ইউপি নির্বাচন

নাসিরনগরে সাম্প্রদায়িক হামলায় অভিযুক্ত ৩ জনকে আ. লীগের মনোনয়ন

দেওয়ান আতিকুর রহমান আঁখি, আবুল হাসেম ও মো. আক্তার মিয়া। ছবি: সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু্দের ঘরবাড়ি ও মন্দিরে হামলা-ভাংচুর মামলার চার্জশিটভুক্ত তিন আসামি ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। এই তিন জন উপজেলার হরিপুর, পূর্বভাগ ও সদর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী।

মঙ্গলবার রাতে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের তালিকা প্রকাশ করা হয়। তালিকায় দেখা যায়, নাসিরনগর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে হরিপুরে হিন্দুদের ঘরবাড়ি ও মন্দিরে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনার 'মাস্টারমাইন্ড' বর্তমান চেয়ারম্যান দেওয়ান আতিকুর রহমান আঁখিকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। পূর্বভাগ ইউনিয়ন থেকে বর্তমান চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের ভাই মো. আক্তার মিয়া ও নাসিরনগর সদর ইউনিয়ন থেকে বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল হাসেমকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তারা তিন জনই হামলার পর হওয়া মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি।

এই তিন জনকে মনোনয়ন দেওয়ার ব্যাপারে নাসিরনগর ‍উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রাফি উদ্দিন আহমদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আখিঁসহ মামলার আসামিদের মনোনয়ন দিয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। এই নিয়ে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই।'

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কেন্দ্রে পাঠানো মনোনয়ন তালিকায় নামের পাশে মন্তব্য কলামে আমরা জেলা পর্যায়ে বাছাই কমিটির পক্ষ থেকে বিতর্কিতদের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছিলাম। কিন্তু তার পরেও মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। হয়তো এই তিন প্রার্থীর নামে মামলার বিষয়টি মনোনয়ন বোর্ডের সভায় উত্থাপন করা হয়নি বা কেউ গোপন করেছে।'

তিনি আরও বলেন, 'তিন জন বিতর্কিত প্রার্থীর বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে আজ বুধবার জেলা কমিটির পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এখন কেন্দ্রীয় কমিটি মামলার বিষয়টি জানার পর হয়তো সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতেও পারে।'

ফেসবুকে ইসলাম অবমাননার অভিযোগ তুলে ২০১৬ সালের ২৯ অক্টোবর নাসিরনগর উপজেলার হরিণবেড় গ্রামের এক হিন্দু যুবককে পিটিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে একদল যুবক। পরদিন এলাকায় মাইকিং করে উপজেলা সদরে পৃথক দুইটি সমাবেশ থেকে ১৫টি মন্দির, হিন্দু সম্প্রদায়ের শতাধিক ঘরবাড়িতে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এরপর ৪ নভেম্বর ভোরে ও ১৩ নভেম্বর ভোরে আবারও উপজেলা সদরে হিন্দুদের অন্তত ছয়টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এসব ঘটনায় দায়ের হওয়া মোট আটটি মামলায় দুই হাজারেরও বেশি লোককে আসামি করা হয়। এসব মামলায় ১২৬ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়েছিল পুলিশ।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজ আদালত সূত্রে জানা যায়, ঘটনার প্রায় ১৩ মাস পর ২০১৭ সালের ১১ ডিসেম্বর উপজেলা সদরের গৌরমন্দির ভাংচুর মামলায় নাসিরনগর সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হাসেম, পূর্বভাগ ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. আক্তার মিয়া ও হরিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেওয়ান আতিকুর রহমান আঁখিসহ ২২৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। অভিযোগপত্রে ২২৮ জনের মধ্যে হরিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেওয়ান আতিকুর রহমান আঁখিকে ঘটনার 'মূল হোতা' হিসাবে উল্লেখ করা হয়।

২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি রাজধানীর ভাটারা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। সেসময় দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার মুখে পড়ে এই ইউপি চেয়ারম্যানকে নিয়ে বিব্রত হয়েছিল আওয়ামী লীগ। এরপর ২০১৭ সালের ২৩ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় তাকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছিল। যদিও পরে বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে স্বপদে ফিরেছিলেন তিনি। ২০১৭ সালের ৬ নভেম্বর উচ্চ আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে আসেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
us tariff rates by country

Higher US tariffs take effect on dozens of economies

US duties rose from 10 percent to levels between 15 percent and 41 percent for a list of trading partners

1h ago