৩০ বছরেও বিএডিসির কেন্দ্রীয় গুদামে ডাকাতি মামলার অগ্রগতি নেই
৩০ বছর আগে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) কেন্দ্রীয় গুদামে ডাকাতির অভিযোগে যে মামলাটি করা হয়েছিল, এখনো তার বিচার প্রক্রিয়ার কোনো অগ্রগতি হয়নি।
আদালত সূত্রে জানা যায়, চার্জ গঠনের পর গত ১০ বছরে মামলার ৭৪ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ছয় জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
বিএডিসির কেন্দ্রীয় গুদামের তখনকার নির্বাহী প্রকৌশলী (যন্ত্রাংশ) মোহসীন ভূঁইয়া ১৯৯১ সালের মে মাসে মামলাটি করেন। ২০১৩ সালের আগস্টে তিনি মারা যান। এর মধ্যে তার জবানবন্দি নেওয়া হয়নি। ৬৮ জন সাক্ষীর মধ্যে একজন এর মধ্যে মারা গেছেন। কয়েক বার সমন জারি করা সত্ত্বেও বাকিরা আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসেননি।
মামলার নথিতে বলা হয়েছে, বেঁচে থাকা ৬৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ২২ জন পুলিশ সদস্য। বাকি ২৯ জন বিএডিসির কর্মী।
বর্তমানে ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলাটির বিচারকাজ ঝুলে আছে।
আদালতের একজন কর্মচারী জানান, অনুপস্থিত থাকা সাক্ষীদের বিরুদ্ধে আদালত একাধিক বার অ-জামিনযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেও তাতে কাজ হয়নি।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এস এম জাহিদ হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, সাক্ষ্য গ্রহণের নির্ধারিত তারিখে সাক্ষীদের হাজির করার ক্ষেত্রে প্রসিকিউশনের দায়িত্ব হলো আদালতকে তাদের বিরুদ্ধে সমন কিংবা অ-জামিনযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে বলা। আর পুলিশ তাদের খুঁজে বের করে আদালতে হাজির করার উদ্যোগ নেবে।’
জাহিদ হোসেন আরও বলেন, ‘পুলিশ যদি তা করতে ব্যর্থ হয়, সে ক্ষেত্রে আদালত কিংবা প্রসিকিউশনের কিছু করার থাকে না। তাই যেহেতু স্বাক্ষীদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, বিচার প্রক্রিয়াও দীর্ঘায়িত হচ্ছে।
মামলার নথি বিশ্লেষণ করে জানা যায়, ১৯৯১ সালের ১৬ মে মধ্যরাতে রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় বিএডিসির কেন্দ্রীয় গুদামে ডাকাতি হয়। সাত থেকে আট জনের একটি দল তিন নৈশ প্রহরীর হাত-পা, চোখ-মুখ বেঁধে গুদাম থেকে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা মূল্যের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ লুট করে নিয়ে যায়।
এই ঘটনার পর অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মোহসীন ভূঁইয়া তেজগাঁও থানায় মামলা করেন।
এর পর প্রায় সাড়ে ১৯ বছর পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের পরিদর্শক মাগফুরুল ওয়াদুদ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ২০১০ সালের ১৭ অক্টোবর ১১ ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন।
অভিযোগপত্রে নাম আসা ব্যক্তিরা হলেন- মুঞ্জুর রহমান খান, শাহজাহান হাওলাদার, মোবারক ব্যাপারি, বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস, খন্দকার রফিকুজ্জামান, রুহুল আমিন, মোবারক হোসেন মৃধা, সৈয়দ মোশারফে হোসেন ওরফে আক্কেল মীর, আবুল ওরফে আবুল হোসেন, আব্দুর রহমান ওরফে বাবলু এবং আব্দুল মালেক।
এদের মধ্যে মুঞ্জুর, বিপুল, রফিকুজ্জামান ও মোবারক হোসেন ছিলেন বিএডিসির উপ-সহকারী প্রকৌশলী। অন্যদিকে মোশারফ ও আব্দুর রহমানও ছিলেন বিএডিসির কর্মী।
২০১১ সালের ৮ মার্চ আদালত ১১ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এদের মধ্যে মুঞ্জুর, শাহজাহান, মোবারক ব্যাপারি, মোবারক হোসেন, মোশাররফ ও আব্দুল মালেক এখন জামিনে আছেন। অন্যদিকে বিপুল, রফিকুজ্জামান, রুহুল আমিন, আবুল হোসেন ও আব্দুর রহমান এখনো পলাতক।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘কোনো মামলার ক্ষেত্রে সাক্ষীর অভাবে দীর্ঘ সময় ধরে যদি আদালত মামলার বিচারকাজ শেষ করতে না পারেন, তাহলে ফৌজদারী কার্যবিধি অনুসারে রেকর্ড করা জবানবন্দির ভিত্তিতে রায় দেওয়া যায়।’
সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘অনুপস্থিত সাক্ষীদের বিরুদ্ধে আদালত বার বার অ-জামিনযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন। আর সাক্ষীদের আদালতে হাজির করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর পরোয়ানার চিঠি দিতে পারেন।’
প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মামুনুর রশীদ
Comments