‘৬ ভাইকে টার্গেট করে পিষে দেয় ঘাতক পিকআপ ভ্যান’

মৃত ৫ সহোদরের শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে স্ত্রী ও সন্তানেরা। ছবি: সংগৃহীত

'সেদিন আমার ৬ ভাই ও ১ বোন রাস্তা থেকে প্রায় ২ হাত দূরে ছিল। আমি আর আমার ১ ভাই ছিলাম রাস্তার ওপরে। কিন্তু, আমাদের না মেরে আমার ৬ ভাইকে অনেকটা টার্গেট করে পিষে দিয়েছিল ঘাতক পিকআপ ভ্যানটি। আমার ভাইদের মেরে পিছিয়ে এসে আমার আহত বোনকে আবার পিষে দেয়।'

শুক্রবার রাতে বারবার দ্য ডেইলি স্টারকে এ কথা বলছিলেন গত ৮ ফেব্রুয়ারি চকরিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া মুন্নি সুশীল।

সেদিন সকালে পিকআপের চাপায় নিহত হয় তার ৫ ভাই। এ দুর্ঘটনায় তার আরও ২ ভাই ও আরেক বোন আহত হয়। আহত রক্তিম সুশীল এখন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।

মুন্নি বলেন, 'এটা একটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তা না হলে রাস্তার ওপরে দাড়িয়ে থাকা আমাদের দুজনকে না মেরে কেন রাস্তা থেকে দুহাত দূরে গিয়ে আমার ভাইদের এভাবে পিষে মারল।'

কেন পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড মনে হচ্ছে জানতে চাইলে মুন্নি বলেন, 'গত ২৯ জানুয়ারি ৪০-৫০ জন দুষ্কৃত আমাদের বাড়িতে হামলা করেছিল। আমার বাবাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল। তার পর দিন ৩০ জানুয়ারি আমার বাবা হার্ট অ্যাটাকে মারা যান।'

কারা এবং কেন হামলা করেছিল জানতে চাইলে মুন্নি বলেন, 'গত ১০ বছর ধরে আমার বাবা এখানে পারিবারিকভাবে দুর্গা পূজা করে আসছিলেন। জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে আমার ভাই দীপক সুশীল যিনি বিদেশে ছিলেন, তিনি হাসিনাপাড়া এলাকায় একটি ছোট মন্দির করার জন্য প্রায় ৪ হাজার ইট এবং ১৫০ ফুট কঙ্কর এনেছিলেন।'

'এরপর থেকে আমার বাবা বিভিন্নভাবে হুমকি পাচ্ছিলেন,' বলেন মুন্নি।

এ সময় কাঁদতে কাঁদতে মা মৃণালিনী সুশীল বলেন, 'পাঁচ ছেলের ৮ নাতি-নাতিন নিয়ে আমি কার কাছে যাব।'

'আগামী সোমবার নিহত চম্পকের মেয়ের বয়স ১ মাস হবে,' কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন মা মৃণালিনী।

'আমার সন্তানরাতো কোনোদিন কারো ক্ষতি করেনি। কেন এভাবে আমার ৫ সন্তানকে মেরে ফেলা হলো। সেদিন আমি বাড়িতে থাকা ২ সন্তানকে ভয়ে খাটের নিচে লুকিয়ে রেখেছিলাম। মন্দির করতে চেয়েছে বলে তারা আমাদের বাড়িতে জানুয়ারির ২৯ তারিখ হামলা করেছিল। ভয়ে আমরা কোনো প্রতিবাদ করিনি,' বলছিলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'যারা হামলা করেছিল, তাদের আমরা চিনতে পারিনি। তবে, তারা বহিরাগত ছিল।'

২০১০ সাল থেকে তারা চকরিয়ার ডুলাহাজরা ইউনিয়নের মালুমঘাট এলাকার হাসিনাপাড়া গ্রামে বসবাস করছেন বলে জানান।

তিনি আরও জানান, এ গ্রামে ৩০-৩৫টি হিন্দু পরিবার বসবাস করেন।

মুন্নির স্বামী খগেশপ্রতি চন্দ্র খোকন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার শ্বশুর সুরেশ চন্দ্র ছিলেন চকরিয়া হাসপাতালের স্বাস্থ্য পরিদর্শক। তিনি মারা যাওয়ার পর গত মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে ধর্মীয় রীতি শেষ করে ৯ ভাইবোন একসঙ্গে বাড়ি ফিরছিলেন। সে সময় পিকআপের ধাক্কায় ঘটনাস্থলে ৪ ভাই নিহত হন।'

পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেদিন বিকেলে আরও এক ভাইয়ের মৃত্যু হয়।

গুরুতর আহত ২ ভাই ও ১ বোন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে রক্তিম সুশীল চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালের আইসিইউতে আছেন।

গুরুতর আহত হীরা সুশীল চিকিৎসা নিচ্ছেন চকরিয়ার মালুমঘাট খ্রিষ্টান মেমোরিয়াল হাসপাতালে।

মুন্নি বলেন, 'গত ৪ দিন মুখে কোনো খাবার যায়নি। মারা যাওয়া ভাইদের ছোট ছোট বাচ্চাগুলোর দিকে তাকাতে পারছি না। পুরো পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছি।'

Comments

The Daily Star  | English

Healthcare reform begins, service yet to improve

The health administration initiated a series of reforms to improve medical care but struggled to implement them, say health experts

9h ago