জাম থেকে আয় ১৫ লাখ!

বরগুনার কৃষক আহসান হাবিব বাণিজ্যিকভাবে জাম চাষ করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন। রসালো এই ফল বিক্রি করে এ বছর তিনি ১৫ লাখ টাকা আয় করেছেন। বরগুনার সদর উপজেলার কড়ইতলা গ্রামের এ সফল কৃষকের বাড়ি।
বরগুনার কড়ইতলা গ্রামে নিজের জাম বাগানে আহসান হাবিব। ছবি: সোহরাব হোসেন

বরগুনার কৃষক আহসান হাবিব বাণিজ্যিকভাবে জাম চাষ করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন। রসালো এই ফল বিক্রি করে এ বছর তিনি ১৫ লাখ টাকা আয় করেছেন। বরগুনার সদর উপজেলার কড়ইতলা গ্রামের এ সফল কৃষকের বাড়ি।

বরগুনা শহর থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার পিচ ঢালা সড়ক ধরে এগিয়ে গেলেই কড়ইতলা গ্রাম। আহসান হাবিবের খামার বাড়িতে যেতে মোঠে পথ ধরে আরও কিছু দূর যেতে হয়। তার বাড়িতে গেলেই চোখ আটকায় গাছে থোকায় থোকায় ঝুলতে থাকা জামের দিকে। এবার তার ৪৩টি গাছে জাম ধরেছে। বেশিরভাগ জাম তিনি বিক্রি করেছেন অনলাইনে।

২০০৭ সালে ঘুর্ণিঝড় সিডরের পর হাবিব ৫০টি জামের চারা রোপন করেন। বছর দুয়েক আগে গাছে ফুল ধরলেও জামের দেখা মিলছিল না। তাতে একটুও হতাশ হননি। উল্টো জাম গাছের নিবিড় পরির্যায় বেশি বেশি করে সময় দিত থাকেন। এবার তিনি সফল হয়েছেন। গাছগুলোর শাখা-প্রশাখা জমে পরিপূণ হয়ে আছে।

মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে প্রতিদিন গড়ে আট মণ জাম সংগ্রহ করেছেন আহসান হাবিব। শুরুর দিকে মণপ্রতি জাম আট হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। বাজারে জামের সরবরাহ বাড়বার সঙ্গে সঙ্গে দাম কমেছে। সর্বশেষ তিনি প্রতি মণ জাম দুই হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। সব মিলিয়ে এক মৌসুমেই তিনি প্রায় ১৫ লাখ টাকার জাম বিক্রি করেছেন। জাম চাষে তেমন কোনো খরচ নেই বললেই চলে।

আহসান হাবিবের ছেলে মোসাদ্দেক বিল্লাহ রুমি সৌদি আরব প্রবাসী আর মেয়ে হুমায়রা আক্তার ইসলামের ইতিহাসে এমএ পাস করেছেন। মেয়ের বিয়ে হয়েছে একই গ্রামে। অনলাইনে জাম বিক্রিতে হোমায়রা তার বাবাকে সাহায্য করছেন।

হুমায়রা আক্তার দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ক্রেতাদের ৯৫ ভাগ অনলাইনে জাম কিনেছেন। বরগুনার শহরের মধ্যে যারা অর্ডার দিয়েছেন তাদেরকে হোম ডেলিভারি আর বরিশাল, ঢাকা, রাজশাহীসহ দেশের দূরবর্তী এলাকা থেকে আসা অর্ডার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বাস ও লঞ্চের মাধ্যমে। ফলন আর দাম ভালো পাওয়ায় বেশ লাভ হয়েছে। জাম চাষে আমাদের সফলতা দেখে আশপাশের অনেক কৃষক বাবার কাছে জাম চাষের পদ্ধতি শিখতে আসেন।

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের ডিন অধ্যাপক আকম মোস্তফা জামান বলেন, ব্যবসায়িক উদ্যোগে উন্নত জাতের জাম বা হাইব্রিড জামের চাষ এই অঞ্চলে না হওয়ায় বাজারের সব জামই দেশি জাতের। আহসান হাবিবের দেখাদেখি আগামীতে অনেকেই হয়তো জাম চাষে এগিয়ে আসবেন।

তিনি জানান, পুষ্টি ও ঔষধিগুণ সমৃদ্ধ জাম সুস্বাদু ফল। এটি ভিটামিন সি-তে ভরপুর।

১৯৮৮ সালে তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী মেজর মুন এম কৃষিতে তার সাফল্য দেখতে আহসান হাবিবের বাড়িতে গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৯২ সালে তরমুজ আর সবজী চাষে সফলতার দৃষ্টান্ত তৈরি করে রাষ্ট্রপতির পুরস্কার পেয়েছিলেন।

সফল কৃষক আহসান হাবিব দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমি জাম ফলাতে পেরে খুব আনন্দিত এবং এটি আমার জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।’

Comments

The Daily Star  | English

Ex-public administration minister Farhad arrested

Former Public Administration minister Farhad Hossain was arrested from Dhaka's Eskaton area

3h ago