ফেরদৌসী রহমান: এমন শিল্পী যুগ যুগ পর একজন আসেন
ফেরদৌসী রহমান এ দেশের একজন সংগীত শিল্পীর নাম। বাংলা গানের প্রায় সব শাখায় তিনি বিচরণ করেছেন। বাংলা গানকে তিনি নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। শিল্পী পরিবারে জন্ম তার। বাবা কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী আব্বাস উদ্দিন। বাবার মুখ উজ্জ্বল করে তিনি নিজেই জীবন্ত কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছেন। কেবল গায়িকা নন, গানের শিক্ষকও ফেরদৌসী রহমান। গত পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে গানের সঙ্গে তার পথচলা।
গুণী শিল্পী ফেরদৌসী রহমানের জন্মদিন আজ ২৮ জুন। তাকে নিয়ে কথা বলেছেন দেশের কয়েকজন বরেণ্য সংগীত শিল্পী।
মো. খুরশীদ আলম: তার প্রতি আমার অনেক শ্রদ্ধা
ফেরদৌসী রহমান আপা এত বড় মাপের একজন শিল্পী তাকে নিয়ে কিছু বলতে গেলে অনেক ভাবতে হয়। তিনি অনেক উঁচু মাপের শিল্পী। তার মতো বড় মাপের শিল্পী কমই আছেন এদেশে। আমরা ভাগ্যবান তার মতো গুণী শিল্পী পেয়েছি।
আমাদের দেশে যেদিন টেলিভিশন এর উদ্বোধন হয় সেদিন ফেরদৌসী আপার গান দিয়েই হয়েছিল। এখান থেকেই অনুমান করা সম্ভব তিনি কত বড় মাপের শিল্পী।
তিনি সব ধরনের গান করে আসছেন বহু বছর ধরে। একক কোনো গানের মধ্যে বন্দি থাকেননি। সব রকম গান গেয়ে তিনি কোটি মানুষের মন জয় করেছেন।
আবার সিনেমায় অসাধারণ সব গান আমাদেরকে উপহার দিয়েছেন। এটা সবাই পারেন না।
১৯৬৬ সালে আমি যখন অডিশন দিতে ঢাকায় আসি, সে সময়ে ফেরদৌসী আপা জুরি বোর্ড এর সদস্য ছিলেন।
তার প্রতি আমার শ্রদ্ধাবোধ অনেক বেশি। তার সঙ্গে বেতার ও টেলিভিশনে কোরাস গেয়েছি। কিন্তু, দুর্ভাগ্য যে তার সঙ্গে সিনেমায় গান করা হয়নি। এটা আমার জন্য একটা আফসোসের বিষয়। এটা আমার ব্যর্থতা।
এ বিষয়ে একটি তথ্য দিয়ে রাখি, বাংলাদেশের প্রথম নারী সুরকার ফেরদৌসী রহমান। তিনি সবার শ্রদ্ধার মানুষ।
একবার এক জন্মদিনে তাকে আমি ফোন করেছিলাম। ফোন করে কোনো কথা না বলে গান শুরু করি। গানটি ছিল এ রকম— জন্মদিনে বলতে এলাম শুভ জন্মদিন…। গানটি শুনে তিনি খুশি হয়েছিলেন।
জন্মদিনে তার দীর্ঘায়ু ও সুস্থতা কামনা করছি।
শেখ সাদী খান: ফেরদৌসী রহমান ভার্সেটাইল শিল্পী
আমাদের দেশে ফেরদৌসী রহমান অনন্যসাধারণ এক শিল্পী। এমন প্রতিভা নিয়ে জন্মানো শিল্পী আমরা পেয়েছি, এটিই বড় বিষয়। তার সময়ের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ ছিল উল্লেখ করার মতো। নিজেকে গানের জন্য তিনি উৎসর্গ করেছেন।
ফেরদৌসী রহমান এর মতো আদর্শবান শিল্পী এদেশে কমই এসেছেন। তার আদর্শ থেকে নতুন প্রজন্ম ও অনেকেই শিক্ষা নিতে পারেন। তার তুলনা তিনি নিজেই।
