১০ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিলের সিদ্ধান্তকে ‘সতর্ক’ সাধুবাদ টিআইবির

দেশের বিভিন্ন জায়গায় ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রস্তাব বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্তকে ‘সতর্ক’ সাধুবাদ জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। পাশাপাশি এর বিকল্প হিসেবে জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে সরকারের বিনিয়োগের সিদ্ধান্তের ব্যাপারেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।

দেশের বিভিন্ন জায়গায় ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রস্তাব বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্তকে ‘সতর্ক’ সাধুবাদ জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। পাশাপাশি এর বিকল্প হিসেবে জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে সরকারের বিনিয়োগের সিদ্ধান্তের ব্যাপারেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।

আজ শনিবার এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান এ ব্যাপারে বলেন, ‘পরিবেশবাদীদের ক্রমাগত উদ্বেগ এবং স্থানীয় জনগণের তীব্র আপত্তি ও প্রতিবাদ সত্ত্বেও পরিবেশগত প্রতিপন্ন এলাকা এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় জেলায় সরকার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তা থেকে ১০টি কয়লাভিত্তিক প্রকল্প বাতিলের এই সিদ্ধান্তকে সরকারের বোধোদয় হিসেবে ধরে নেওয়া যেতে পারে।’

এ অবস্থায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা থেকে পুরোপুরি সরে আসার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করতে চাই যে, প্যারিস চুক্তিসহ ২০৫০ সালের মধ্যে শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সরকার অধিকতর সচেষ্ট হবে। সেই সঙ্গে সংশোধন হতে যাওয়া বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনায় কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র থেকে পুরোপুরি সরে আসার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দেওয়া হবে।’

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর যে ১৮টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প অনুমোদন পায়, সেগুলোর মধ্যে বাতিল হওয়া ১০টি প্রকল্প রয়েছে। নির্মাণকাজে অগ্রগতি না হওয়ায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এই প্রকল্পগুলো বাতিল করার প্রস্তাব দিয়েছিল। যে প্রস্তাবে সম্প্রতি অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, আগামীতে নির্মাণকাজে প্রত্যাশিত অগ্রগতি না হলে এই ধরনের আরও দুই-একটি প্রকল্প বাতিল করা হতে পারে।

এ ব্যাপারে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘১০টি প্রকল্প বাতিল করা হলেও এ ধরনের আরও কয়েকটি প্রকল্প সরকারের পরিকল্পনায় আছে। যার মধ্যে রামপাল, মাতারবাড়ি ও মিরসরাইসহ আটটি কেন্দ্র স্থাপনের কাজ চলছে। গণমাধ্যমের খবর অনুসারে, সরকার ২০৩০ সাল নাগাদ এসব কেন্দ্র থেকে ১০ থেকে ১২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেতে চায়।’

এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এটা খুবই উদ্বেগের বিষয় যে, লক্ষ্যমাত্রার প্রায় চারভাগের এক ভাগ বিদ্যুৎ সরকার কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র থেকেই পেতে চাইছে। আবার বাতিলকৃত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিবর্তে ব্যয়বহুল এলএনজি এবং জ্বালানি তেলনির্ভর কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। যা বাংলাদেশকে ২০৩০ সালের মধ্যে এশিয়ার অন্যতম কয়লা ও কার্বন দূষণকারী দেশে পরিণত করবে।

এই পরিকল্পনা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট মোকাবিলায় সরকারের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক মন্তব্য করে ইফেতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। আমরা বিশ্বাস করতে চাই যে, সরকার শেষ পর্যন্ত শুভবুদ্ধির পরিচয় দেবে। কোনো বিশেষ গোষ্ঠী বা দেশের স্বার্থ রক্ষায় কয়লা বা এলএনজির মতো জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর বিদুৎ উৎপাদন প্রক্রিয়ায় বিনিয়োগ অব্যাহত রাখবে না।’

এদিকে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে প্রায় ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ থাকলেও এ বিষয়ে সরকারের নির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা না থাকার কথা উল্লেখ করা হয় টিআইবির বিবৃতিতে। বলা হয়, ২০২০ সালের মধ্যে ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদনের প্রতিশ্রুতি ছিল। কিন্তু, এখন প্রতিদিন মাত্র ৭৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদন করা হচ্ছে। যা মোট উৎপাদন সক্ষমতার ৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

এ ছাড়া, নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ কমে আসলেও পর্যাপ্ত বিনিয়োগ ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কার্যকর পদক্ষেপের অভাব থাকার কথা জানিয়ে বিবৃতিতে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘টিআইবি আশা করে, ২০৫০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুতের শতভাগ চাহিদা মেটানোর জন্য সরকার একটি কার্যকর রূপরেখা প্রণয়ন করবে। এই খাতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ করবে। সর্বোপরি জ্বালানি খাতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও শুদ্ধাচার কঠোরভাবে নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।’

Comments

The Daily Star  | English

US must intervene to stop Gaza carnage

Says ‘helpless’ UN chief as 16 more die in the Palestinian enclave

1h ago