জন্মদিনে সাবিনা ইয়াসমিন জানালেন সবচেয়ে প্রিয় গানের কথা

সাবিনা ইয়াসমিন। ছবি: স্টার

প্রশ্ন শুনে মুঠোফোনের ওপারে কিছুক্ষণ চুপচাপ ছিলেন বাংলা গানের জীবন্ত কিংবদন্তী সাবিনা ইয়াসমিন। নীরবতা ভেঙে বললেন, 'আমার গাওয়া গানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় গান কোনটা, সেটা বলা সত্যি খুবই মুশকিল। তবে অনেক কারণে "সবকটা জানালা খুলে দাও না" গানটা আমার খুব প্রিয়।'

'নজরুল ইসলাম বাবুর কথায় গানটির সুর ও সংগীত করেছেন আহম্মেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। গানটির কথা, সুর আমার মনে এতোখানি গেঁথেছিল যে গানটি যেদিন রেকর্ড হয় সেদিন গানটা গাইতে গিয়ে বারবার চোখ ভিজেছিল। এই গানটা সবচেয়ে প্রিয় হলেও আমার গানের জীবনের টার্নিং পয়েন্ট আসে শহীদ আলতাফ মাহমুদের সুরে গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা অবুঝ মন সিনেমার "শুধু গান গেয়েই পরিচয়" দিয়ে। এই গানটার পর আর আমাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।'

জন্মদিন নিয়ে সাবিনা ইয়াসমিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সারাদিন বাসাতেই থাকবো। কয়েকজন বান্ধবী ও আমার মেয়ে বাসায় আসবে, তাদের জন্য রান্না করবো। গল্প-আড্ডা হবে তাদের সঙ্গে।'

তিনি আরও বলেন, 'জন্মদিন এলেই ভাবি,  একজন শিল্পী হিসেবে আমার কোনো অপূর্ণতা নেই। জীবনে কোনো অপূর্ণতা নেই। জীবনে মানুষের এতো ভালোবাসা পেয়েছি।'

তিনি আরও বলেন, 'করোনাকালে বেশিরভাগ সময় বাসাতেই আছি। বাসার বেশিরভাগ কাজ নিজে করি, নিয়মিত রেওয়াজ করি, পছন্দের শিল্পীদের গান শুনি।'

কার গান বেশি শোনা হয় জানতে চাইলে সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, 'অনেকের গানই শুনি। তবে মেহেদী হাসান, শ্যামল মিত্র ও মোহাম্মদ রফির গান বেশি শোনা হয়।'

১৯৫৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন সাবিনা ইয়াসমিন। সংগীতশিল্পী  হিসেবে গত পাঁচ দশকে কয়েক হাজার  গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। প্লেব্যাকের জন্য ১৩ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। ১৯৮৪ সালে একুশে পদক, ১৯৯৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি। ২০১২ সালে তাকে 'বাংলা একাডেমি' সম্মানসূচক ফেলোশিপ দেওয়া হয়।

গানে সাবিনা ইয়াসমিনের যাত্রা শুরু হয় মাত্র সাত বছর বয়সে। সে সময়ে তিনি স্টেজ প্রোগ্রামে অংশ নিতেন। তিনি ১৩ বছর গান শিখেছেন ওস্তাদ পি সি গোমেজের কাছে।

বেতারের 'খেলাঘর' অনুষ্ঠানে নিয়মিত অংশ নিতেন সাবিনা। এই অনুষ্ঠানে তার সঙ্গী ছিলেন আরেক বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী শাহনাজ রহমতুল্লাহ।

১৯৬২ সালে শিশুশিল্পী হিসেবে রবিন ঘোষের সংগীত পরিচালনায় চিত্রপরিচালক এহতেশামের 'নতুন সুর' ছবিতে প্রথম ছোটদের গানে অংশ নেন।

১৯৬৭ সালে স্কুলে পড়ার সময়ই জহির রায়হান পরিচালিত 'আগুন নিয়ে খেলা' ছবিতে আলতাফ মাহমুদের সুর-সংগীতে 'মধু জোছনা দীপালি' গানটির মাধ্যমে বড়দের গানে প্লেব্যাক শিল্পী হিসেবে সাবিনার আত্মপ্রকাশ ঘটে।

সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে— 'শুধু গান গেয়ে পরিচয়', 'জন্ম থেকে জ্বলছি মা গো', 'আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো গন্ধ বিলিয়ে যাই', 'চিঠি দিও প্রতিদিন, চিঠি দিও', 'অশ্রু দিয়ে লেখা এ গান', 'দুঃখ ভালবেসে প্রেমের খেলা', 'এ সুখের নেই কোনো সীমানা', 'বরষার প্রথম দিনে' ও 'আমার ভাঙা ঘরে ভাঙা চালা'।

তার দেশাত্মবোধক গানের মধ্যে রয়েছে— 'জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো', 'সব কটা জানালা খুলে দাও না', 'ও আমার বাংলা মা', 'মাঝি নাও ছাড়িয়া দে', 'সুন্দর সুবর্ণ', 'একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতা'।

ভারতের বরেণ্য সুরকার আরডি বর্মণের সুরে গান করেছেন সাবিনা ইয়াসমিন। কিশোর কুমার ও মান্না দের সঙ্গে দ্বৈত গানেও কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh transition from autocracy to democracy

Transitioning from autocracy to democracy: The four challenges for Bangladesh

The challenges are not exclusively of the interim government's but of the entire political class.

10h ago