এভাবেই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ে, তবে তা দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়াতে পারে।
তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন ও সরকারের পাশাপাশি প্রতিটি মানুষকে এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেছেন, এ মাসে ঢাকায় মাঠ পর্যায়ে যেসব নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে তার প্রায় সবগুলোতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ এডিস মশার শূককীট ছিল। তবে সিটি করপোরেশন অভিযান চালানোয় নির্মাণাধীন ভবনগুলোতে মশার খুব বেশি লার্ভা পাওয়া যায়নি।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকাল কলেজ ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক এইচ এম নাজমুল আহসান বলেন, একজন ব্যক্তি যদি একইসঙ্গে ডেঙ্গু ও করোনায় আক্রান্ত হন, তাহলে তার অবস্থা গুরুতর হয়ে যেতে পারে। ডাক্তাররাও এ ধরনের রোগীর চিকিৎসায় সমস্যায় পড়েন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান জানিয়েছেন এপ্রিল মাস থেকে তারা সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্ত্বশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে চিঠি পাঠিয়ে অনুরোধ করেছেন যেন মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করা হয়।
যে গত বছর এডিস মশা লার্ভা পাওয়া গিয়েছিল এরকম বাড়ির মালিকদের তারা ১ হাজার ৭০০টি এসএমএস পাঠিয়ে প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করার অনুরোধ জানিয়েছেন। এর ব্যতিক্রম ঘটলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মুখপাত্র এবং জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের বলেন তারা কীটনাশক স্প্রে করার নিয়মিত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
(সংক্ষেপিত)
প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান
Comments