ভাঙ্গা-পায়রা বন্দর রেললাইন: বিনিয়োগকারীর খোঁজে রেলওয়ে

ভাঙ্গা থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত ২১৪ কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আইএম পাওয়ার পিএলসি নামক একটি যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছে।

যুক্তরাজ্য সফরে রেলপথ মন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করবে।

মন্ত্রী গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তারা বিনিয়োগ করা এবং প্রযুক্তি (রেললাইনের জন্য) দেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারা ইতোমধ্যে আমাদের সঙ্গে বাংলাদেশে এসে দেখা করেছে। এখন আমরা তাদের দেশে গিয়ে বৈঠক করবো।'

৮ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন রেলমন্ত্রী। উন্নত রেল ব্যবস্থা সরেজমিনে পরিদর্শন করার জন্য যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের ৪টি দেশের উদ্দেশ্যে তারা রওনা হয়েছেন। সফর শেষ হবে ৫ ডিসেম্বর।

এ ছাড়াও, তারা বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করবেন, যারা বাংলাদেশ রেলওয়েতে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে।

প্রকল্পের বিস্তারিত

বাংলাদেশ রেলওয়ে এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই এবং রেললাইনের বিস্তারিত নকশা প্রণয়নের পর বেশ কয়েক মাস অতিবাহিত হয়েছে।

সারা দেশকে রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আনার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এবং নির্মাণাধীন পায়রা সমুদ্র বন্দর ও রাজধানীর মধ্যে সরাসরি সংযোগ স্থাপনের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ে ভাঙ্গা থেকে পায়রা পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ করতে চাইছে।

এই রেললাইনে ১৯টি স্টেশন থাকবে এবং প্রকল্পের মোট খরচ হবে ৪১ হাজার ৭৯৭ দশমিক ৬ কোটি টাকা অথবা ৪ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রকল্পের প্রস্তাবিত সময়সীমা ধরা হয়েছে ২০২৯ সালের জুন।

বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আশা করছে সমুদ্র বন্দর ও রাজধানীর মধ্যে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করার পর এই পথে মালবাহী ট্রেনের যাতায়াত থেকে তারা তাদের আয় বাড়াতে পারবে।

সূত্র জানিয়েছেন, বাংলাদেশ রেলওয়ে ইতোমধ্যে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রারম্ভিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব পাঠিয়েছে, যাতে তারা সেটি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কাছে পাঠাতে পারে। প্রস্তাব বিবেচনা করে ইআরডি এই প্রকল্পের অর্থায়নকারী খুঁজে বের করবে।

ভাঙ্গা ইতোমধ্যে ফরিদপুর থেকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত আছে এবং নির্মাণাধীন পদ্মাসেতু রেল লিংক প্রকল্পের অংশ হিসেবে এটি রাজধানীর সঙ্গেও সরাসরি সংযুক্ত হবে। এই প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের কাজ শেষ হবে ২০২৪ সালের জুনে।

যাতায়াত বিশেষজ্ঞরা সন্দিহান

তবে পরিবহন বিশেষজ্ঞরা এই প্রকল্পের উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বিশেষ করে এর পেছনে কত টাকা লাগতে পারে, সে বিবেচনায়।

বিশিষ্ট পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল হক জানান, সরকার আগের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে পায়রায় গভীর সমুদ্র বন্দরের পরিবর্তে সমুদ্র বন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, আগের সম্ভাব্যতা নিরীক্ষায় রেল লাইনের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করা থাকলেও পরিকল্পনা পরিবর্তন করার পর সেটির প্রয়োজনীয়তা কমার সম্ভাবনা রয়েছে।

দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'এতো অর্থ খরচ করে এ ধরণের প্রকল্প বাস্তবায়নের উপযোগিতা নিয়ে আমার মনে সন্দেহ আছে।'

অর্থায়নের প্রস্তাব

ইতোমধ্যে, বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বেশ কয়েক দফায় এই প্রকল্পের অর্থায়নে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

তারা প্রভিডাস ইনভেস্টমেন্টস নামক একটি অস্ট্রেলিয়ান প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ করেন, যারা অর্থায়ন এবং ইপিসি (প্রকৌশল, ক্রয় এবং নির্মাণ) চুক্তি করার বিষয়ে এ বছরের শুরুর দিকে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কাছে একটি চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে ইআরডির অভিমত জানতে চেয়েছে।

এ বছরের সেপ্টেম্বরে সৌদি আরব সফর করার সময় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এই প্রকল্পে বিনিয়োগের জন্য আহ্বান জানান।

২০১৯ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) তৎকালীন প্রধান সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠক করার সময় যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইএম পাওয়ার পিএলসি অ্যান্ড টেনব্রুক লিমিটেড বাংলাদেশের জ্বালানি ও রেলপথ খাতের উন্নয়নের জন্য সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার প্রস্তাব দেয়।

গতকাল রেলপথ মন্ত্রী জানান, তারা আইএম পাওয়ারের সঙ্গে তাদের এই প্রকল্পে বিনিয়োগের প্রস্তাব নিয়ে কথা বলবেন।

তিনি জানান, তারা প্রকল্পে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশের পর থেকে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশন এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে।

তিনি আরও যোগ করেন, 'যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে আমরা প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগের পাশাপাশি নিজেরাও আংশিক অর্থায়ন করবো।'

মন্ত্রী জানান, একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনকে বৈদ্যুতিক লাইনে রূপান্তরের একটি প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হওয়ারও আগ্রহ দেখিয়েছে। এ বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হবে।

আইএম পাওয়ার হচ্ছে একটি স্বাধীন জ্বালানি উৎপাদক (আইপিপি) প্রতিষ্ঠান, যারা ভোক্তাদের জন্য স্বয়ংসম্পূর্ণ সমাধান দিয়ে থাকে। এর জন্য তারা জ্বালানি উৎপাদনের অর্থায়ন, ইপিসির সঙ্গে সমন্বিত জ্বালানি ও শিল্প খাতের অবকাঠামোগত প্রকল্প, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ সেবা ইত্যাদির ক্ষেত্রে তাদের দক্ষতাকে কাজে লাগায় বলে প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে দাবি করা হয়েছে।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English
A freedom fighter’s journey to Mujibnagar

Who is a freedom fighter

The government's move to redefine freedom fighters has been at the centre of discussion

28m ago