বিএনপির ভাড়াটে নেতৃত্বের প্রয়োজন নেই

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপি’র এক শ্রেণীর নেতারা গতকাল বুধবার দলটির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তীব্র সমালোচনা করেছেন।
রুদ্ধদার বৈঠকে অংশগ্রহণকারী বিএনপি নেতারা। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপি'র মধ্যম সারির কয়েকজন নেতা গতকাল বুধবার দলটির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তীব্র সমালোচনা করেছেন।

তারা জানিয়েছেন, ২০২৩ সালের নির্বাচনের জন্য নেতৃত্ব ভাড়া করে আনা উচিৎ হবে না।

সরকার বিরোধী আন্দোলন কিংবা নির্বাচনে অংশগ্রহণে দল যে সিদ্ধান্তই নিক না কেন, সেটি হতে হবে বিএনপি'র চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে, জানান তারা।

কিন্তু এ ধরণের কিছু করার আগে, দলকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কখনোই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অধীনে কোন নির্বাচনে অংশ নেবে না।

চেয়ারপারসনের গুলশান অফিসে গতকাল অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে দলের যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহ সম্পাদকরা দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের কাছে এই মতামত তুলে ধরেন।

কয়েকজন সূত্র গতকাল রাতে দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এটি ছিল আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের কৌশল নির্ধারণের জন্য আয়োজিত ৩টি বৈঠকের দ্বিতীয় বৈঠক। সর্বমোট ৯৫ জন নেতাকে এই বৈঠকে অংশ নিতে বলা হয়। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন তারেক রহমান।

বিকেল ৪টায় শুরু হওয়া বৈঠকটি চলে প্রায় ৮ ঘণ্টা।

নেতারা বলেন, নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারকে উৎখাত করতে কর্মীদের সকল ঝুঁকি কাঁধে নিয়ে পথে নেমে আসা উচিৎ ।

সূত্র অনুযায়ী, বৈঠকে বিএনপি'র বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন জানান, গত সংসদ নির্বাচনে নেতৃত্ব ভাড়া করে আনা হয়েছিল এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে নির্বাচন করা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল।

তিনি জানান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছিলেন দেশে জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রতীক। সুতরাং শুধু তাদের নেতৃত্বেই দলের এগিয়ে যাওয়া উচিৎ।

রিপন জানান, বিএনপি এখন কোনো ধরণের নেতৃত্বের সংকটে ভুগছে না।

রিপনের বরাত দিয়ে মিটিংয়ে অংশ নেওয়া একজন বিএনপি নেতা বলেন, 'আমরা যদি আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার উৎখাত করতে পারি, তাহলে খালেদা জিয়াকে স্থায়ীভাবে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হবে এবং তারেক রহমান শিগগির দেশে ফিরতে পারবেন।'

রিপনের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি আরও বলেন, 'আমরা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে আন্দোলন করে আবারও ক্ষমতা ফিরে আসতে চাই। সুতরাং আমাদের কোন নেতৃত্ব ভাড়া করার প্রয়োজন নেই।'

বিএনপি রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সদস্য। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে এই জোট আছেন আ স ম আবদুর রবের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল ও মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য।

সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন ও খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়ার দাবী নিয়ে ২০১৮ সালের ১৩ অক্টোবর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়েছিল।

এই জোট ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে পরাজিত হয়। তবে অনেকে বলেন, এই নির্বাচন নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য ছিল না।

বিএনপি'র সহসম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল জানান, সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে দলকে যত দ্রুত সম্ভব ঢেলে সাজাতে হবে।

বাবুলের বরাত দিয়ে বৈঠক সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, 'আমরা যদি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পথে নামতে পারি, তাহলে আমাদের সমর্থকরা সাহস পাবেন এবং সাধারণ জনগণও আমাদের আন্দোলনে শরীক হবেন।'

বাবুল আরও জানান, যারা আগে আন্দোলনে যোগ দেননি এবং অন্যান্য নেতা ও কর্মীদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন দলের উচিৎ সেসব নেতাদের বহিষ্কার করা।

২০১৮ সালে খালেদা জিয়াকে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার ঠিক ৪ দিন আগে বিএনপি লা মেরিডিয়ান হোটেলে তাদের সর্বশেষ নির্বাহী পরিষদ বৈঠক করেছিল। তারপর থেকে বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান, সাংগঠনিক সম্পাদক ও অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠকের আয়োজন করে আসছে।

তখন থেকে নির্বাহী পরিষদের আর কোনো বৈঠক হয়নি। গতকাল বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে বৈঠক করেছে। আজ বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় পরিষদের নেতাদের সঙ্গে বিএনপি সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংগঠনের নেতাদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।

প্রায় ৪০০ নেতাকে বৈঠকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছিল এবং তাদেরকে আন্দোলন শুরু ও আগামী সংসদীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ সম্পর্কে নিজ মতামত জানাতে বলা হয়।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেওয়ার পর এবারই প্রথম এ ধরণের বেশ কিছু বড় আকারের বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো। একইসঙ্গে, তারেক রহমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হওয়ার পরও এটিই বিএনপি আয়োজিত সবচেয়ে বড় আকারের বৈঠক।

খালেদা জিয়া বর্তমানে জামিনে জেল থেকে মুক্ত আছেন এবং একাধিক মামলার আসামী তারেক রহমান লন্ডনে পলাতক আছেন।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Will anyone take responsibility for traffic deaths?

The Eid festivities in April marked a grim milestone with a record number of road traffic accidents and casualties.

8h ago