দুদক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিনকে নিয়ে যা ঘটছে

শরীফ উদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) শরীফ উদ্দিন প্রায় সাড়ে ৩ বছর দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। সে সময় এনআইডি সার্ভার ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি ভোটার করার অভিযোগে ২০২১ সালের জুনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) একজন পরিচালক, ৬ কর্মীসহ আরও ১০ জনের বিরুদ্ধে তিনি মামলা করেছিলেন। এ মামলার পরপর ১৬ জুন তাকে চট্টগ্রাম থেকে পটুয়াখালীতে বদলি করা হয়।

শরীফ তার মেয়াদকালে বিভিন্ন খাতে অনিয়মের খবর প্রকাশের জন্য আলোচিত হন। সে সময় তিনি ইসি কর্মকর্তা, কর্মচারী, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) ওয়ার্ড কাউন্সিলর, ইয়াবা চোরাকারবারি, রোহিঙ্গা, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ১ ডজনেরও বেশি মামলা করেন।

রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের জন্ম নিবন্ধন ও পাসপোর্ট দেওয়ার ঘটনায় এবং কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে করা মামলার বাদী তিনি।

কর্ণফুলীর দুর্নীতির মামলায় তিনি কেজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (প্রকৌশল) সারোয়ার হোসেন এবং অন্যান্যদের সঙ্গে সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির ছেলে মুজিবুর রহমানকে অভিযুক্ত করেন।

দুদকের উপসহকারী পরিচালক শরীফ কক্সবাজারের তালিকাভুক্ত ইয়াবা চোরাকারবারি হাজী সাইফুল করিমের বিরুদ্ধে মামলাও করেন। সাইফুল ২০১৯ সালের ৩১ মে 'বন্দুকযুদ্ধে' নিহত হন।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (সিএমসিএইচ) অনিয়মেরও তদন্ত করছেন তিনি। তদন্ত প্রতিবেদন এখন আদালতের পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য দুদকের সদর দপ্তরে আছে।

গত ৩০ জানুয়ারি প্রাণনাশের হুমকি পাওয়ার পর শরীফ উদ্দিন কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আইয়ুব খান চৌধুরীর বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের খুলশী থানায় সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেন।

জিডিতে শরীফ উদ্দিন অভিযোগ করেন, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আইয়ুব খান চৌধুরী ও অপর এক ব্যক্তি সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তার বাড়িতে এসে তাকে হুমকি দেন।

জিডির পর পুলিশ হুমকির ঘটনার তদন্ত করছে।

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা দুদকের সরকারি বাসভবনের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। সেখানে দেখা গেছে শরীফ ও অভিযুক্ত আইয়ুব দুজনেই স্বাভাবিকভাবে কথা বলছেন।'

ওসি আরও বলেন, 'আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমরা আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করব।'

বুধবার দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর সই করা এক অফিস আদেশে শরীফ উদ্দিনকে অপসারণ করা হয়। এতে বলা হয়, 'দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা, ২০০৮ - এর বিধি ৫৪ (২) তে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে পটুয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হলো।' এই আদেশ গতকাল বিকেল থেকেই কার্যকর হওয়ার কথা।

দুদকের উপসহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিনকে অপসারণের বিষয়ে জানতে দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত কার্যালয়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় ডেইলি স্টারের পক্ষ থেকে। তবে তারা কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি।

জানতে চাইলে দুদক সচিব মাহবুব হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কমিশনের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে শরীফ উদ্দীনকে অপসারণ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে প্রায় ৭-৮টি অভিযোগ আছে।'

'শরীফ উদ্দীনের বিরুদ্ধে জব্দ করা ৯৪ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে নিজের কাছে রাখার অভিযোগ আছে। এ নিয়ে হাইকোর্টও তাকে তিরস্কার করেছেন,' বলেন তিনি।

যোগাযোগ করা হলে শরীফ উদ্দীন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার বিরুদ্ধে অন্যায় করা হয়েছে। আমি কীভাবে প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি নষ্ট করলাম?'

'আমার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ উঠেছে, সেগুলোর তদন্ত চলছে। আমি জবাবও দিয়েছি। আশা করি তদন্ত প্রতিবেদন আমার পক্ষেই থাকবে,' যোগ করেন তিনি।

সরকারি কোষাগারে টাকা জমা না দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'জব্দ করা ৯৪ লাখ টাকা আমার কাছে রাখার বিষয়টি আমার পরিচালক জানতেন। চট্টগ্রাম থেকে  যাওয়ার সময় আমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সেটি বুঝিয়ে দিয়েছিলাম।'

এদিকে মো. শরীফ উদ্দিনকে অপসারণের প্রতিবাদে সজ বৃহস্পতিবার ঢাকায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন তার সহকর্মীরা।

Comments

The Daily Star  | English

Yunus places 7-point roadmap for Rohingya repatriation

'Time for action now,' he says at dialogue on Rohingya crisis in Cox’s Bazar

22m ago