শিল্পীদের পাশে অবশ্যই শিল্পী সমিতির থাকা উচিত: মৌসুমী

ছবি: সংগৃহীত

অভিষেক সিনেমা কেয়ামত থেকে কেয়ামত দিয়ে আলোচনায় আসেন চিত্রনায়িকা মৌসুমী। জয় করে নেন কোটি দর্শকদের মন। সেই থেকে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দর্শকপ্রিয়তা ধরে রেখে চলচ্চিত্রের শীর্ষ নায়িকাদের অন্যতম একজন হয়ে ওঠেন মৌসুমী। ২৮ বছরের ক্যারিয়ারে অভিনয় করেছেন দুই শতাধিক সিনেমায়। উপহার দিয়েছেন অনেক ব্যবসাসফল সিনেমা।

মেঘলা আকাশ, দেবদাস ও তারকাঁটার জন্য তিন বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন মৌসুমী। ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূতও মনোনীত হয়েছিলেন। এখনও অভিনয় করছেন নিয়মিত। নিজের অভিনয় জীবন, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন মৌসুমী।

দুই যুগের বেশি সময় ধরে সিনেমায় অভিনয় করছেন। একজন শিল্পীকে কেমন মানুষ হওয়া উচিত বলে মনে করেন?

সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকতে হবে একজন শিল্পীর। দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। একজন শিল্পী সমাজের ও পুরো দেশের। শিল্পীর অনেক দায়িত্ব আছে। শিল্পীকে হার্ট হলে চলবে না। শিল্পী হিসেবে আমার বড় দায়িত্ব আছে। চাইলেই হার্ট হতে পারি না। দ্বিতীয়ত, দর্শক ও ভক্তদের ভালোবাসার বিনিময়ে শিল্পীকে ভালোবাসা দেওয়া উচিত। শিল্পী হিসেবে, সচেতন মানুষ হিসেবে ভালো কাজ করা প্রয়োজন। আমি নিজেকে তারকা মনে করি না। সাধারণ একজন মানুষ মনে করি। যখন যে পরিস্থিতি, সে পরিবেশের সঙ্গে মিলিয়ে চলার চেষ্টা করি একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে ।

নিজেকে পরিচয় দেব শিল্পী হিসেবে, কিন্তু, শিল্পীর আচরণ থেকে দূরে সরে যাব– তাহলে তো সঠিক কাজটি করা হবে না। একজন শিল্পী কী এত সহজে তৈরি হয়? শিল্পী হতে সাধনার প্রয়োজন আছে। বছরের পর বছর সাধনা করে শিল্পী হতে হয়।

সেই ১৯৯৩ সাল থেকে দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অসংখ্য সিনেমায় অভিনয় করেছেন। নানারকম চরিত্রে নিজেকে তুলে ধরেছেন। কোনো না পাওয়া কি কাজ করে নিজের ভেতরে?

আমার কোনো না পাওয়া আফসোস নেই। এটা করতে পারিনি, ওটা করতে পারিনি এসব নিয়ে কখনো ভাবি না। আমি মনে করি ওটা আমার জন্য ছিল না। আফসোস করি না। আফসোস করলে তো সব কাজ একজনকেই করতে হবে। তা তো সম্ভব নয়। সব সময় মনে করি যা করতে পারিনি, তা আমার জন্য ছিল না। যা করতে পেরেছি, তা আমার জন্য ছিল।

আমাদের শোবিজে যেখানে সংসার শুরুর পরেই অহরহ ভাঙা-গড়ার খেলা চলছে, সেখানে আপনি ২৫ বছর সংসার জীবন কাটিয়ে দিলেন, এটার রহস্য কী?

