গরুর চামড়া একটি পুষ্টিকর ও হালাল খাবার

ত্বক বা চামড়া যেকোনো প্রাণীর সবচেয়ে বড় অঙ্গ। গরুর আকারভেদে একটি চামড়া ১০ থেকে ৫০ কেজি ওজন হতে পারে। সাধারণত পশুর চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে পোশাক, জুতা, ব্যাগ, বেল্ট ইত্যাদি বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আবার পশুর চামড়া থেকে জিলাটিন বের করে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ঔষধ, প্রসাধনীতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

তবে, মানুষের খাবার হিসেবেও পশুর চামড়া একেবারে মন্দ নয়। যদিও হালাল নয়, তবে শুকরের চামড়া খুব জনপ্রিয় খাবার। চীনে সবধরনের পশুর চামড়া দিয়ে নানা স্বাদের খাবার তৈরি করা হয়। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও নাইজেরিয়ার মুসলমান ধর্মাবলম্বীরা গরুর চামড়া দিয়ে তৈরি খাবার খেয়ে থাকেন।

বাংলাদেশেও বৃহত্তর চট্টগ্রামের কোনো কোনো এলাকায় পশুর চামড়ার তৈরি খাবারের প্রচলন রয়েছে। বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে কোরবানির পশুর চামড়ার উপযুক্ত দাম ও সংরক্ষণের অভাবে বিপুল পরিমাণ পশুর চামড়া নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে পশুর ভুঁড়ি বা খাদ্যনালীর মতো চামড়া খাদ্য হিসেবে সংস্কৃতি গড়ে উঠলে এই অপচয় রোধ করা যায় অবশ্যই।

খাদ্যমান হিসেবে গরুর চামড়া একেবারে মন্দ নয়। প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর চামড়ায় ২২৫ কিলো ক্যালরি শক্তি থাকে। উপাদান হিসেবে এই ১০০ গ্রামে ৪৭ গ্রাম প্রোটিন, ৭ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১ গ্রাম চর্বি, ০.০২ গ্রাম ফাইবার এবং ৪৫ গ্রাম পানি থাকে। গরুর চামড়ার প্রোটিন সাধারণত জিলাটিন হিসেবে থাকে। জিলাটিন হাড় ও ত্বক গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যদিও গরুর চামড়ায় ভিটামিন ও মিনারেল থাকে না বললেই চলে। তবে, খুবই সামান্য পরিমাণ চর্বি থাকায় শরীরে কোনো ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে না।

পশুর চামড়া খাবার হিসেবে প্রস্তুত করা একটু ঝামেলা। গরু ছাগলের ভুঁড়ি খাবার হিসেবে প্রস্তুত করতেও কিন্তু ঝামেলা কম নয়। চামড়া থেকে লোম ছাড়ানোর পদ্ধতি ইউটিউবে দেখে নিতে পারেন। লোম ছাড়ানোর পর এটি নিজস্ব স্বাদে বিভিন্ন মসলা দিয়ে কারি বা ভাজা বা সুপ হিসেবে খাওয়া যায়। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়ায় কিকিল বা নাইজেরিয়ায় পনমো খাবার হিসেবে বেশ জনপ্রিয়।

বিগত কয়েকবছর ধরে আমাদের দেশে গরু ছাগলের চামড়ার দাম একেবারে কমে গেছে। কোরবানির পর অনেকেই পশুর চামড়া মাটিতে পুতে রাখছেন বা ফেলে দিচ্ছেন, যা নিতান্তই সম্পদের অপচয়। অথচ খাবার সংস্কৃতির পরিবর্তন ঘটিয়ে এই বিশাল অনাকাঙ্ক্ষিত অপচয় থেকে আমরা মুক্তি পেতে পারি।

লেখক: ত্বক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh Police: Designed to inflict high casualties

A closer look at police’s arms procurement records reveals the brutal truth behind the July killings; the force bought 7 times more lethal weapons than non-lethal ones in 2021-23

6h ago