রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশের আগ্রহ আমরা পুরোপুরি বুঝতে পেরেছি: চীনা রাষ্ট্রদূত

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে দ্রুত প্রত্যাবাসনে সহায়তা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং।
ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। ছবি: সংগৃহীত

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে দ্রুত প্রত্যাবাসনে সহায়তা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং।

তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের চাওয়া পূরণে চীন সবসময় দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগের সেতু হিসেবে কাজ করে যাবে।’

কসমস ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত এক অনলাইন আলোচনায় তিনি বলেন, ‘প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্য বাংলাদেশের আগ্রহ আমরা পুরোপুরি বুঝতে পেরেছি এবং দীর্ঘদিনের এই সমস্যা সমাধানে দুই বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশীকে সহায়তার ব্যাপারে আমাদের প্রচেষ্টা কখনই বদলাবে না।’

মূল বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত লি বলেন, ‘এই বছরের ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে মিয়ানমারে হঠাৎ করে সেনা অভ্যুত্থান সবাইকে অবাক করে দিয়েছে এবং যে কারণে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়।’

তিনি বলেন, ‘চীন মিয়ানমারের পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে, আশা করছি শিগগিরই দেশটি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।’

বৃহস্পতিবার রাতে ‘বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক: ভবিষ্যতের পূর্বাভাস’ শীর্ষক এই সংলাপে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতুল্লাহ খান।

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন প্রখ্যাত কূটনীতিক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী।

এতে আলোচক প্যানেলে ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক এ করিম, সিপিডির বিশিষ্ট ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মুবিন চৌধুরী, ইউনান বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী গবেষক ড. জু ইওংমেং, চীনা ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সহকারী গবেষণা ফেলো ড. নিং শেংনান, সাবেক রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর।

সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক এ করিম বলেন, ‘বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক ইস্যুতে সহযোগিতা বাড়াতে আমি চীনকে অনুরোধ করব, বিশেষ করে রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধানে চীন সহায়তা করার ক্ষমতা রাখে।’

মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘দেশটিতে বর্তমানে যে অস্থির অবস্থা বিরাজ করছে, তার প্রভাব চীন, বাংলাদেশ, ভারত এবং আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর ওপরও পড়তে পারে।’

তারিক এ করিম বলেন, ‘তাই, আমি এই ইস্যুটিকে নতুন করে দেখার এবং তাদের প্রভাব ব্যবহার করে দ্রুত সমাধানে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’

রোহিঙ্গা ইস্যু সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত লি’র মন্তব্যের বিষয়ে শমসের মুবিন বলেন, ‘এই ইস্যুর সন্তোষজনক সমাধানের জন্য বাংলাদেশ অনেক প্রতিশ্রুতি পেয়েছিল।’

তিনি বলেন, ‘এটি একটি মানবিক সমস্যা, এই সম্প্রদায়ের সম্মানের কথা মাথায় রেখে এর সন্তোষজনক সমাধান না হলে এটি নিরাপত্তা ইস্যুতে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

সাবেক এই কূটনীতিক মনে করেন, এই ইস্যুর সমাধান যে দেশগুলো সঠিক ভূমিকা পালন করতে পারে, তাদের আর দেরি না করে শান্তিপূর্ণ সমাধানের সন্ধান করা উচিত।

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘রোহিঙ্গারা কি আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতি এবং ভূ-তাত্ত্বিক স্বার্থের শিকার? আমি মনে করি- এ প্রশ্নটিই এই অঞ্চলের প্রভাবশালী রাষ্ট্রদের খুব খোলামেলা ও আন্তরিকতার সঙ্গে জিজ্ঞাসা করা দরকার। এটি অনেক বেশি মানবিক সমস্যা এবং আমি মনে করি- এর কার্যকর এবং সময়োপযোগী সমাধান হওয়া উচিত।’

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা দশ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ সার্বজনীন প্রশংসা পেয়েছে বলেও সাবেক এই কূটনীতিক উল্লেখ করেন।

রাখাইন রাজ্যের সংকটকে একটি জটিল ও ঐতিহাসিক উল্লেখ করে ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, ‘চীন মিয়ানমার সরকারকে রক্ষা করছে।’

এই বিশ্লেষক বলেন, ‘ভারতও মিয়ানমারে প্রভাবের জন্য প্রতিযোগিতা করছে এবং চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) সমালোচনা করছে।’

বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলোচনা করে রোহিঙ্গাদের রাখাইন রাজ্যে প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্য চেষ্টা করছে। তবে, গত চার বছরে রোহিঙ্গাদের মধ্যে ‘আত্মবিশ্বাসের অভাব’ এবং রাখাইন রাজ্যে ‘অনুকূল পরিবেশের অভাব’র কারণে প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি।

কোভিড পরিস্থিতি এবং পরবর্তীতে মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা স্থগিত রয়েছে।

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু বিষয়ে বাংলাদেশ আশাবাদী, কারণ ১৯৭৮ এবং ১৯৯২ সালে মিয়ানমার সামরিক সরকারের অধীনে নিজ নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়েছিল।

সম্প্রতি নিউইয়র্কের বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে জাতিসংঘ মহাসচিবের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত ক্রিস্টিন এস বার্গনারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।

বৈঠকে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের কাছে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চেয়েছেন তিনি।

বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘদিন অবস্থানের ফলে বিশেষ করে ওই অঞ্চলে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে তা তুলে ধরে বলেন, ‘যদি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু না হয়, তবে তা শুধু কক্সবাজার এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকাতেই পরিস্থিতির অবনতি ঘটাবে না, বরং তা এ অঞ্চলের এবং বাইরের অবস্থারও অবনতি ঘটাবে।’

এর আগে, যাচাই বাছাইয়ের জন্য আট লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ।

কিন্তু, মিয়ানমার মাত্র ৪২ হাজার মানুষের তথ্য যাচাই করেছে। এ বিষয়ে তাদের গুরুত্বের অভাব রয়েছে বলে ঢাকা মনে করছে।

কক্সবাজার ও ভাসানচরে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ।

Comments

The Daily Star  | English

Hathurusingha suspended as Bangladesh coach

Chandika Hathurusingha has been suspended as the head coach of the Bangladesh cricket team, the president of the Bangladesh Cricket Board (BCB) Faruque Ahmed announced in Mirpur today.

1h ago