‘আব্দুল জব্বার অন্যদের থেকে আলাদা গায়কীর শিল্পী’

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠশিল্পী হিসেবে তার ছিল অনন্য ভূমিকা। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও কণ্ঠশিল্পী আব্দুল জব্বারের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১৭ সালের এই দিনে ইহলোক ত্যাগ করেন বরেণ্য এই কণ্ঠশিল্পী।
আব্দুল জব্বার। ছবি: প্রথম আলোর সৌজন্যে

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠশিল্পী হিসেবে তার ছিল অনন্য ভূমিকা। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও কণ্ঠশিল্পী আব্দুল জব্বারের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১৭ সালের এই দিনে ইহলোক ত্যাগ করেন বরেণ্য এই কণ্ঠশিল্পী।

আজ সোমবার আব্দুল জব্বারের সহযোদ্ধা কণ্ঠশিল্পী সৈয়দ আবদুল হাদী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তার দরদী কণ্ঠ শ্রোতাদের পাশাপাশি আমাকে মোহিত করতো। আমরা প্রায় একই সময়ে গান গাইতে শুরু করি। বয়সে কিছুটা বড় হলেও আমাদের সম্পর্ক ছিল বন্ধুর মতো। বেতারে আমরা এক সঙ্গে অনেক আড্ডা দিয়েছি। দিনরাত পার করেছি আড্ডা গানে। আব্দুল জব্বারের কণ্ঠে আলাদা একটা বিষয় ছিল।'

আব্দুল জব্বারের গায়কী 'অন্যদের থেকে একেবারে আলাদা ছিল' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'একাত্তরে আমরা সংগীত, নৃত্য, নাটক শাখার সব শিল্পীদের নিয়ে "শিল্পী সংগ্রাম পরিষদ" গঠন করেছিলাম। সেখান আমরা এক সঙ্গে গান করেছি। স্বাধীন বাংলা বেতার থেকে তার কণ্ঠের গান শুনেছি সেই সময়ে। দেশের গানের পাশাপাশি ভালোবাসার গানে তার কণ্ঠ আলাদা আবেদন তৈরি করতো।'

১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল ও প্রেরণা যোগাতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে অনেক গানে কণ্ঠ দিয়েছেন আব্দুল জব্বার। তার গানে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধের সময় ভারতীয় কণ্ঠশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়য়ের সঙ্গে মুম্বাইয়ের বেশ কয়কটি স্থানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে জনমত তৈরিতে কাজ করেছিলেন আব্দুল জব্বার।

তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত 'সালাম সালাম হাজার সালাম', 'জয় বাংলা বাংলার জয়'সহ অনেক দেশাত্মবোধক গানে কণ্ঠ দিয়ে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিলেন।

তার গাওয়া 'তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়', 'সালাম সালাম হাজার সালাম' ও 'জয় বাংলা বাংলার জয়' গান তিনটি ২০০৬ সালে বিবিসি বাংলায় শ্রোতা জরিপে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ২০টি বাংলা গানের তালিকায় স্থান করে নিয়েছিল।

১৯৬৪ সালে জহির রায়হান পরিচালিত 'সঙ্গম' ছবির গানে প্রথম কণ্ঠ দেন আব্দুল জব্বার। ১৯৬৮ সালে 'এতটুকু আশা' ছবিতে সত্য সাহার সুরে 'তুমি কি দেখেছ কভু' গানটি ভীষণ জনপ্রিয়তা লাভ করে।

সেই বছর 'পীচ ঢালা পথ' চলচ্চিত্রে রবীন ঘোষের সুরে 'পীচ ঢালা এই পথটারে ভালোবেসেছি' এবং 'ঢেউয়ের পর ঢেউ' চলচ্চিত্রে রাজা হোসেন খানের সুরে 'সুচরিতা যেও নাকো, আর কিছুক্ষণ থাকো' গান দুটি তাকে এনে দেয় আকাশ ছেঁয়া জনপ্রিয়তা।

১৯৭৮ সালে 'সারেং বৌ' চলচ্চিত্রে আলম খানের সুরে তার গাওয়া 'ওরে নীল দরিয়া' গানটি কালোত্তীর্ণ হয়েছে।

কণ্ঠশিল্পী হিসেবে বাংলা গানে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৮০ সালে একুশে পদক ও ১৯৯৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি।

কণ্ঠশিল্পী আব্দুল জব্বার ১৯৩৮ সালের ৭ নভেম্বর কুষ্টিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন।

Comments

The Daily Star  | English
six die from dengue today

Six die of dengue in a single day

This is the highest single-day fatalities from the viral infection this year so far

1h ago