১৯৬০ এর দশক থেকে তার গান শুনে আসছি। কী চমৎকার গায়কী তার! বিখ্যাত শিল্পী পরিবারে তার জন্ম। আবার তিনি নিজেও একজন বিখ্যাত শিল্পী হিসেবে বেঁচে আছেন।
জন্মদিনে তার জন্য প্রার্থনা— তিনি সুন্দরভাবে, সুস্থভাবে আরও বহুদিন আমাদের মাঝে থাকুন। তিনি বাংলা গানকে তথা বাংলাদেশের গানকে অনেক দিয়েছেন। আরও যতদিন পারবেন দিয়ে যান। তাকে আমি কাণ্ডারি হিসেবে দেখি।
রফিকুল আলম: জনম জনম ফেরদৌসী রহমানকে মনে রাখবে এদেশের মানুষ
রাজশাহী বেতার যেদিন উদ্বোধন হয় সেদিন ফেরদৌসী রহমানকে প্রথম সামনাসামনি দেখি। সেদিন কিংবদন্তি শিল্পী আবদুল আলীম গিয়েছিলেন। আরও অনেকে গিয়েছিলেন। আমার সেখানে নিমন্ত্রণ পাওয়ার কথা নয়, তাই আমার বড়ভাই সারোয়ার জাহানের কল্যাণেই সেখানে যেতে পেরেছিলাম।
রাজশাহী বেতারের সেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ফেরদৌসী রহমান ভাওয়াইয়া গান পরিবেশন করেছিলেন। কী জাদুকরী কণ্ঠ তার! মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না! আমি তার গানের ভক্ত তখন থেকেই। সুরের জাদুকর তিনি।
সেই সময় তিনি কলকাতা বেতারেও গান করেছেন।
১৯৭৩ সালে তার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়। ধীর আলী ভাই একটি গান সুর করেছিলেন। তাও অর্ধেক। বাকি অর্ধেক সুর করেন ফেরদৌসী আপা। এমনি করেই তার কাছাকাছি আমার যাওয়া হয়।
অনেক আগে তার সেই সময়ের বনানীর বাড়িতে আমি ও সুবীর নন্দী নিমন্ত্রণ পেতাম। প্রথম তার বাসায় গিয়ে তানপুরা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। তার সঙ্গে বিদেশে দুই বার যাওয়ার ও গান গাওয়ার সুযোগ ঘটেছে। অসম্ভব রকমের আন্তরিক মানুষ তিনি। তার বিশাল ব্যক্তিত্ব সবাইকে মুগ্ধ করে।
এ দেশের গানে বিশাল অবদানের জন্যে জনম জনম তাকে মনে রাখবে এ দেশ ও দেশের মানুষ। নদীর নাম সই অঞ্জনা— তার কণ্ঠে এই গান কোনোদিন আমি ভুলতে পারব না। জন্মদিনে বলতে চাই, আপা আরও অনেকদিন আমাদের মাঝে থাকুন।
কুমার বিশ্বজিৎ: ফেরদৌসী রহমান বাংলা গানের সম্পদ
ফেরদৌসী রহমানের মতো শিল্পী পেয়েছি বলে আমরা সৌভাগ্যবান। এমন শিল্পী বহু যুগ পর পর আসেন। ফেরফৌসী রহমান আমাদের বাংলা গানের পথ প্রদর্শক। আমাদের দেশের গানকে তিনি সমৃদ্ধ করেছেন।
ফেরদৌসী রহমান বাংলা গানের সম্পদ। তিনি এখনো গান করে যাচ্ছেন। জন্মদিনে তার দীর্ঘায়ু কামনা করছি। একজন শিল্পী সব ধরনের গানে নিজেকে কিভাবে মানিয়ে নিতে পারেন তার অন্যতম উদাহরণ ফেরদৌসী রহমান। মানুষ হিসেবেও তিনি অনেক বড় মাপের। কতরকম গান তিনি করেছেন! সিনেমার গানে তার অবদান চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
মাঝে মাঝে তার সঙ্গে ফোনে কথা হয়। তার মতো শিল্পী আমাকে যখন বলেন, ‘তোমার গানের ভক্ত আমি’, তখন অন্যরকম লাগে। কত বিনয় থাকলে এমন করে বলতে পারেন একজন মানুষ। তার জন্য আমার আশীর্বাদ সব সময় থাকবে।
Comments