মজুদ পর্যাপ্ত, তবুও সারের বাড়তি দাম

রাজধানীর অদূরে আমিন বাজারে সার মজুদ করছেন শ্রমিকরা। চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরেও জেলার কৃষকদের বাড়তি দামে সার কিনতে হচ্ছে। ছবি: আনিসুর রহমান/স্টার

বিভিন্ন জেলার কৃষক সরকার নির্ধারণ দামের চেয়ে বেশি দামে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। যদিও কর্তৃপক্ষ দাবি করছে দেশে সারের সংকট নেই।

সরকারের নির্ধারিত হার অনুযায়ী, ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি), ডাইঅ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) ও মিউরেট অব পটাশের (এমওপি) ৫০ কেজি ওজনের বস্তার দাম যথাক্রমে ১ হাজার ১০০, ৮০০ ও ৭৫০ টাকা।

তবে বাজারে টিএসপি ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা, ডিএপি ৯৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০ টাকা এবং এমওপি ৯৫০ থেকে ১ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।

দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, নওগাঁও, ঝিনাইদহ, সিরাজগঞ্জসহ কয়েকটি জেলার কৃষকের সঙ্গে কথা বলে দ্য ডেইলি স্টার এ চিত্র দেখতে পায়।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পর্যাপ্ত মজুত থাকার পরেও সারের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা জানান, এক শ্রেণীর অসাধু পাইকার ও খুচরা বিক্রেতা আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে সবজি চাষের জমি প্রস্তুত করার কাজে ব্যবহৃত এই সারগুলোর দাম বাড়িয়েছেন।

কৃষি কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, টিএসপির ১ লাখ ১৪ হাজার টন চাহিদার বিপরীতে মজুত রয়েছে ১ লাখ ৯২ হাজার টন। ডিএপি ও এমওপির চাহিদা যথাক্রমে ২ লাখ ৮৮ টন ও ১ লাখ ২৯ হাজার টন। আর মজুত যথাক্রমে ৫ লাখ ৯৬ হাজার টন ও ৩ লাখ ১২ হাজার টন।

কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক গত ৩০ নভেম্বর মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন সারের দামের দিকে নজর রাখতে, যাতে কেউ সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে সার বিক্রি করতে না পারেন। তারপরেও উচ্চ মূল্যে সার বিক্রি হচ্ছে।

তিনি জানান, দেশে প্রয়োজন অনুযায়ী সারের মজুত রয়েছে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম ৩ গুণেরও বেশি বাড়লেও সরকার দাম বাড়াবে না।

কৃষকের কাছে যথেষ্ট পরিমাণ সারের সরবরাহ অব্যাহত রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে কর্মকর্তাদেরকে নিরীক্ষণ প্রক্রিয়া আরও শক্তিশালী করারও নির্দেশ দেন মন্ত্রী।

কিন্তু এসব উদ্যোগ কাজে আসেনি।

সম্প্রতি ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা ইতোমধ্যে দুর্দশার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে সারের বর্ধিত মূল্যের বোঝা।

সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার কৃষক আমিনুর রশিদ বলেন, 'পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।'

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কৃষক মোহাম্মদ নাজিম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ভুট্টা, কলা, তুলা ও চালের আবাদ করার জন্য এক মৌসুমে তার কমপক্ষে ৪০ বস্তা নন-ইউরিয়া সার প্রয়োজন হয়।

সম্প্রতি তিনি এক পাইকারি বিক্রেতার কাছ থেকে ১০ বস্তা টিএসপি সার কিনেছেন। সরকার নির্ধারিত ১ হাজার ১০০ টাকার পরিবর্তে বস্তা প্রতি ১ হাজার ৭০০ টাকা দিতে হয়েছে তাকে।

তিনি বলেন, 'আমি পাইকারি বিক্রেতাকে দাম বৃদ্ধির বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর দেন, সরবরাহ সংকট আছে।'

দিনাজপুর সদরের গোপালগঞ্জ হাট এলাকার কৃষক আজিজুর রহমান জানান, তিনি ২ সপ্তাহ আগে এমওপি কেনার জন্য বাজারে গিয়ে সার পাননি।

জেলার এক পাইকারি বিক্রেতা জানান, সরকারি বরাদ্দ স্থানীয় চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট নয়। এ জন্য তাদেরকে বাইরের উৎস থেকে বাড়তি দামে সার সংগ্রহ করতে হয়।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে অপর এক পাইকারি বিক্রেতা জানান, তারা সরবরাহ সংকটে রয়েছেন এবং এ কারণেই দাম বেড়েছে। তারা আমদানিকারকদের কাছ থেকে উচ্চ মূল্যে সার কিনেছেন। এ কারণে তারা সরকারের নির্ধারিত মূল্য ঠিক রাখতে পারছেন না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ বলেন, দেশে এ মুহূর্তে কোনো ধরণের সারের সংকট নেই।

তিনি বলেন, 'যেহেতু আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ছে, কিছু পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা কারসাজি করতে পারে। তবে আমরা এ ধরণের অবৈধ কাজ বন্ধ করার জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালাচ্ছি। যদি কোনো পাইকারি বিক্রেতার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যায়, তবে তার ডিলারশিপ বাতিল করে দেব।'

দেশে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ইউরিয়া সার। এটিই এখন একমাত্র সার যা সরকার নির্ধারিত ৮০০ টাকা দামে (৫০ কেজি ওজনের বস্তা প্রতি) বিক্রি হচ্ছে।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

US cuts tariffs on Bangladesh to 20% after talks

The deal for Dhaka was secured just hours before a midnight deadline set by President Donald Trump

2h ago