করোনাভাইরাস

চট্টগ্রামে শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে বেশি মৃত্যুতে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা

বন্দরনগরী চট্টগ্রামে গত কয়েক দিন থেকে শহরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে কোভিড-১৯ রোগে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। এমনকি, কোনো কোনো দিন রোগী শনাক্তের হারও নগরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে বেশি হচ্ছে।
প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

বন্দরনগরী চট্টগ্রামে গত কয়েক দিন থেকে শহরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে কোভিড-১৯ রোগে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। এমনকি, কোনো কোনো দিন রোগী শনাক্তের হারও নগরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে বেশি হচ্ছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এর জন্য গ্রামাঞ্চলে মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে অসচেতনতা, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের অতি সংক্রমণশীল ও উপজেলা পর্যায়ে শরণাপন্ন কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসায় সীমাবদ্ধতাকে কারণ বলে মত প্রকাশ করেছেন।

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলার সময় তারা এই বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, গতকাল শনিবার মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মোট সাত জন মারা গেছেন। তাদের মধ্যে ছয় জনই কয়েকটি উপজেলার বাসিন্দা।

একই সময়ে ১,৩৩০টি নমুনা পরীক্ষা করে ৩০০ জনের শরীরে কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ২২ শতাংশ। শনাক্তদের মধ্যে ২০৪ জন নগরের ও ৯৬ জন অন্যান্য উপজেলার। অর্থাৎ উপজেলা পর্যায়ে সংক্রমণের হার ৩২ শতাংশ। অথচ গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত উপজেলা পর্যায়ে মোট সংক্রমণ হার ছিল ১৯ দশমিক ৭১ শতাংশ।

গতকাল শনিবার চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত হয়ে তিন জন মারা গেছেন। তাদের মধ্যে দুই জনই নগরের বাইরের। গত শুক্রবার মারা গেছেন পাঁচ জন। তাদের মধ্যে তিন জনই নগরের বাইরের। গত বৃহস্পতিবার যে একজন রোগী মারা গেছেন তিনি নগরের বাইরের। গত বুধবার মারা যাওয়া তিন জনের মধ্যে দুই জনই নগরের বাইরের।

রোগী শনাক্তের হারে দেখা গেছে শনিবার মোট শনাক্তের ৩৫ শতাংশ ছিল উপজেলা পর্যায়ে। শুক্রবার উপজেলায় এই হার ছিল ৪১ শতাংশ, বৃহস্পতিবার ছিল ৫০ শতাংশ, বুধবার উপজেলা পর্যায়ে এই হার ছিল ৩৮ শতাংশ।

অর্থাৎ গত এপ্রিল পর্যন্ত উপজেলা পর্যায়ে যেখানে শনাক্তের হার ছিল প্রায় ২০ শতাংশ, সেখানে বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত।

উপজেলা পর্যায়ে যেখানে মোট মৃত্যুর হার ২১ দশমিক ৭৪ শতাংশ, সেখানে গত পাঁচ দিনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ থেকে ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত।

এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ ল্যাবরেটরির প্রধান অধ্যাপক ডা. শাকিল আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গ্রামাঞ্চলে মানুষের মধ্যে শুরু থেকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে উদাসীনতা দেখা গেছে। তাদেরকে সচেতন করতে যে উদ্যোগের প্রয়োজন, তাতে ঘাটতি ছিল। এতদিন বিষয়টি সেভাবে দৃষ্টিগোচর হয়নি।’

‘এবারের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টটা অতি সংক্রমণশীল। তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরিবারের একজন আক্রান্ত হলে অধিকাংশ সদস্যই আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন।’

‘গ্রামাঞ্চলে মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাবের কারণে আক্রান্ত হওয়ার পর তারা পরীক্ষা করাতে দেরি করার পাশাপাশি হাসপাতালে ভর্তি হতেও দেরি করছেন। এতে মৃত্যু হার বেড়ে যাচ্ছে। বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক,’ যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘উপজেলা পর্যায়ে বেশিরভাগ হাসপাতালে হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা নেই। কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থাও নেই অনেক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ফলে শরণাপন্ন কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসায় অপ্রতুলতা রয়েছে এখানে।’

ডা. শাকিল আহমেদ বলেন, ‘আমরা এক বছরের বেশি সময় পেয়েছি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে কোভিড-১৯ চিকিৎসার উপযোগী করার জন্য। আমরা সেভাবে সময়টাকে কাজে লাগাতে পারিনি।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রামের ১৪টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মধ্যে মাত্র তিনটিতে হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা আছে। আটটিতে আছে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা। যদিও সবকটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোভিড-১৯ আইসোলেশন বেড রয়েছে।

চট্টগ্রাম জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ডা. মাহফুজুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গ্রামাঞ্চলে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে সরকারের পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকে দায়িত্ব নিতে হবে।’

গ্রামাঞ্চলে করোনা রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় তা সবার মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তার মতে, ‘উপজেলা পর্যায়ে কোভিড-১৯ চিকিৎসার পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকেই। শুধু হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা যদি সবগুলো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিশ্চিত করা যায়, তাহলে মৃত্যু হার অনেক কমে আসবে।’

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা অপারেট করতে হয় বিশেষজ্ঞ অ্যানেস্থিসিওলজিস্টের তত্তাবধানে। উপজেলা পর্যায়ে সব ক্ষেত্রে এই লোকবল নেই। তাই সব স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা চালু করা আপাতত সম্ভব নয়।’

‘তবে আমরা কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থার বিষয়ে জোর দিচ্ছি। ইতোমধ্যে বেশিরভাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এই সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এই সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে’, যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Unrest emerges as a new threat to RMG recovery

The number of apparel work orders received by Bangladeshi companies from international retailers and brands for the autumn and winter seasons of 2025 dropped by nearly 10 percent compared to the past due to major shocks from the nationwide student movement and labour unrest in major industrial belts over the past two and half months.

8h ago