প্রবাসে

মালয়েশিয়ায় দালাল চক্রের ফাঁদে বাংলাদেশিরা

‘দালালরা টাকা দিলে পাসপোর্ট তাড়াতাড়ি করে দিবে বলে সরাসরি ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছে। তা হলে আমরা যারা সাধারণ প্রবাসী টাকা না দিলে পাসপোর্ট কী ছয় মাস বা এক বছর পেনডিং হয়ে পড়ে থাকবে’— কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাছে এমনই প্রশ্ন রেখেছেন মালয়েশিয়া-প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মী আহমেদ বেলাল।
কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা। ছবি: সংগৃহীত

‘দালালরা টাকা দিলে পাসপোর্ট তাড়াতাড়ি করে দিবে বলে সরাসরি ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছে। তা হলে আমরা যারা সাধারণ প্রবাসী টাকা না দিলে পাসপোর্ট কী ছয় মাস বা এক বছর পেনডিং হয়ে পড়ে থাকবে’— কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাছে এমনই প্রশ্ন রেখেছেন মালয়েশিয়া-প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মী আহমেদ বেলাল।

অপর বাংলাদেশি কর্মী মোস্তাফিজুর রহমান সাকিল বলছেন, ‘আমার কাছ থেকে টাকা নিলেও পাসপোর্ট দেয়নি দালাল। বলছিল, সে নাকি হাইকমিশনে কাজ করে অথচ আমি কত কমেন্ট করছি কোনো রিপ্লাই নেই।’

সাম্প্রতিক সময়ে তাদের মতো অনেকে প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মী দালাল চক্রের ফাঁদে পড়ে বিভ্রান্ত ও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। দালালরা টাকার বিনিময়ে পাসপোর্ট দ্রুত করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।

এমনকি, তারা বাংলাদেশ হাইকমিশনের ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজের কমেন্ট অপশনে গিয়ে বিজ্ঞাপন প্রচার করে প্রবাসীদের আহবান জানাচ্ছেন। যোগাযোগ সাপেক্ষে দ্রুত সেবা পাওয়ার নিশ্চয়তা দিচ্ছেন।  

প্রবাসীদের অভিযোগ, দালালদের মাধ্যমে অনেকে দ্রুত পাসপোর্ট পেয়ে যাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কারো কারো সঙ্গে দালাল চক্রের যোগসাজশও রয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশন প্রতারক ও দালাল চক্রকে সতর্ক করে দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। হাইকমিশনের কারো কোনো সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হলে ছাড় পাবে না বলেও স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

গত শনিবার হাইকমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে বিভিন্ন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ বা দালাল স্বনামে কিংবা বেনামে হাইকমিশনের ফেসবুক পেজে প্রবেশ করে দ্রুত পাসপোর্ট করে দেওয়া কথা বলে বিজ্ঞাপন প্রদান করে আসছেন। এই ধরনের কার্যক্রম সম্পূর্ণ বেআইনি এবং এর সঙ্গে হাইকমিশনের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।’

এতে আরও বলা হয়েছে, ‘এই ধরনের বেআইনি কাজে মালয়েশিয়ায় বসবাসরত কোনো বাংলাদেশি নাগরিক এবং তাদের সঙ্গে হাইকমিশনের কারো কোনো সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

হাইকমিশন সেবা-প্রত্যাশী মালয়েশিয়া-প্রবাসী বাংলাদেশিদের সচেতন থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি, এই ধরনের অবৈধ কার্যক্রমে জড়িত ব্যক্তিদের সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য থাকলে প্রমাণসহ হাইকমিশনের [email protected] ই-মেইলে ম্যাসেজ পাঠিয়ে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

তথ্যদাতার পরিচয় গোপন রাখা হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।

মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. গোলাম সারওয়ার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ হাইকমিশন সব ধরনের দুর্নীতি ও অবৈধ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে। কাজেই পাসপোর্ট সেবা নিয়ে যে কোন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

প্রবাসী সংগঠকদের মতো সাম্প্রতিক সময়ে পাসপোর্ট সরবরাহে দেরি হওয়ার কারণে এক শ্রেণির দালাল চক্র ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছে। এই অপ-তৎপরতা বন্ধে প্রবাসীদের পাসপোর্ট দ্রুত পাওয়া  নিশ্চিত করাটাও জরুরি।

হাইকমিশন বলছে, পাসপোর্ট দেওয়ার এখতিয়ার ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের। হাইকমিশন বা দূতাবাস শুধু আবেদন গ্রহণ করে এবং প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়ায় সার্ভারে এনরোলড করে। অধিদপ্তরে থেকে মুদ্রণ হয়ে মিশনে আসার পরই তা দ্রুত বিতরণ করা হয়।

করোনা মহামারির কঠিন সময়েরও হাইকমিশন প্রবাসীদের পাসপোর্ট সেবা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে হাইকমিশনার গোলাম সারওয়ার জানিয়েছেন, গত ছয় মাসে মালয়েশিয়া-প্রবাসীদের প্রায় পৌনে দুই লাখ পাসপোর্টের আবেদন ঢাকায় ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সার্ভারে এনরোলড করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের সব দূতাবাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।

তিনি বলেন, ‘লকডাউনের কারণে প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাংলাদেশিদের শারীরিক ও আর্থিক কষ্ট কমাতে আমরা মালয়েশিয়া পোস্ট অফিসের ১৬টি শাখার মাধ্যমেও পাসপোর্ট বিতরণ শুরু করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘করোনার জীবন ঝুঁকির মধ্যেও হাইকমিশনের সদস্যরা প্রবাসীদের কনসুলেট সেবা অব্যাহত রেখেছেন।’

‘ইতোমধ্যে অন্তত ১০ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং কয়েকজন মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছেন,’ যোগ করেন গোলাম সারওয়ার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনা মহামারি পরিস্থিতি কারণে গত প্রায় এক বছর ধরে ঢাকা থেকে বিদেশি মিশনে পাসপোর্ট সরবরাহে ধীর গতি রয়েছে। তা ছাড়া ই-পাসপোর্ট যুগে প্রবেশের পদ্ধতি ও কৌশলগত কারণে এমআরপি বইয়ের সাময়িক সংকটে পাসপোর্ট মুদ্রণেও জট লেগেছে। ফলে মিশনগুলোতে সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছে দালাল চক্র।

সিরিয়াল উপেক্ষা করে অনেকে পাসপোর্ট পেয়ে যাচ্ছেন— এমন অভিযোগের জবাবে হাইকমিশন সূত্র বলছে, সিরিয়াল অনুসরণের বিষয়টিও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের হাতে। কারো পাসপোর্ট আলাদাভাবে মুদ্রণের কোনো অনুরোধ হাইকমিশনের পক্ষ থেকে করা হয় না। কেউ ঢাকায় ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে আগে-ভাগে মুদ্রণ করে নিলে সে ব্যাপারে হাইকমিশনকে দায়ী করা যায় না।

Comments

The Daily Star  | English
Why university rankings should matter

Why university rankings should matter

While no ranking platform is entirely comprehensive or flawless, it is better to participate in reliable ones.

7h ago