গোল উৎসবের ম্যাচে ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে শেষ আটে স্পেন
গোলরক্ষক উনাই সিমোনের হাস্যকর ভুলে পিছিয়ে পড়া স্পেন ঘুরে দাঁড়াল দারুণভাবে। তিনবার ক্রোয়েশিয়ার জালে বল জড়িয়ে জয়ের সুবাসই পাচ্ছিল তারা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের শেষদিকের নাটকীয়তায় পাল্টে গেল ম্যাচের চিত্র। সাত মিনিটের মধ্যে দুবার লক্ষ্যভেদ করে সমতায় ফিরল জ্লাতকো দালিচের শিষ্যরা। তবে অতিরিক্ত সময়ে স্পেনকে আর থামানো যায়নি। আরও দুই গোল করে নাটকীয় কায়দায় ২০২০ ইউরোর শেষ আটে পা রাখল লুইস এনরিকের দল।
সোমবার কোপেনহেগেনের পারকেন স্টেডিয়ামে রোমাঞ্চকর ম্যাচে ৫-৩ ব্যবধানে জিতেছে আসরের তিনবারের চ্যাম্পিয়ন স্পেন। তাদের পক্ষে জালের দেখা পান পাবলো সারাবিয়া, সেজার অ্যাজপিলিকুয়েতা, ফেরান তোরেস, আলভারো মোরাতা ও মিকেল ওইয়ারজাবাল। সিমোনের আত্মঘাতী গোলের পর ক্রোয়েশিয়ার হয়ে লক্ষ্যভেদ করেন মিসলাভ ওরসিচ ও মারিও পাসালিচ। নির্ধারিত সময় শেষে সমতা ছিল ৩-৩ গোলে।
শুরু থেকেই বল পায়ে রেখে খেলতে থাকে স্পেন। তারা ছোট ছোট পাসের পসরা সাজিয়ে কোণঠাসা করে ফেলে প্রতিপক্ষকে। অনেকটা নিচে নেমে রক্ষণ সামলাতে থাকা ক্রোয়েশিয়া বলে ছোঁয়া দিতেই হিমশিম খায়।
১৩তম মিনিটে সার্জিও বুসকেতস থ্রু বলে খুঁজে নেন মোরাতাকে। তার কাট-ব্যাক পেয়ে ডি-বক্সের বাম দিকে দুরূহ কোণ থেকে সারাবিয়ার নেওয়া শট বাইরের দিকে জালে লাগে।
তিন মিনিট পর সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেন কোকে। পেদ্রির রক্ষণচেরা পাসে কেবল ক্রোয়াট গোলরক্ষককে পরাস্ত করতে হতো তাকে। কিন্তু ফাঁকায় থেকেও দমিনিক লিভাকোভিচ বরাবর শট মেরে হতাশ করেন তিনি।
পরের মিনিটে ডান প্রান্ত থেকে ফেরানের ক্রসে বিপজ্জনক জায়গা থেকে মোরাতা করেন দুর্বল হেড। স্পেনের গোল পাওয়া যখন মনে হচ্ছিল সময়ের ব্যাপার, ঠিক তখনই অদ্ভুতুড়ে এক ঘটনায় পিছিয়ে পড়ে তারা।
২০তম মিনিটে মাঝমাঠ থেকে ব্যাক-পাস দেন পেদ্রি। গোলরক্ষক সিমোন বিন্দুমাত্র চাপে ছিলেন না। কিন্তু মনঃসংযোগে ব্যাঘাত ঘটায় দলের বিপদ ডেকে আনেন তিনি। বল তার বুটে লেগে গোললাইন অতিক্রম করে যায়!
গোল পেয়ে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে ক্রোয়েশিয়া। ২৪তম মিনিটে লুকা মদ্রিচের পাসে নিকোলা ভ্লাসিচের শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। দুই মিনিট পর মাতেও কোভাচিচের দূরপাল্লার শট চলে যায় গোলপোস্টের ওপর দিয়ে।
কয়েক মিনিটের চাপ সামলে আবারও ম্যাচের লাগাম নিজেদের হাতে নেয় স্প্যানিশরা। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার আগে সমতায়ও ফেরে তারা। ৩৮তম মিনিটে হোসে গায়ার শট লিভাকোভিচ আটকে দেওয়ার পর ফিরতি শটে জাল খুঁজে নেন সারাবিয়া।
বিরতির পরও একই ধাঁচে খেলতে থাকা স্প্যানিশরা লিড নেয় ৫৭তম মিনিটে। ডি-বক্সের বাম দিক থেকে ফেরানের ক্রসে দারুণ হেডে নিশানা ভেদ করেন অ্যাজপিলিকুয়েতা। ৭৭তম মিনিটে নিজেদের অবস্থান আরও মজবুত করে দলটি। রক্ষণ থেকে বদলি পাউ তোরেসের লম্বা করে বাড়ানো চোখ ধাঁধানো আড়াআড়ি পাস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে লিভাকোভিচকে পরাস্ত করেন ফেরান।
দুই বদলির নৈপুণ্যে চমকপ্রদ উপায়ে স্কোরলাইন ৩-৩ করে ক্রোয়েশিয়া। ৮৫তম মিনিটে গোলমুখে জটলার মধ্যে লক্ষ্যভেদ করেন ওরসিচ। যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে তার ক্রসে দুই ডিফেন্ডারের মাঝ থেকে দারুণ হেডে গোল করে ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে নিয়ে যান পাসালিচ।
অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের প্রথমার্ধের শুরুতে দাপট দেখায় ক্রোয়াটরা। ৯২তম মিনিটে ওরসিচের জোরালো শট পোস্টের সামান্য ওপর দিয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। চার মিনিট পর আন্দ্রেই ক্রামারিচের প্রচেষ্টা রুখে দেন সিমোন।
১০০তম মিনিটে ফের এগিয়ে যায় লা রোহারা। বদলি দানি অলমোর নিখুঁত ক্রস পা দিয়ে নামিয়ে বুলেট গতির শটে গোল করেন মোরাতা। তিন মিনিট পর আবারও অলমোর অ্যাসিস্ট। এবারে ওইয়ারজাবাল লক্ষ্য খুঁজে নিয়ে স্পেনের জয় নিশ্চিত করেন।
বাকি অংশে গোলের সুযোগ পেলেও কাজে লাগাতে পারেনি ক্রোয়াটরা। উল্টো ১২০তম মিনিটে ব্যবধান আরও বাড়াতে পারত স্পেন। কিন্তু অলমোর শট লিভাকোভিচকে ফাঁকি দিতে পারলেও বাধা পায় পোস্টে। এরপর শেষ বাঁশি বাজতেই উল্লাসে মাতে এনরিকের শিষ্যরা।
কোয়ার্টার ফাইনালে স্পেন মোকাবিলা করবে ফ্রান্স ও সুইজারল্যান্ডের ম্যাচের বিজয়ী দলকে। শেষ চারে জায়গা করে নেওয়ার লড়াইটি অনুষ্ঠিত হবে সেইন্ট পিটার্সবার্গে আগামী শুক্রবার বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায়।
Comments