কোয়ারেন্টিন শেষে ডিটেনশন সেন্টার, পরে ইচ্ছুকদের দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা: লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস
তিউনিশিয়ার জলসীমায় উদ্ধার ২৬৪ অভিবাসনপ্রত্যাশী বাংলাদেশিকে দেশটির দ্বীপ শহর জেরবারের একটি হোটেলে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সেলর (শ্রম কল্যাণ) গাজী মো. আসাদুজ্জামান কবির।
তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার উদ্ধারকৃতদের ওই হোটেলে নেওয়া হয়। দূতাবাসের পক্ষ থেকে আইওএম ও রেডক্রিসেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। বিস্তারিত জানাতে ও পরিচয়সহ তালিকা তৈরি করতে খুব দ্রুত সেখানে প্রতিনিধি দল পাঠানো হবে।’
দূতাবাসের কাউন্সেলর (শ্রম কল্যাণ) জানান, কোয়ারেন্টিন শেষে নিয়ম অনুযায়ী তাদের ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হবে। এরপর দেশে ফিরতে ইচ্ছুকদের আইওএম’র ব্যবস্থাপনায় পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।
তিউনিশিয়ার হোটেলে কোয়ারেন্টিনে থাকা উদ্ধারকৃত কয়েকজন বাংলাদেশির সঙ্গে দ্য ডেইলি স্টারের কথা বলার সুযোগ হয়েছে।
তারা জানান, গত বুধবার লিবিয়ার জাওয়ারা এলাকা থেকে তাদের নৌকাটি ইতালির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার ভোর ৫টার দিকে তিউনিশিয়ার জলসীমায় পৌঁছলে নৌকার কয়েক জায়গায় ফেটে গিয়ে পানি ঢুকতে থাকে। নৌকাটি ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে আভিবাসীরা তিউনিশিয়ার কোস্টগার্ডের সহায়তা চান। খবর পেয়ে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের চারটি জাহাজ ও বোট এসে তাদের উদ্ধার করে।
তারা আরও জানান, দীর্ঘসময় ধরে তারা সমুদ্রে নৌকায় ভাসমান অবস্থান ছিলেন। উদ্ধার না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা ছিল।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার ভোরে লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে তিউনিশিয়ার জলসীমায় ২৬৪ অভিবাসনপ্রত্যাশী বাংলাদেশিকে উদ্ধার করে দেশটির নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড।
এ নিয়ে গত ২ মাসে তিউনিশিয়ার জলসীমা থেকে ৪৯১ জন ইউরোপগামী অভিবাসনপ্রত্যাশী বাংলাদেশিকে উদ্ধার হলো।
উদ্ধারকৃত অভিবাসীদের মধ্যে তিন জন মিশরীয় নাগরিক। তারা সাগরের নৌকায় ভাসমান অবস্থায় ছিলেন।
তিউনিশিয়ায় আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস।
অভিবাসনপ্রত্যাশীদের উদ্ধার করে উপকূলে নিয়ে আসার পর আইওএম ও রেড ক্রিসেন্টের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, গত ১৮ মে লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার সময় ভূমধ্যসাগরে তিউনিসিয়া জলসীমায় নৌকাডুবির ঘটনায় ৬৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করে দেশটির নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড। সেই ঘটনায় এখনো নিখোঁজ আছেন ১৩ জন বাংলাদেশি।
ওই ঘটনার আগের দিন ডুবতে যাওয়া একটি নৌকা থেকে ৫২ জন এবং ২৭ ও ২৮ মে ১৭৯ জন এবং এ মাসের শুরুতে ছয় জন বাংলাদেশিকে তিউনিসিয়ার জলসীমায় উদ্ধার করা হয়।
সব মিলিয়ে গত দুই মাসে উদ্ধার ৪৯১ জনের মধ্যে এখন ৪৭১ জন বাংলাদেশি তিউনিশিয়ায় অবস্থান করছেন। বাকি ২০ জন এরইমধ্যে আইওএম’র সহায়তায় স্বেচ্ছায় দেশে ফিরে এসেছেন। এ পর্যন্ত মোট ৪৫ জন দেশে ফিরে আসার জন্য আইওএম’র কাছে আবেদন করেছেন।
লিবিয়া ও তিউনিসিয়া থেকে অভিবাসীদের ইউরোপে প্রবেশের অন্যতম প্রধান পয়েন্ট ইতালি। দেশটি অভিমুখী নৌকাগুলো লিবিয়া থেকে সরাসরি না গিয়ে প্রায়ই তিউনিসিয়া উপকূল হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করে।
তিউশিয়ান ন্যাশনাল গার্ড জেনারেল অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের ৩১ মে পর্যন্ত তিউনিশিয়ার জলসীমায় ইতালিমুখি ৩০৮টি অবৈধ অভিবাসন অপারেশন ঠেকানো হয়। এসময় উদ্ধার চার হাজার ৩৭৬ জনের মধ্যে দুই হাজার ৫৩১ জন বিদেশি।
আইওএম আরও জানায়, জানুয়ারি থেকে এক হাজারেরও বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী লিবিয়া থেকে ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টাকালে তিউনিশিয়ায় ধরা পড়েন। এ সংখ্যা ক্রমে বেড়েই চলেছে।
জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী, ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যাওয়ার সময় অন্তত ৭৬০ অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু হয়েছে।
আরও পড়ুন:
তিউনিসিয়ায় ভূমধ্যসাগর থেকে ২৬৪ বাংলাদেশি উদ্ধার
তিউনিসিয়ায় নৌকাডুবি: এক মাসেও খোঁজ মেলেনি ১৩ বাংলাদেশির
Comments