স্টার্লিং-কেইনের গোলে জার্মানিকে বিদায় করে কোয়ার্টারে ইংল্যান্ড

দ্বিতীয়ার্ধের অনেকটা সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর রহিম স্টার্লিং এগিয়ে দিলেন ইংল্যান্ডকে। টমাস মুলার জার্মানিকে সমতায় ফেরানোর সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করার পর দুঃসময় কাটিয়ে জাল খুঁজে নিলেন হ্যারি কেইন। তাদের নৈপুণ্যে ২০২০ ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিট পেল গ্যারেথ সাউথগেটের দল।
মঙ্গলবার রাতে ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে শেষদিকের রোমাঞ্চে ২-০ গোলে জিতেছে ইংল্যান্ড। ১৯৬৬ বিশ্বকাপের ফাইনালের পর এই প্রথম কোনো নকআউট ম্যাচে জার্মানিকে হারাতে পেরেছে তারা। তাতে প্রতিযোগিতার শেষ ষোলোতে থেমেছে বিদায়ী কোচ ইওয়াখিম লুভের শিষ্যদের পথচলা।
ম্যাচে বল দখলে কিছুটা এগিয়ে ছিল জার্মানরা। তাদের নেওয়া নয়টি শটের মধ্যে তিনটি ছিল লক্ষ্যে। অন্যদিকে, ইংলিশরা পাঁচটি শট নিয়ে চারটি রাখে লক্ষ্যে। দুদলই এদিন শুরুতে বেছে নেয় সাবধানী ৩-৪-৩ ফরমেশন। ডিফেন্ডারদের দাপটে ম্যাচের লম্বা সময়ে স্কোরলাইনে পরিবর্তন না এলেও শেষদিকে জার্মানদের বাঁধে ফাটল ধরায় স্বাগতিকরা।
পঞ্চম মিনিটে ইংল্যান্ডের গোলরক্ষকের পরীক্ষা নেন লিয়ন গোরেটস্কা। তার দূর থেকে নেওয়া শট লুফে নিতে বেগ পেতে হয়নি জর্ডান পিকফোর্ডের। শুরুর দিকে জার্মানরা বলের পজিশন উপভোগ করলেও ধীরে ধীরে আক্রমণে অগ্রণী হয় ইংলিশরা।

১৬তম মিনিটে স্টার্লিং ২৫ গজ দূর থেকে শট নিলেও তা ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দেন জার্মান গোলরক্ষক মানুয়েল নয়্যার। পরের মিনিটে কিয়েরান ট্রিপিয়ারের কর্নারে ফাঁকায় থাকলেও জাল খুঁজে নিতে ব্যর্থ হন হ্যারি ম্যাগুইয়ার। তার সোজাসুজি হেড অনায়াসে লুফে নেন নয়্যার।
দশ মিনিট পর আবারও হতাশ করেন সেন্টার-ব্যাক ম্যাগুইয়ার। ট্রিপিয়ারের আরেকটি কর্নারে তার হেড লক্ষ্যেই থাকেনি। ছয় মিনিট পর এগিয়ে যেতে পারত জার্মানি। কিন্তু তাদের সামনে চীনের প্রাচীর হয়ে দাঁড়ান পিকফোর্ড। কাই হাভার্টজের দারুণ পাসে টিমো ভার্নারের বাম পায়ের কোণাকুণি শট পা দিয়ে রক্ষা করেন তিনি।
প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ডিফেন্ডার ম্যাটস হামেলসের দৃঢ়তায় বেঁচে যায় জার্মানি। তাদের ভুলের সুযোগে বল নিয়ে ডি-বক্সের দিকে ছুটছিলেন ফরোয়ার্ড স্টার্লিং। মাথিয়াস গিন্টার দারুণ ট্যাকলে স্টার্লিংকে বাধা দিলেও বল চলে যায় অরক্ষিত কেইনের পায়ে। ডি-বক্সের বাম দিক থেকে নয়্যারকে কাটিয়ে গোলমুখে পৌঁছে যান তিনি। কিন্তু ছোঁয়া একটু জোরে হওয়ায় নাগালের সামান্য বাইরে চলে যায় বল। সেই সুযোগে তা বিপদমুক্ত করেন হামেলস।
বিরতির পর জার্মানি উজ্জীবিত হয়ে খেলতে থাকে। ৪৯তম মিনিটে হাভার্টজের বুলেট গতির শট অসাধারণ দক্ষতায় কর্নারের বিনিময়ে বাঁচান পিকফোর্ড। এরপর বল নিয়ে লড়াই চলে মাঝমাঠে। কোনো দলই আক্রমণে সুবিধা করতে পারছিল না।

অবশেষে ৭৫তম মিনিটে গোছানো আক্রমণে লিড নেয় থ্রি লায়ন্সরা। বদলি জ্যাক গ্রিলিশ বাঁদিকে খুঁজে নেন লুক শকে। কাছের পোস্টে তার নিখুঁত ক্রসে আলতো টোকায় বল জালে পাঠান স্টার্লিং। চলতি আসরে এটি তার তৃতীয় গোল।
ছয় মিনিট পর নায়ক থেকে খলনায়ক হতে পারতেন স্টার্লিং। তার বাজে পাসে বল পেয়ে যান ফরোয়ার্ড হাভার্টজ। তিনি রক্ষণচেরা পাস বাড়ান মুলারের উদ্দেশ্যে। কেবল একা থাকা পিকফোর্ডকে পরাস্ত করতে হলেও তিনি অবিশ্বাস্যভাবে বল মারেন বাইরে। ইউরোতে এই নিয়ে ১৫ ম্যাচ খেলেও গোলের খাতা খোলা হয়নি মুলারের।
৮৬তম মিনিটে ইংল্যান্ডের শেষ আটে ওঠা নিশ্চিত করেন অধিনায়ক কেইন। এবারে লেফট-ব্যাক শয়ের কাছ থেকে বল পেয়ে গ্রিলিশ ক্রস ফেলেন গোলমুখে। ডাইভিং হেডে এবারের ইউরোতে নিজের প্রথম গোলের স্বাদ পান স্ট্রাইকার কেইন।
আগামী শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত একটায় সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে নামবে ইংল্যান্ড। রোমের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে তারা মোকাবিলা করবে সুইডেন অথবা ইউক্রেনকে।
Comments