পাতালরেল নেটওয়ার্ক নির্মাণে আলাদা কোম্পানির পরিকল্পনা করছে সরকার

স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় মাটির নিচে রেলওয়ে নেটওয়ার্ক নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নে একটি আলাদা প্রতিষ্ঠান তৈরির পরিকল্পনা করছে সরকার।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ইতোমধ্যে এই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম, কাজের প্রক্রিয়া ও অন্যান্য খুঁটিনাটি বিষয় নির্ধারণের জন্য একটি আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) নির্বাহী পরিচালক মো. আবু বকর ছিদ্দীক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পাতালরেলের জন্য একটি আলাদা কোম্পানি গঠনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।'

বিবিএ বর্তমানে পাতালরেল নেটওয়ার্ক তৈরির সম্ভাব্যতা যাচাই করছে। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি নাগাদ এটি শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রকল্পের খসড়া সম্ভাব্যতা যাচাই নিরীক্ষা চলতি বছরের মার্চে জমা দেওয়া হয়েছে। খসড়ায় ঢাকার যানবাহনের চাপ কমিয়ে আনার উদ্দেশ্যে মাটির নিচে ২৫৮ কি.মি. রেলওয়ে নেটওয়ার্ক তৈরি করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

ঢাকা শহর এবং এর পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে ১১টি পাতালরেল রুট চালু করা হবে এবং ৫০ বছর মেয়াদী এ পরিকল্পনা ৩টি পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা হবে।

প্রথম পর্যায়ে ১০২ কিমি দৈর্ঘ্যের ৪টি রুট নির্মাণ করা হবে। ২য় ও ৩য় পর্যায়ে মাটির নিচ দিয়ে যথাক্রমে ৮৫ ও ৭১ কিমি দীর্ঘ রেললাইন নির্মাণ করা হবে।

২৯ দশমিক ৩৫ কিমি দীর্ঘ রুট কেরানীগঞ্জের ঝিলমিল প্রকল্প এলাকা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। এই রুট সবার আগে বাস্তবায়িত হবে এবং এতে প্রায় ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

তবে এ সংশ্লিষ্ট কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ঢাকার মতো অপরিকল্পিত একটি শহরে এরকম মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

এছাড়াও, প্রস্তাবিত পাতালরেল রুটগুলো বেশ কিছু এলাকায় মেট্রোরেল লাইনের পাশাপাশি চলবে। বিশেষজ্ঞরা এটিকে আরেকটি সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

সরকার ঢাকা শহর এবং এর আশেপাশের এলাকাগুলোতে ৬টি মেট্রোরেল লাইনের সমন্বয়ে মোট ১২৮ দশমিক ৭৪ কিমি দীর্ঘ এলিভেটেড (মাটি থেকে উঁচুতে নির্মিত) এবং মাটির নিচের মেট্রোরেল নেটওয়ার্ক তৈরি করতে যাচ্ছে, যার নির্মাণকাজ ২০৩০ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা।

পাতালরেল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চললেও, এর নির্মাণের বিষয়টি ২০১৫ সালে অনুমোদিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, উপযোগিতার অভাবেই পাতালরেলকে পরিকল্পনায় রাখা হয়নি।

তবে প্রকল্প পরিচালক কাজী মোহাম্মদ ফেরদৌস গত মার্চে এক অনুষ্ঠানে জানান, ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থাকে পরিকল্পিত উপায়ে পরিচালনা করতে পাতালরেল নির্মাণ করা হবে।

সূত্র জানায়, বিবিএ পাতালরেল নির্মাণের উদ্যোগকে কৌশলগত পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) কাছে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে।

প্রকল্পের পরামর্শকরা জানান, মেট্রোরেল নেটওয়ার্কের সহায়ক হিসেবে পাতালরেল নেটওয়ার্কও নির্মাণ করা উচিৎ, যেন যোগাযোগ বিস্তৃত করতে এবং আরও ভালো সংযোগ স্থাপন সম্ভব হয়।

পাতালরেল প্রতিষ্ঠান

ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানির (ডিএমটিসিএল) মতো একটি রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি তৈরির বিষয়টি গত মাসে সেতু বিভাগের মাসিক সমন্বয় সভায় আলোচনায় আসে।

নির্মাণাধীন মেট্রোরেল নেটওয়ার্ক স্থাপন, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের উদ্দেশ্যে ২০১৩ সালের জুনে ডিএমটিসিএল গঠন করা হয়।

সভায় কর্মকর্তারা জানান, পাতালরেলের জন্য একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরির বিষয়টি শেষ পর্যায়ে আছে এবং এ নির্মাণকাজের জন্য একটি আলাদা কোম্পানি প্রয়োজন।

বিবিএর নির্বাহী পরিচালক এবং সেতু বিভাগের সচিব আবু বকর ছিদ্দীকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় পাতালরেল কোম্পানি গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে বিবিএ পাতালরেলের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু করে।

যদিও ২০২১ এর অক্টোবরে এই যাচাই প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার কথা, কর্মকর্তারা পরে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এর সময়সীমা বাড়িয়েছেন।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh energy import from Nepal

Nepal set to export 40mw power to Bangladesh via India today

Bangladesh has agreed to import electricity from Nepal for the next five years

1h ago