রহস্য কিছু না। ভালোবাসা, বিশ্বাস ও আস্থা ছিল বলে এতটা পথ একসঙ্গে পাড়ি দিতে পেরেছি। সংসার জীবনে ভালোবাসাটা কোথা থেকে আসে? বিশ্বাস থাকলেই কিন্তু ভালোবাসা আসে। আস্থা ও বিশ্বাসটা খুব দরকার সংসার জীবনে। মানুষের প্রতি বিশ্বাস থেকেই ভালোবাসার পরিমাণ বেড়ে যায়। মান-অভিমান হোক, যেদিন বিশ্বাস নষ্ট হবে, আস্থা  চলে যাবে, সেদিন
সংসারে ভাঙন ধরে।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির বর্তমান অবস্থান নিয়ে আলোচনা সবখানে। আপনি শিল্পী সমিতির সভাপতি পদে নির্বাচন করেছিলেন। এছাড়া সমিতির পদেও ছিলেন। শিল্পী সমিতি নিয়ে আপনার বক্তব্য কি?

প্রথম কথা হচ্ছে শিল্পী সমিতির প্রতি শিল্পীদের আস্থা থাকতে হবে। সবকিছুর ওপরে গিয়ে শিল্পী ও শিল্পের স্বার্থে কাজ করতে হবে সমিতিকে। চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য কাজ করতে হবে। শিল্পীদের সম্মান দিতে হবে। ভুল হতে পারে যে কারও। নিজেদের মধ্যে তা সংশোধন করতে হবে, যেন সমিতির প্রতি সবার বিশ্বাস থাকে। কোনো শিল্পী যদি নিয়মের বাইরে চলে যায়, তাকে বোঝাতে হবে। নিয়মের মধ্যে আনতে হবে। প্রয়োজনে গ্রুমিং করানো যেতে পারে। শিল্পীদের পাশে অবশ্যই শিল্পী সমিতির থাকা উচিত।

আবার আমরা যদি নিয়মের মধ্যে না চলি, তাহলে যেনো সমিতি চাপের মধ্যে রাখে। আগেই সবাইকে জানানোর দরকার নেই। ঘরোয়াভাবে সমিতি এসব সমস্যার সমাধান করতে পারে। শিল্পী সমিতি প্রথমে ঘরোয়াভাবে বসবে, বোঝাবে, সাজেশন দেবে। তারপরও যদি কেউ সমিতির কথা না শোনে, তখন অ্যাকশনে যেতে পারে। শিল্পীদের ভেতরের বিষয়গুলো নিজেদের মধ্যে রাখা দরকার। জানাজানি হলে তো আমরাই নেতিবাচক কথার স্বীকার হই। বড় কথা হচ্ছে শিল্পীদের মূল্যায়ন আমরা যদি না করি, তাহলে মানুষ মূল্যায়ন করবে কীভাবে?

সমিতির সদস্য পদ স্থগিত করাটাকে কতটা যৌক্তিক বলে মনে করেন?

সমিতি সদস্য পদ স্থগিত করতে পারে। জবাবদিহিতা থাকতে হবে তো। কারও নামে কিছু হলে আগে তাকে ডাকবে, নিজেরা তদন্ত করবে, কেউ জানবে না। শুধু সমিতির সদস্যরা জানবে। কিছুদিন মনিটরিংয়ের মধ্যে রাখা যেতে পারে। ভুল হতেই পারে। কিন্তু, সংশোধনের সুযোগ দিতে হবে। সদস্য পদ স্থগিত করবার আগে এইসব কাজগুলো করা দরকার।

সিনেমা পাড়ায় অনেকেই বলে আপনি খুব সংসারী একজন নারী। আপনার কাছ থেকে কথাটি শুনতে চাই?

(হাসি দিয়ে বলেন) আমি ফ্যামিলি ওরিয়েন্টেড মানুষ। আমার কাছে সবার আগে পরিবার। আমার ছেলেমেয়ে আছে। ছেলেকে  সম্প্রতি বিয়ে করিয়েছি। তার বউ এসেছে। মেয়ে 'ও' লেবেল শেষ করেছে। স্বামী আছেন। কাজেই আমাকে সবার কথা ভাবতে হয়। আমার প্রধান ভাবনায় থাকে ফ্যামিলি।

Comments