৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

নেতৃত্ব সংকটে কোণঠাসা বিএনপি

গৃহবন্দি অসুস্থ চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে আছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রবাসে। এ অবস্থায় শক্ত রাজনৈতিক ভিত্তি ফিরে পাওয়ার পথ খুঁজতে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।

গৃহবন্দি অসুস্থ চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে আছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রবাসে। এ অবস্থায় শক্ত রাজনৈতিক ভিত্তি ফিরে পাওয়ার পথ খুঁজতে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।

চার দশক পার করা দলটি কার্যত এখন সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে।

দলের কয়েকজন নেতার ভাষ্য, সক্রিয় রাজনীতিতে দলের শীর্ষ দুই নেতার অনুপস্থিতি জড়তা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো ও সাংগঠনিক দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা। আবার বিদ্যমান অবস্থার জন্য অনেকে বিরোধী দলকে দমনের জন্য সরকারের কৌশলকেও দায়ী করছেন।

এমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে বিএনপি আজ ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানুজ্জামান বলেন, 'প্রধানত নেতৃত্ব সংকট ও জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট অনেক ইস্যু নিজেদের পক্ষে নেওয়া ক্ষেত্রে ব্যর্থতার কারণে দলটি দীর্ঘদিন ধরে ভঙ্গুর অবস্থায় আছে।'

এই অধ্যাপকের পর্যবেক্ষণ হলো, 'মনে হচ্ছে জনমত সংহত করার জন্য ভূমিকা পালনের ক্ষেত্রে একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি ব্যর্থ হয়েছে। এ ছাড়া দলটির সাংগঠনিক কাঠামোতেও গণতন্ত্র নেই।'

যদিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক সভাপতি নুরুল আমিন ব্যাপারী দলের ওপর সব দায় চাপাতে নারাজ।

তিনি বলেন, 'যখন একটি "স্বৈরাচারী" সরকার ক্ষমতায় থাকে এবং বিরোধী দলকে ন্যুনতম কোনো জায়গা দেয় না, সেক্ষেত্রে বিএনপির সব কার্যক্রম যে সেমিনার ও পুষ্পস্তবক কর্মসূচির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।'

প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর ১৯ দফা কর্মসূচি নিয়ে একটি 'আত্মনির্ভরশীল' বাংলাদেশ গঠনের জন্য দলটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

এরপর থেকে দলটি চার বার সরকার গঠন করেছে। একবার দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে। তিন বার তার বিধবা স্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে। এ সময়ের মধ্যে দলটি দুবার বিরোধী দলে ছিল। দলটি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করলেও খালেদা জিয়া জেলে থাকা অবস্থায় ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে মাত্র পাঁচটি আসনে জয় পায়।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ঢাকার একটি বিশেষ আদালত পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার পর ২০১৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া জেলে যান। পরের বছর ৩০ অক্টোবর হাইকোর্ট তার আপিল খারিজ করে শাস্তির মেয়াদ বাড়িয়ে ১০ বছর কারাদণ্ডে উন্নীত করেন।

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ঢাকার আরেকটি বিশেষ আদালতে দোষী সাব্যস্ত হন। ওই রায়ে আদালত তাকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন।

করোনা সংক্রমণ রোধে সাধারণ ছুটি ঘোষণার ঠিক একদিন আগে গত বছরের ২৫ মার্চ খালেদা জিয়া ছয় মাসের জন্য কারা হেফাজত থেকে মুক্তি পান।

খালেদা জিয়ার দণ্ড ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে সরকার মানবিকতা ও বয়স বিবেচনায় তাকে দুটি শর্তে মুক্তি দেয়। শর্ত দুটি হচ্ছে- তিনি দেশ ছাড়তে পারবেন না এবং তাকে বাড়িতে চিকিৎসা নিতে হবে।

তখন থেকেই খালেদা জিয়া সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থেকে তার বাড়িতে অবস্থান করছেন। এ অবস্থায় ২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে অবস্থানরত তারেক দল কীভাবে চলা উচিত, সে ব্যাপারে নেতাদের নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন।

তথাপি কিছু রাজনৈতিক বিশ্লেষকসহ দলের অনেকে বিশ্বাস করেন, মা-ছেলের সক্রিয় উপস্থিতি একটা বড় পার্থক্য তৈরি করতে পারে এবং দলকে বিদ্যমান নাজুক অবস্থা থেকে বের করে আনতে পারে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলে নেতৃত্ব সংকটের বিষয়টি অস্বীকার করেন। তার অভিযোগ, এটা সরকারি দলের অপপ্রচার।

তিনি বলেন, 'দলের ৩৫ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে পাঁচ লাখের বেশি মামলা দেওয়া হয়েছে। ৫০০ জন গুমের শিকার হয়েছেন। নিহত হয়েছেন হাজারের বেশি নেতা-কর্মী। এমন পরিস্থিতিতে যদিও কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ নেই, তারপরেও বিএনপি রাজপথে থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।'

দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, কেবল বিএনপিই না, পুরো দেশ আজ গভীর সংকটে। কারণ রাষ্ট্রযন্ত্রের সবগুলো ক্ষেত্রেই রাজনীতিকরণ হয়েছে।

তাদের ভাষ্য, বেসামরিক প্রশাসন থেকে রাজনৈতিক দল কিংবা মিডিয়া- সব কিছুই প্রচণ্ড চাপের মধ্যে আছে। কারণ এই সরকার 'স্বৈরাচারী' প্রকৃতির।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান বলেন, বিএনপি এমন একটা সময়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যখন জনগণ দৃঢ়ভাবে অনুভব করেছিল যে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবিত হওয়া দরকার। রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের ভেতর দিয়ে এই দেশটি স্বাধীন হয়েছিল কেবল একটি গণতান্ত্রিক জাতি গঠনের একমাত্র উদ্দেশ্য নিয়ে।

বিএনপির এই শীর্ষ নেতার ভাষ্য, দলটির ভিত্তি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। যা জাতি, ধর্ম ও শ্রেণী নির্বিশেষে সবাইকে গ্রহণ করেছি।

মঈন খান বলেন, 'মানুষের কাছে আজও বিএনপির আবেদন আছে। কারণ আমাদের স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান এই দলটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। এখন ৪৩ বছর পর বিএনপির জন্য আবার এই বিষয়টি ভাবার সময় এসেছে। কারণ গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষ এখনও বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে। বিএনপিই সবকিছু মোকাবিলা করে দেশে আবার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারে।'

 

অনুবাদ করেছেন মামুনুর রশীদ

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh to loosen interest rate on IMF prescription

However, the BB governor did not announce when Bangladesh Bank would introduce the flexible interest rate and exchange rate.

3h ago