অনেক বিশৃঙ্খলার মাঝে ক্ষণিকের স্বস্তি মাত্র

বৃষ্টির বাধায় ব্যাট-বলের লড়াই পণ্ড হয়ে গেলেও সাকিব ছিলেন বরাবরের মতো উপভোগের মন্ত্রে। তবে সেটা খেলার বাইরের অংশ। ক্রিকেটকে আলোচনায় টানলে সাকিব নিজে আছেন গুমোট পরিস্থিতিতে।
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

সাজঘরে ফেরার আগে তারকা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান হঠাৎই দেন ভোঁ দৌড়। উইকেট ও মাঠ ঢেকে রাখা কাভারের ওপর জমে থাকা পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে পিছলে যান অনেকখানি। ইংরেজিতে যাকে বলে, 'স্লাইড'। দুই দলের খেলোয়াড়রা যখন নিজেদের সাজঘরে একরকম বন্দি, তখন বৃষ্টির মাঝে সাকিবের এমন দুরন্তপনা মাঠে উপস্থিত দর্শকদের দেয় বিনোদন। টেলিভিশনের পর্দায় যারা খেলা দেখছিলেন, তাদেরও। কিন্তু দেশের ক্রিকেটের বিশৃঙ্খল অবস্থার মাঝে এই কয়েকটি মুহূর্তের স্বস্তি ধোপে টেকে কোথায়?

সারাদিনে (আগের দিন, রোববার) খেলা হয় মাত্র ৬.২ ওভার। থেমে থেমে চলা বৃষ্টির কারণে নির্ধারিত সময়ে বল গড়ায়নি মাঠে। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পর খেলা শুরু হয় দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে। এরপর চলতে পারে কেবল ৩০ মিনিটের মতো। আবার বৃষ্টি বাগড়া দেওয়ায় বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের মাঠ ছেড়ে যেতে হয়। 

সাকিব এরপর ব্যাট-প্যাড-হেলমেট নিয়ে চলে যান শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের ইনডোরে। বিকাল ৩টার একটু পর তিনি বেরিয়ে আসেন। ততক্ষণে মিরপুর টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলার সমাপ্তি ঘোষণা করেছেন আম্পায়াররা। খেলা আর হচ্ছে না জেনেই হয়তো শৈশব-কৈশোরের রঙিন দিনগুলোতে ফিরে যান সাকিব। নিরানন্দ অলস একটি দিনে সেটাই হয়ে ওঠে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়।

বৃষ্টির বাধায় ব্যাট-বলের লড়াই পণ্ড হয়ে গেলেও সাকিব ছিলেন বরাবরের মতো উপভোগের মন্ত্রে তবে সেটা খেলার বাইরের অংশ। ক্রিকেটকে আলোচনায় টানলে সাকিব নিজে আছেন গুমোট পরিস্থিতিতে। নিউজিল্যান্ড সফরে দুই টেস্টের সিরিজ খেলতে না যেতে চাওয়ার কথা অনানুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিবি) জানিয়েছিলেন তিনি। তারপরও গত শনিবার তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এই সফরের ১৮ সদস্যের স্কোয়াডে। বোর্ড প্রধান নাজমুল হাসান পাপন সেসময় গণমাধ্যমকে জানান, আনুষ্ঠানিক কোনো চিঠি ছাড়া সাকিবের আবেদন তারা বিবেচনায় নেবেন না।

সাকিব দেরি করেননি। 'পারিবারিক কারণের' কথা উল্লেখ করে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠিয়ে দেন দল ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে। চিঠির প্রেক্ষিতে বোর্ড কী সিদ্ধান্ত নেবে তা জানা যায়নি এখনও।

সাকিবের নিউজিল্যান্ড সফরে যেতে না চাওয়ার বিষয়টি বিসিবি এখন পর্যন্ত যেভাবে সামলানোর চেষ্টা করেছে, তাতে বোর্ডের বিশৃঙ্খল অবস্থা আরও একবার সামনে চলে এসেছে। বারবার সফর থেকে ছুটি চাওয়ায় সাকিবকে নিয়ে চলা সমালোচনার জোয়ার কিছুটা হলেও কমেছে বৃষ্টিতে হাত-পা ছাড়িয়ে তার উল্লাসের দৃশ্যে। কিন্তু বিসিবির আকাশ থেকে কালো মেঘ সরার লক্ষণ কই? সবশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চলাকালে সিনিয়র ক্রিকেটারদের নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছেন কোচ ও নির্বাচকরাও। বিশ্বকাপে ব্যর্থতার কারণ খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি করেছে বিসিবি। এই কমিটি এখনও প্রতিবেদন দেয়নি। 

তদন্ত কমিটি কতটা ফলপ্রসূ হবে তা নিয়ে শুরু থেকেই ছিল সংশয়। খোদ বোর্ড প্রধানের বক্তব্যেও দেখা গেছে একই সুর। দুই সদস্যের কমিটির তদন্ত 'পর্যাপ্ত' না উল্লেখ করে তিনি নিজে থেকে ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শুরু হওয়া দুর্দশার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে চলমান সিরিজে মিলছে না কোনো আলোর দিশা। একদিকে বিসিবির কাছ থেকে মিলছে না সঠিক পথের খোঁজ, আরেকদিকে মাঠের ক্রিকেটে নখদন্তহীন অবস্থা। দ্বিতীয় দিনে বৃষ্টির চোখ রাঙানি সামলে যখন খেলা শুরু হয়, তখন উইকেট ছিল পেসারদের জন্য আদর্শ। কিন্তু সহায়ক কন্ডিশন পেয়েও বাংলাদেশের দুই পেসার সৈয়দ খালেদ আহমেদ ও ইবাদত হোসেন কাজে লাগাতে পারেননি বিন্দুমাত্র।

যতখানি সময় পাকিস্তান ব্যাটিংয়ে ছিল, বিপাকে পড়তে হয়নি আজহার আলি ও বাবর আজমকে। অনায়াসে রান বের করেন তারা। বৃষ্টিভেজা আবহাওয়াতে খালেদ ও প্রথম টেস্টে ভালো পারফর্ম করা ইবাদত পাননি সুইং। তারা আদায় করতে পারেননি সিম মুভমেন্ট। তাতে ফুটে ওঠে স্কিলের প্রকট ঘাটতি। এমনকি লাইন-লেংথ ঠিক রাখার মৌলিক কাজটিতেও তারা ছিলেন না ধারাবাহিক।

সাকিবের বৃষ্টি বিলাসে তাই আনন্দিত হওয়ার উপলক্ষ থাকলেও সেটা কেবল ক্ষণিকের স্বস্তি। এই আনন্দের রেশ মিলিয়ে যেতে সময় লাগে না দেশের ক্রিকেটের বর্তমান ছন্নছাড়া অবস্থার দিকে তাকালে।

Comments

The Daily Star  | English
Workers rights vs corporate profits

How some actors gambled with workers’ rights to save corporate profits

The CSDDD is the result of years of campaigning by a large coalition of civil society groups who managed to shift the narrative around corporate abuse.

10h ago