চ্যাম্পিয়ন পর্তুগালকে হারিয়ে শেষ আটে বেলজিয়াম

প্রতিপক্ষ বর্তমান সময়ের সেরা দল। কিন্তু ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন তারা। আর খেললেনও চ্যাম্পিয়নের মতোই। দ্বিতীয়ার্ধে প্রায় একচ্ছত্র ফুটবল খেলেও কেবল গোলটাই আদায় করে নিতে ব্যর্থ ফরোয়ার্ডরা। ফলে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই বিদায় নিতে হয় পর্তুগালকে। চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালের টিকেট কাটল দীর্ঘদিন ধরে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থাকা বেলজিয়াম।
রোববার রাতে সেভিয়ার স্তাদিও অলিম্পিকোতে পর্তুগালকে ১-০ গোলের ব্যবধানে হারায় বেলজিয়াম। প্রথমার্ধের শেষ দিকে করা থোর্গান হ্যাজার্ডের গোলই ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দিল।
এদিন অবশ্য এ ম্যাচে সবার দৃষ্টি ছিল ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর দিকে। আর একটি গোল করলেই নতুন ইতিহাস গড়তেন তিনি। কিংবদন্তি আলী দাইকে ছাড়িয়ে যেতেন। কিন্তু পারেননি রোনালদো। পারেনি পর্তুগালও।
এ জয়ে বেলজিয়ামের গোল্ডেন জেনারেশনের আশা বাড়ল। যদিও কোয়ার্টার ফাইনালে তাদের মুখোমুখি হতে হবে ইতালির বিপক্ষে। টানা ৩১ ম্যাচ অপরাজিত রয়েছে আজ্জুরিরা।
এদিন ম্যাচের প্রথমার্ধের লড়াইটা সমান সমানই ছিল। যদিও প্রতিপক্ষের রক্ষণ ভাঙতে পারছিল না কোনো দলই। তুলনামূলকভাবে মাঝমাঠে পর্তুগালের প্রভাবই ছিল বেশি। দূর থেকে বেশ কিছু শটও নিয়েছিল তারা। কিন্তু ভাগ্য সঙ্গ দেয়নি। অন্যদিকে দূরপাল্লার একটি শট থেকে ঠিকই গোল আদায় করে নেয় বেলজিয়াম। আর সে গোলই ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দেয়।
শুরুতেই ভালো সুযোগ ছিল চ্যাম্পিয়নদের। ষষ্ঠ মিনিটে রেনেতো সাঞ্চেজের পাস থেকে দিয়াগো জোতা দূরপাল্লার শট লক্ষ্যে থাকলে এগিয়ে যেতে পারতো পর্তুগাল। ২৫তম মিনিটে রোনালদোর ফ্রিকিক ঝাঁপিয়ে ঠেকান বেলজিয়ান গোলরক্ষক থিবো কোর্তুয়া। আলগা বলে জোয়াও পালিনহা হেড নিয়েছিলেন। যা সহজেই ধরে ফেলেন কোর্তুয়া।
৩৭তম মিনিটে সুযোগ ছিল বেলজিয়ামের। কেভিন ডি ব্রুইনের পাস থেকে ডি-বক্সের বাইরে থেকে ভালো শট নিয়েছিলেন থমাস মিউনিয়ার। কিন্তু তার শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। পাঁচ মিনিট পরই কাঙ্ক্ষিত গোলটি পায় তারা। সেই মিউনিয়ারের পাস থেকে এবার ডি-বক্সের বাইরে থেকে বুলেট গতির শটে লক্ষ্যভেদ করেন থোর্গান।
বিরতির পর সমতায় ফিরতে শুরু থেকে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে থাকে পর্তুগাল। অন্যদিকে শুরুতেই বড় ধাক্কা খায় বেলজিয়াম। ইনজুরিতে পড়ে মাঠ ছাড়েন দলের সেরা তারকা ডি ব্রুইন। তাকে ছাড়া মাঝমাঠের দখলও হারায় দলটি।
৫৮তম মিনিটে সমতায় ফিরতে পারতো পর্তুগাল। রোনালদোর বাড়ানো বলে ডি-বক্সে অনেকটা ফাঁকায় বল পেয়ে যান জোতা। কিন্তু তার শট বারপোস্টের উপর দিয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তিন মিনিট পর সাঞ্চেজের ক্রস থেকে ভালো হেড নিয়েছিলেন বদলি খেলোয়াড় জোয়াও ফেলিক্স। তবে ঝাঁপিয়ে তার শট রুখে দেন বেলজিয়ান গোলরক্ষক। এর দুই মিনিট পর ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ ছিল বেলজিয়ামেরও। তবে লুকাকুর ভলি লক্ষ্যে থাকেনি।
৭৭তম মিনিটে লুকাকুকে ফাউল করা নিয়ে দুই দলের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে। অবশ্য এর মিনিট ১০ আগে এডেন হ্যাজার্ডকে ফাউল করা নিয়ে প্রায় হাতাহাতি হতে যাচ্ছিল পেপে ও লুকাকুর মধ্যে। তার ধারাবাহিকতায় আবার মেজাজ হারান পেপে। যে কারণে হলুদ কার্ড দেখতে হয় তাকে।
৮০তম মিনিটে বদলি খেলোয়াড় ব্রুনো ফার্নান্দেজের ক্রসে আরেক বদলি খেলোয়াড় আন্দ্রে সিলভার হেড অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তবে দুই মিনিট পর অসাধারণ কোর্তুয়া। কর্নার থেকে উড়ে আসা বল দারুণ হেড দিয়েছিলেন রুবেন দিয়াস। তারচেয়েও দারুণ দক্ষতায় তা ঠেকান বেলজিয়ান গোলরক্ষক।
পর্তুগালের হতাশাটা আরও বাড়ে পরের মিনিটে। রাফায়েল গুরেইরোর শট বারপোস্টে লেগে ফিরে আসে। ৮৮তম মিনিটে রোনালদোর হেড থেকে বিপজ্জনক জায়গায় বল পেয়ে গিয়েছিলেন আন্দ্রে সিলভা। তবে কোর্তুয়া ছিলেন সজাগ। বেঁচে যায় বেলজিয়াম। এরপরও বেশ কিছু আক্রমণ করে পর্তুগিজরা। তবে গোলের দেখা মিলেনি। যোগ করা সময়ের শেষ মুহূর্তে ফেলিক্সের শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিদায় নিশ্চিত হয়ে যায় তাদের।
Comments