করোনা আক্রান্ত দেড় মাসের শিশুকে নিয়ে কোভিড ইউনিটের মেঝেতে মা
রাজশাহীতে দেড় মাস বয়সী এক শিশু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে জায়গা না পেয়ে শিশুটির মা শেষ পর্যন্ত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে মেয়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পেরেছেন।
তবে, শিশুদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা না থাকায়, নিজে আক্রান্ত না হয়েও গত শনিবার থেকে শিশুটিকে নিয়ে রামেকের কোভিড ইউনিটে থাকছেন তিনি।
রাজশাহী শহরের ছোট বনগ্রাম এলাকার মাহবুবা খাতুন জানান, মেয়ে আফরিনের জন্য হাসপাতালের ব্যবস্থা করতে খুবই দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে তাকে। গত ২০ জুন র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় শিশুটির করোনা শনাক্ত হয়।
শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে নিয়ে প্রথমে রাজশাহী রয়েল হাসপাতাল ও রাজশাহী খ্রিস্টান মিশন হাসপাতাল নামের দুটি বেসরকারি হাসপাতালে যান তিনি। তবে, করোনা আক্রান্ত হওয়ায় সেখানে জায়গা হয়নি আফরিনের।
শেষ পর্যন্ত রামেক হাসপাতালে মেয়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারেন মাহবুবা। তবে, সেখানে করোনা আক্রান্ত শিশুদের জন্যে আলাদা কোনো ব্যবস্থা না থাকায়, অন্য রোগীদের সঙ্গেই রাখা হয়েছে আফরিনকে। তার দেখাশোনা করার জন্য আক্রান্ত না হয়েও ঝুঁকি নিয়ে করোনা ইউনিটে থাকছেন মাহবুবা।
তার স্বামী আরিফুর রহমান করোনা আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন তিনি। বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন আরিফুর।
শনিবার রামেকে গিয়ে এ প্রতিবেদক দেখতে পান, মাহবুবা কেএন-৯৫ মাস্কের একটি সস্তা কপি পরে কোভিড ওয়ার্ডের ফ্লোরে বসে আছেন। আফরিন তার কোলে শুয়ে ঘুমিয়ে আছে। তার চারপাশে চলছে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা।
মাহবুবা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ও আমার বাচ্চা। আমি তো একা ছেড়ে যেতে পারি না। এখন কোভিড রোগীদের সঙ্গে থেকে আমি আক্রান্ত হলে কে দায় নেবে?’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানি ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘শিশুদের জন্যে হাসপাতালে কোনো আলাদা ব্যবস্থা করা হয়নি। কারণ শিশুদের মধ্যে সংক্রমণ খুব বিরল। সংক্রমিত শিশু তেমন একটা দেখতে পাই না আমরা।’
তবে, গত মে’তে আরেকটি শিশু করোনা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আফরিনকে কোভিড ওয়ার্ডে ভর্তি করা হলেও শিশু বিশেষজ্ঞরাই তাকে দেখছে।’
তিনি আরও জানান, আফরিনের মাকে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলা হয়েছে। আরটি-পিসিআর পরীক্ষার জন্য শিশু ও তার মায়ের নমুনা নেওয়া হয়েছে।
রামেকের কোভিড ইউনিটে চলতি মাসের প্রথম ২৮ দিনে ৩১৭ জন রোগী মারা গেছেন। তাদের মধ্যে ১৫৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল।
আজ সোমবার হাসপাতালের কোভিড ইউনিটের ১৩টি ওয়ার্ডের ৪০৫ শয্যার বিপরীতে ৪৪২ জন রোগীর চিকিৎসা চলছে। গতকাল রোববার রোগীর সংখ্যা বাড়ার কারণে হাসপাতালটিতে ৪৮টি শয্যাবিশিষ্ট একটি নতুন কোভিড-১৯ ওয়ার্ড যুক্ত করা হয়েছে।
Comments